একটি মেয়ের প্রেম কাহিনী
বরুণ মন্ডল

ঘুম ছিল তার চোখের মনি
সে ছিল সাজ পাগলী।
লজ্জা নামে অলংকার খানি
সেগুণ কোথায় তুই রাখলি?
পড়ার নেশা , আঁকার নেশা
নেশা ছিল তার পুতুল খেলা;
আর এক পাগলের খপ্পরে সে
নষ্ট হলো তার মেয়ে বেলা।
স্বপ্ন নিয়ে যত্ন করে সে
ছাড়লো সুখের বাপের বাড়ি,
বালিকা বেলার আবেগ দিয়ে
কিনেছে সংসার হাঁড়িকুড়ি।
স্বপ্ন সে তো স্বপ্ন রইল
মিলল না তার ভালোবাসা,
বলবে কাকে মনের কথা
গুমড়ে মরে বৃথা আশা।
কোল ভরে তার পুচকি মেয়ে
দুষ্টু ভরা চাহনি তার;
চোখের জলে বালিশ ভেজে
ছোট্ট মেয়েই রক্ষী তার।
সুখ সয়না কপালে সবার
এই ভেবে পায় সান্তনা,
ভালোবাসার ফুল নিয়ে যে
ভুলছে শতেক যন্ত্রণা।
একদিন এক দেবদূত যেন
বার্তা দিল মনের ঘরে;
ভালোবাসার পরশে দেবে
ভাসিয়ে দারুণ সুখ সাগরে।
মনের যত না বলা কথা
কুরে কুরে খায় প্রতিক্ষনে,
শুনবে সে কান পেতে সব
বাসবে ভালো মনে ও প্রাণে।
প্রশ্ন তার মনের মাঝে
পাপ পুণ্য ন্যায় অন্যায়,
থাকতে স্বামী— প্রথম প্রেম
দ্বিতীয় প্রেম আবার কি হয়?
এক পা আগায় দুরুদুরু বুক
দু পা যেন পিছিয়ে যায়।
সুখের খোঁজে প্রেমের ফাঁদে
মন যেন বাঁধা প’ড়ে, হায়।
অভিসারী হয় মেয়েকে নিয়ে
সুখ সাগরে ভাসবে বলে;
হৃদপিণ্ডটা লাফিয়ে ওঠে
উপরে যেন আসছে চলে!
পুরনো ছোঁয়া পুরনো চাওয়া
অকল্প তবু সে শিহরণ!
লম্বা সময় দ্রুত চলে যায়
শুধু মনে হয় ,অল্পক্ষণ।
অচেনা মানুষ আপন হয়ে যায়
মনে হয় সে প্রাণ ভোমরা।
ছাড়লে প্রাণ বেরিয়ে যাবে
মুখটা হয়ে যায় গোমরা।
মন হরেছে প্রাণপ্রিয় সে
রইবে বাকি শরীরী খেলা!
অভিসার বেলা বৃথা বয়ে যায়
মেটাও তৃষ্ণা এই বেলা।
পৃথিবীর এই তিক্ত অভিযান
মিঠে বড় ওগো মিঠে ভারি।
মিথ্যা দুঃখের হাতছানিতে
এ সুখ ছেড়ে যেতে পারি!
প্রেম নয় গাঁথা একই সূত্রে
সমাজের কলকাঠিতে;
মনের সাথে মনের মিলনে
প্রেম রচে মন দুটিতে।
বরুণ মণ্ডল
গ্রাম_তিলডাঙ্গা
থানা-রানাঘাট
জেলা-নদীয়া

বিরহগাঁথা
আতাউল হাকিম আরিফ

আমার হৃদয় আজ চাবুকের আঘাতের চেয়েও বেশি ক্ষতবিক্ষত!
আমি কাঁদছি অনর্গল, আমার আঙিনায় দেবদারু দোয়েল,শালিক ওরাও ভীষণ কাঁদছে
আমার ভেতরে একদা একটি বাঘ ছিলো সেটিও এখন মরে গেছে!
ক্রমশ মরে যাচ্ছে নীলকমল জোৎস্না,
সমুদ্রের তরঙ্গ,
শব্দ,
উপমা,
এমনকি পুষ্পদীপ খানাও,
এখন আর শিশির ভেজা উদ্যানে কোমল স্পর্শ খুঁজে পাইনা
মৃত্তিকা জুড়ে শুকনো খরখরে পদচিহ্ন,
জলের মগ্নতা সরে গেছে,
ধুয়ে মুছে গেছে কুমারীর পবিত্রতা!
সেখানে এখন ভেসে উঠে বিসদৃশ চিত্রকল্প!
আমার স্বপ্নগুলোও বধির হয়ে গেছে,
খসে পড়ছে আকাশ এবং নক্ষত্রপুঞ্জ,
যেখানটায় স্পর্শ করি তা হয়ে ওঠে দুঃখ,
নির্জন ঘরের ভেতর বিচ্ছেদের অনলে পুড়ছে একজন বিষন্ন মানুষ।

বেহায়া যাতনা
মোঃ আতাউল্লাহ আল মাহমুদ

পঁয়তাল্লিশ বছরের অভ্যাস আর বদঅভ্যাসের
অনেক কিছুই ছেড়েদিয়েছি————–!
যেমন মিথ্যে কথা, সর্বশেষ কবে মিথ্যে বলেছি তা,
একদম ভুলেই গিয়েছি ——————!
তবে, আজকে’যে বৌকে বললাম, বোনাস পাইনি,
অথচ হয়েগেছ বহুআগেই সাবাড় ————।
এগুলো মিথ্যেতো নয়’ই, সত্যই হবে কি করে —–?
তবে তা নিতান্ত দ্বিপাক্ষিক অর্থনৈতিক ব্যাপার।
মিথ্যে ছেড়েছি বহুকাল আগে,
আমারে ছাড়েনা টানাটানি
মনগড়া কথেক ফতোয়া সাজাইয়া
টানিতেছি সংসারের ঘানী।।
অনেক কিছুইতো ছেড়েদিয়েছি,
বহুু আগে ছেড়েছি ধুমপান।
আঙ্গুলের ফাঁকে উড়িছে’যে আজধোঁয়া,,
তা শুধুই ভাগ্যেরসাথে করে’অভিমান।।
এমন করিয়া কতকিছুইযে,
প্রতিদিন কতবার যে ধরি
যতবার রোজ ধরিয়াছি তারে
তারচেয়ে বেশীবার তারেছাড়ি
অনেক কিছুই আমিতো ছাড়িলাম
আমারে কি ছাড়ে কেহ?
ব্যাথার স্থানে ব্যাথাই থাকিবে
ছাড়িয়া যাইবে হয়ত’দেহ।
ইচ্ছে হইলো খুলিয়া ফেলিলাম,
এটা কি’গলার মালা??
কপালে যার লিখা আছে যেটুকু
সইতে হবেই সেটুক জ্বালা।।

শোনো হে বৃক্ষ শোনো হে ডাহুক
শামসুদ্দিন হারুন

ফলভারে নুয়ে পড়া বৃক্ষের কাছে জানতে চেয়েছি
কি করে এমন ফলবতী হলে হে বৃক্ষ তুমি ?
বৃক্ষ জানায়, নিখাঁদ প্রেমেই আমি হই ফলবতী
মৌমাছি দেয় ভালোবাসা, আহার যোগায় ভূমি !
ডেকে বলি, উদাসীন পাহাড় ওহে কি করে তুমি
দৃঢ়তায় হয়ে থাকো ঋজু, কি করে থাকো ?
: আমার আমিতেই বসবাস,আমাতেই থাকি ডুবে
পাহাড় কিংবা পর্বত যে নামেই আমায় ডাকো।
ডাহুকের কাছে প্রশ্ন ছিলো, কোথায় পেলে হে অবিনাশী
ভালোবাসা, কি করে মরণ ডেকে আনো ব্যাকুল প্রেমে ?
ডাহুক জানায়, বুকের ভেতরে একজনই শুধু থাকে
তাকেই ধ্যান জ্ঞান জানি, তাকেই রাখি হৃদপিণ্ড ফ্রেমে।
বৃক্ষ হে শোনো, শোনো হে পাহাড়, অনুঢ়া মৃত্তিকা, মৌমাছি
শোন হে ডাহুক জানবাজ প্রেমের পাখি ।
আমিও যে চাই অবিনাশী প্রেম, গ্রহণে ঢাকা চাঁদের আলো
আমারই থাকুক আমি যারে স্বপনে ডাকি !

তোমারই প্রতীক্ষায়
কৌশিক মন্ডল

একরাশ সরল প্রেম তোমার আঙ্গিনায় ছুঁয়ে দিয়েছি বারে বারে
প্রতিবারই তুমি মুখ ফিরিয়ে নিয়েছ
তাচ্ছিল্যের করাঘাতে।
নিদারুণ অপেক্ষায় হৃদয় হয়েছে ভারাক্রান্ত
নিগূঢ় অবজ্ঞায় বাক্যেরা আজ পথভ্রান্ত।
যে পটলচেরা নয়নের মোহে বিভোর হয়ে ছিলাম
যার সাহচর্যে আমার চিরকাঙ্খিত ভবিষ্যৎ
চোখের সামনে ফুটে ওঠে,
তার পেছনে আলেয়ার আলোয় অগনিত
লালসার ভূতেদের দীর্ঘশ্বাস জমা হয়ে আছে।
তাহলে কী আমি
অব্যয়কে শব্দরুপ দেওয়ার বৃথা প্রয়াস করছি!
যে দ্বান্দ্বিকতায় জীবন স্রোত বয়ে চলেছে
তা নিরসনের মৃদু আভাসও পাচ্ছি না।
সময় আমাকে প্রতিমুহূর্তে বিদ্ধ করছে,
আত্মিক দূরত্বের জন্য – বিষন্নতার ছাপ মুখাবয়বে স্পষ্ট থেকে স্পষ্টতর হয়ে ওঠে।
যদিও অনাকাঙ্ক্ষিত অবহেলার রুঢ় আঘাতে,
ও ঠোঁট উল্টানো ভৎসনার নির্মমতায়
আমার রাবীন্দ্রিক প্রেমের স্বপ্ন ভেঙে গিয়েছে,
তবুও আমি নজরুলের মতো বিদ্রোহী হবার চেষ্টা করিনি।
শুধু জেনে রাখো,
একসাগর আক্ষেপ জর্জরিত দীর্ঘশ্বাস নিয়েও
বারিবিন্দুর প্রত্যাশায় দীর্ঘ পিপাসিত চাতকের ন্যায়
আমিও সুদীর্ঘ সময় তোমার প্রতীক্ষায়
পথ চেয়ে কাটাতে পারি।

দৌড়
হামিদুল ইসলাম।

ছেড়ে যাচ্ছি গ্রাম
আপন বসত
গাছে গাছে পাখি
শিস দেয় না আজ
কথা বলে না
গানও গায় না ।।
উঠোনে ক’টা দোপাটি ফুলের টব
বৃষ্টি নেই কতোদিন
শুকিয়ে যাচ্ছে টব
গাছ। লতাপাতা
হাওয়ায় রুক্ষতা বরাবর ।।
বারবার পাক খাচ্ছে মন
অতল ভাবনায় ডুবে যাচ্ছে তরী
শিবের মাথায় জল ঢালছি প্রতিদিন
সিক্ত পাথর
বোবা
নড়াচড়া নেই এক মুহূর্ত ।।
সেই থেকে ধর্ম মানি না
আমি নাস্তিক
আমাকে উপহাস করে গ্রামবাসী
তসলির মতো আমাকে গালিগালাজ দেয়
প্রাণনাশের হুমকি দেয়
গ্রামছাড়ার ফতোয়া দেয় ।।
অবশেষে ওদের বিধান মেনে
গ্রাম ছাড়ছি
বসত ছাড়ছি
ছেড়ে যাচ্ছি নিজের ঘর ।।
আমার ঘাড়ে ঝোলা ব্যাগ
দুচোখে জল
সেই জলে ডুবে যাচ্ছে নদী
ডুবে যাচ্ছে ঈশ্বরীতলা
কেওড়াতলা
বসতবাড়ি
আমার হৃদয় ।।
সব মায়া ভুলে যাচ্ছি
আমার পায়ে রাস্তা
মাড়িয়ে যাচ্ছি শৈশব কৈশোর যৌবন
মাড়িয়ে যাচ্ছি ইতিহাস
সব ।।
মাঝে মাঝে জীবনানন্দ হয়ে যাচ্ছি
ধানসিঁড়ি ভেসে উঠছে
দুচোখের জলে
ডাহুক চরছে বালিহাস উড়ছে
জঙ্গলের ঘ্রাণ
লতাপাতার হাতছানি ।।
সায়রে ফুটে আছে পদ্ম
তুলতে যাই
কার কচি হাত বাধা দেয়
পেছনে ফিরে তাকাই
সোমা
বললাম, এখানে যে ?
একা থাকতে পারলাম না। চলে আসলাম
কোথায় যাবে ?
তোমার সঙ্গে
আমি নিঃস্ব
আমিও ।।
আমরা পায়ে পায়ে হাঁটছি
সোমার একটা হাত আমার হাতে
বললাম, সামলে চলো। পড়ে যাবে
পড়বো না ।।
সামনে কাশ বাগান
কাশফুলে ভরে উঠেছে পৃথিবী
পূজো আসছে
আশ্বিন মাস
পোয়াতি দিন
ভুলে গেছি সব
ভুলে যাচ্ছি সব ।।
দৌড় দৌড় দৌড়
সামনে রেল লাইন
পাথরের উপর লোহার পাত বিছানো
এই প্রথম রেল লাইন দেখছি
দুচোখ গিলছে গোগ্রাসে
গিলছে সারা জাহান
সোমা বললে, কখন ট্রেণ আসবে ?
জানি না
একটু দাঁড়াও ট্রেণ দেখে যাই
ট্রেণ এখন আসবে না
আসবে। দূরে ট্রেণ আসার শব্দ। দাঁড়াও ।।
আমাদের পেছনে গ্রামের লোক
পুরোহিত মোল্লা মাতব্বর
হুঙ্কার দিচ্ছে ওরা
একবুক ভয় ।।
দৌড় দৌড় দৌড়
ট্রেণ আসছে
আমরা দৌড়চ্ছি একটানা
ট্রেণ দাঁড়ালো একটা ফাঁকা জায়গায়
আমরা লাফিয়ে উঠলাম
কামরার সবাই তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে
হাসাহাসি করছে
সোমার আদুল গা
লজ্জা লজ্জা লজ্জা ।।
ট্রেণ দাঁড়ালো
আমরা নামলাম
এটা কোন জায়গা ?
লোক গিসগিস করছে
সবাই অপরিচিত ।।
আবার দৌড় দৌড় দৌড়
জীবন থেকে পালাচ্ছি আমরা
ঊর্দ্ধশ্বাসে ছুটছি
জীবন মানে দৌড় দৌড় দৌড় ।।
গ্রাঃ+পোঃ=কুমারগঞ্জ। জেঃ=দক্ষিণ দিনাজপুর। মোঃ+হোঃ=8637316460।

বিধির বিধান
ছন্দা পাল।

বৃষ্টি ভেজা নবমী তিথি
ধুয়ে যায় সিঁদুরে সিঁথি।
নববধূ ভীত সন্ত্রস্ত মলিন বদনে
ধীরে ধীরে ঘরে ফিরে আনমনে!
মাসেক হলো সে হয়েছে পরিণীতা
আজ কেন হলো সিঁথি বৃষ্টি -সিক্তা?
ধুয়ে গেল সিঁথির টকটকে সিঁদুর
বর তার রয়েছে আজ দূর বহুদূর ।
ভীরু বুকে আশঙ্কা,কি জানি কি হয়
হয়ত কুসংস্কার বৈ তো আর কিছু নয়!
শুধু শুধু মন কেন তবে কু-ডাক গায়–
প্রবাসী স্বামীর তরে বুক করে দুরুদুরু
নয়নের জলে ভেজে বুক, কুঞ্চিত ভুরু।
জগজ্জননীরে করজোড়ে করে শরণ
“মাগো,রক্ষা করো তারে, তোমার সন্তান!”
অন্তর্যামী হাসে অন্তরালে,সময় যে তার হয়েছে শেষ
কোনো উপায় নেই যে আর ,পরমায়ূ তার নিঃশেষ!