Albert Camus

প্রবন্ধ

নোবেল বিজয়ী আলবের কাম্যু

পঞ্চম_পর্ব

   কাম্যু “নব্য ভূমধ্যসাগরীয় সংস্কৃতির” স্বপক্ষে স্বর জোরালো করেন। এই শব্দবন্ধটিকে তিনি ব্যবহার করতেন আলজেরিয়ার মানুষের বহু-জাতিগত পরিচয়কে গ্রহণ করার দৃষ্টি নিয়ে, তিনি “ল্যাটিনি”র বিপক্ষে ছিলেন – একটি ফ্যাসিবাদী এবং সেমিটিক-বিরোধী ধারণা যেটি পাইড-নয়রদের (আলজেরিয়ায় বসবাসকারী ফরাসী অথবা ইউরোপীয়) মধ্যে জনপ্রিয় ছিল। কাম্যুর মতে, ভূমধ্যসাগরের আশেপাশে বসবাসকারী সাধারণ মানুষের মধ্যে উক্ত ধারণাটা হেলেনীয় মানবতাবাদের মধ্যে সংরক্ষিত রয়েছে।

 “নব্য ভূমধ্যসাগরীয় সংস্কৃতি”র ওপর তাঁর ১৯৩৮ এর বক্তব্য ছিল সেসময়ে তাঁর বক্তব্যগুলোর মধ্যে সবথেকে সু-সংবদ্ধ। কাম্যু আলজেরিয়দের পূর্ণ ফরাসী নাগরিকত্বের দানের জন্য ব্লুম-ভায়োলেট প্রস্তাবকেও সমর্থন করেন যে প্রস্তাবটি মৌলিক সমতাবাদের ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছিল। 

১৯৩৯ সালে কাবিলাই উচ্চভূমিতে বসবাসকারী মানুষের জীবনযাপনের ভয়ঙ্কর দুরবস্থাকে নিয়ে আলজের রিপাবলিকেইনে কয়েকটি মর্মভেদী নিবন্ধমালা রচনা করেন। তিনি জরুরী বিষয় হিসেবে অর্থনৈতিক, শিক্ষা এবং রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সংস্কার  আনার পক্ষপাতী ছিলেন।

ফরাসী অত্যাচারের বিরুদ্ধে আরবদের বিদ্রোহের পর ১৯৪৫-য়ে ঘটা সেটিফ ও গুয়েলমা হত্যাকাণ্ডের সময় গুটিকয়েক মূল ভূখণ্ডের সাংবাদিকদের মধ্যে তিনি উক্ত অঞ্চলটি দেখতে যান। সে জায়গার পরিস্থিতি নিয়ে তিনি কয়েকটি প্রতিবেদন লেখেন এবং আলজেরিয় জনগণের দাবীর প্রতি ছাড়ের জন্য এবং ফরাসী সংস্কারের জন্য তিনি তাঁর বক্তব্য পেশ করেন।

 ১৯৫৪ সালে আলজেরিয় যুদ্ধ শুরু হলে কাম্যু একটি নৈতিক দ্বন্দ্বে পড়েন। তিনি নিজেও পাইড-নয়রস হিসেবে পরিচিত ছিলেন এবং তাঁর নিজের মা-বাবারও একই পরিচয় ছিল। তাই তিনি উক্ত বিদ্রোহের বিরুদ্ধে ফরাসী সরকারের কার্যকলাপকে সমর্থন করেন। তিনি এটাই প্রতিপন্ন করতে চেয়েছিলেন, আলজেরিয়ার বিদ্রোহ “নব্য আরব সাম্রাজ্যবাদের”-ই অখণ্ড রূপ, এবং এটি “ইউরোপকে ঘিরে ফেলবার জন্য” ও “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বিচ্ছিন্ন করবার জন্য” রাশিয়ার তৈরি করা “পাশ্চাত্য-বিরোধী” আক্রমণ। যদিও তিনি বৃহত্তর আলজেরীয় স্বয়ংশাসন অথবা যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর পক্ষেই সওয়াল করেছেন, কিন্তু তিনি কখনোই পূর্ণ স্বাধীনতার জন্য বলেননি। তিনি মনে করতেন পাইড-নয়রস্‌ এবং আরবরা একই সাথে বাস করতে পারে। যুদ্ধ চলাকালীন, তিনি একটি অসামরিক শান্তিচুক্তির জন্য বলেছিলেন যাতে সাধারণ নাগরিকরা অব্যাহতি পায়। 

কিন্তু দুপক্ষই তাকে নস্যাৎ করে; কারণ তারা একে একটা বোকামি বলেই মনে করত। পর্দার ওপারে, মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত আলজেরিয়দের জন্য তিনি কাজ শুরু করলেন। তাঁর কর্মকাণ্ড বামপন্থীদের মধ্যে সমূহ সমালোচনার ঝড় বইয়ে দেয়, কারণ তাদের কাছে ঔপনিবেশিকতা মোটেই গ্রহণীয় ছিল না। তাদের চোখে, কাম্যু আর শোষিতদের রক্ষা কর্তা রইলেন না।

       কাম্যু একবার বলেছিলেন, আলজেরিয়ার সমস্যা “তাঁর ক্ষতি করেছে ঠিক ততটাই যতটা অন্যান্যরা তাদের ফুসফুসের বেদনা অনুভব করতে পারে।”
       তিনি পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্তার এবং হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে বোমা-বিস্ফোরণের চূড়ান্ত সমালোচক ছিলেন। ১৯৫০এর দশকে তিনি মানব অধিকারের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করেন। ১৯৫২ সালে তিনি ইউনেস্কোর কাজ থেকে পদত্যাগ করেন। কারণ, সেসময় জেনারেল ফ্রান্সিস্কো ফ্রাঙ্কোর নেতৃত্বে থাকা স্পেনকে জাতিপুঞ্জের সদস্য করা হয়।

 কাম্যু শান্তিবাদী ছিলেন এবং সমগ্র পৃথিবীর সর্বত্র তিনি মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। তিনি ১৯৫৭ সালে লেখক, বুদ্ধিজীবী এবং লীগ এগেই্নষ্ট ক্যাপিটাল পানিশমেন্টের প্রতিষ্ঠাতা আর্থার কোয়েস্টলারের সাথে একটি প্রবন্ধ লেখেন যার নাম ছিল রেফ্লেক্সন্স্‌ সুর লা পেইন ক্যাপিটেল; বইটির প্রকাশক ছিলেন ক্যালমান লেভি।

      যদিও কাম্যুর সাথে সবচেয়ে বেশি সংযোগ রয়েছে অলীকতার, কিন্তু তিনি একজন অস্তিত্ববাদী হিসেবেও যথারীতি পরিচিত ছিলেন, যদিও তিনি নানা সময়েই এই অভিধাটি প্রত্যাখ্যান করেছেন।

      কাম্যু নিজে বলেছিলেন তাঁর দার্শনিকতার উৎস প্রাচীন গ্রীক দার্শনিক নিৎশে এবং সতেরো শতকের নীতিবাদীদের দর্শন, যেখানে অস্তিত্ববাদ শুরু হচ্ছে উনিশ এবং বিশ শতকের শুরুর দিকে কিয়ার্কেগার্ড, কার্ল জ্যাস্পারস এবং হিডেগারের মত দার্শনিকদের হাত ধরে। তিনি এও বলেছিলেন, 'মিথ অফ সিসিফাস' নামে তাঁর লেখাটি অস্তিত্ববাদের নানা দিক সম্পর্কে একটি সমালোচনা। কাম্যু অস্তিত্ববাদকে দর্শন অভিধা দিতে নারাজ, কিন্তু তাঁর সমালোচনা মূলত কেন্দ্রীভূত রয়েছে সার্ত্রেয় অস্তিত্ববাদ এবং ধর্মীয় অস্তিত্ববাদের ক্ষুদ্রতর ব্যাপ্তিতে।

 তিনি মনে করতেন, মার্ক্স এবং সার্ত্রে ইতিহাসকে যেভাবে গুরুত্ব দিয়েছেন তা মানব মুক্তির ক্ষেত্রে তাঁর বিশ্বাসের সঙ্গে সাযুজ্য রাখতে পারে না। ডেভিড শেরম্যান এবং অন্যান্যরা মনে করেন, সার্ত্রে এবং কাম্যুর মধ্যেকার বিরোধের পেছনে কাম্যুর অস্তিত্ববাদকে প্রত্যাখ্যান করারও ভূমিকা রয়েছে।

 ডেভিড সিম্পসন আরো বলেন, যে তাঁর মানবতাবোধ এবং মানুষের প্রকৃতি সম্বন্ধে তাঁর বিশ্বাস তাঁকে অস্তিত্ববাদী মতবাদ থেকে আলাদা করে দেয়, যে অস্তিত্ববাদী মতবাদ অনুযায়ী সত্ত্বার আগে অস্তিত্ব রয়েছে।

       অন্যদিকে, কাম্যু অস্তিত্ববাদী প্রশ্নগুলোকে কেন্দ্র করে তাঁর বেশিরভাগ দর্শনকেই গড়ে তুলেছেন। জীবনের অলীকতা, এর অবশ্যম্ভাবী সমাপ্তি (মৃত্যু) তাঁর বিভিন্ন কাজে লক্ষ্যণীয় হয়ে উঠেছে। তাঁর বিশ্বাস এটাই ছিল যে অলীকতাকেই একজন মানুষ গ্রহণ করতে পারে যে অলীকতার অর্থ  – জীবন অর্থশূন্য, অথবা যদি এর অর্থ থাকে তাহলেও মানুষের ক্ষমতা নেই তার অর্থ বুঝবে।

 তাঁর খ্রিস্টান বিরোধীতা, ব্যষ্টির নৈতিক মুক্তির জন্য তাঁর অঙ্গীকার এবং দায়িত্ব – কেবলমাত্র এই ক’টি বিষয়েই তাঁর সাথে অন্যান্য অস্তিত্ববাদী লেখকদের মিল পাওয়া যায়। আরও গুরুত্বপূর্ণ, কাম্যু অস্তিত্ববাদের অন্যতম একটা মৌলিক প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা করেছিলেন – 'আত্মহত্যার সমস্যা'।

 তিনি লিখেছিলেন, “এখানে একটাই সত্যিকারের গুরুতর দার্শনিক প্রশ্ন রয়েছে এবং তা হল 'আত্মহত্যা'।” কাম্যু আত্মহত্যার প্রশ্নের উত্থানকে জীবনের অলীকতার স্বাভাবিক সমাধান হিসেবে দেখেছেন।



    অনেক অস্তিত্ববাদী লেখকরাই অলীকতাকে তাঁদের রচনায় উল্লেখ করেছেন, এটা আসলে কী এবং কেন এটা গুরুত্বপূর্ণ - এই বিষয়ে তাঁরা প্রত্যেকে তাঁদের নিজেদের ব্যাখ্যা দিয়েছেন। কিয়ার্কেগার্ড ব্যাখ্যা করেন যে ধর্মীয় সত্যের অলীকতা আমাদের ঈশ্বরের কাছে যুক্তিসম্মতভাবে পৌঁছোতে বাধা দেয়। সার্ত্রে একক ব্যক্তির অভিজ্ঞতার অলীকতার কথা বলেছিলেন। 

অলীকতা সম্বন্ধে কাম্যুর চিন্তাভাবনা তাঁর প্রথম বইয়ের চক্র এবং সাহিত্যিক প্রবন্ধ থেকেই শুরু হয় - দি মিথ অফ সিসিফাস, (লে মিথে ডি সিসিফি), এই বিষয়ের ওপর তাঁর একটা বড়ো কাজ। ১৯৪২ সালে তিনি 'ল’এন্ট্রেঞ্জার' নামে এক গল্প প্রকাশ করেন যাতে একজন মানুষের অলীক জীবন সম্বন্ধে দেখানো হয়েছিল। তিনি রোম সম্রাট ক্যালিগুলাকে নিয়েও নাটক রচনা করেন এবং এখানেও তিনি অলীক যুক্তি অবলম্বন করেছিলেন; নাটকটি ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত মঞ্চস্থ হয়নি। তাঁর প্রথম পর্বের চিন্তাভাবনা তাঁর প্রথম প্রবন্ধ সংকলন, ল’এনভার্স এট ল’এন্ড্রয়েট (বিটোয়েক্সট অ্যান্ড বিট্যুইন) নামে ১৯৩৭ সালে প্রকাশিত হয়। অলীক বিষয়বস্তুগুলো তাঁর দ্বিতীয় পর্বের প্রবন্ধ সংকলন, নোসেস (ন্যুপশিয়ালস্‌) (১৯৩৮) এবং বিটোয়েক্সট অ্যান্ড বিট্যুইন নামে আরো পরিশীলিত হয়ে প্রকাশিত হয়। এইসকল প্রবন্ধগুলোতে, কাম্যু অলীকতা নিয়ে তাঁর অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেছিলেন। অলীক ধারণার বিভিন্ন দিক দি প্লেগে পাওয়া যায়।

       কাম্যু সার্ত্রের অলীকতার সংজ্ঞা অনুসরণ করেছেনঃ “অলীক হল সেটাই যা অর্থহীন। এইভাবে মানুষের অস্তিত্বটাই আসলে অর্থহীন, কারণ তার আকস্মিকতার পেছনে কোন বাহ্যিক যুক্তি নেই।” অলীকতার উদ্ভব হয় তখনই যখন নির্বোধ দুনিয়ায় বাসকারী মানুষ বুঝতে পারে যে মানবিক মূল্যবোধগুলোর প্রকৃতপক্ষে কোন দৃঢ় ভিত্তি নেই; অথবা কাম্যু যেমনটা নিজেই ব্যাখ্যা করেছেন যে অলীকতা হল “মানুষের প্রয়োজন এবং বিশ্বের অযৌক্তিক নীরবতার মধ্যেকার সংঘাতের” ফল। যদিও কাম্যুর মতে অলীকতা একেবারেই অপরিত্যাজ্য, কিন্তু তিনি কখনোই নৈরাষ্ট্রের দিকে ঝোঁকেননি। কিন্তু অলীকতার উপলব্ধির ফলে তাঁর প্রশ্নঃ কেন একজন তবে বেঁচে থাকে? মানবিক মূল্যবোধ এবং স্বাধীনতা পরিত্যাগের কারণ হিসেবে আত্মহত্যা বেছে নেওয়াকে কাম্যু নাকচ করেছেন। বরং তিনি বলেছেন আমরা অলীকতাকে জীবনের অঙ্গ হিসেবে গ্রহণ করি এবং এর সাথেই বেঁচে থাকতে চাই।

      ১৯৪৩ সালের জুলাই থেকে ১৯৪৪ সালের জুলাই পর্যন্ত একজন অনামী জার্মান বন্ধুকে লেখা চারটে চিঠির সংকলন থেকে অলীকতার প্রতি কাম্যুর পরিবর্তন বোঝা যায়। প্রথমটি ১৯৪৩ সালে রেভিউ লিবর হিসেবে প্রকাশ পায়, দ্বিতীয়টির নাম ছিল কাহিয়ারস ডি লিবারেশন (১৯৪৪) এবং তৃতীয়টি লিবার্টেস সংবাদপত্রে ১৯৪৫ সালে প্রকাশিত হয়। চারটি চিঠি লেটারস এ আন অ্যামি অ্যালেমান্ড (লেটারস টু আ জার্মান ফ্রেন্ড) নামে ১৯৪৫ সালে প্রকাশিত হয় এবং রেজিস্ট্যান্স, রেবেলিয়ন এবং ডেথ মানে সংকলনে স্থান পায়।

 কাম্যু নিজেকে “অলীকতার দার্শনিক” হিসেবে অ্যাখ্যায়িত করায় অনুশোচনা করেছিলেন। লে মিথ ডে সিসিফি প্রকাশ করার কিছুদিন পরেই তিনি অলীকতার প্রতি কম আগ্রহ দেখাতে থাকেন। তাঁর ধারণাগুলোকে পার্থক্য করতে পণ্ডিতরা “কাম্যুর অলীকতা” বলতে অলীকতার বৈপরীত্য কথাটির উল্লেখ করেন।


    যে কোন ধরণের অত্যাচার, অবিচার অথবা মানবিক পরিস্থিতির যেকোন অসম্মানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘটলে সেই বিদ্রোহের স্বপক্ষে স্পষ্ট ভাষায় বলবার জন্য কাম্যু সুপরিচিত ছিলেন। যদিও বিদ্রোহের সীমা নির্ধারণের ব্যাপারে তিনি যথেষ্ট সচেতন ছিলেন। ল’হোম্মে রিভোল্টি (দি রেবেল) বইটিতে এই বিষয়ে তাঁর চিন্তাভাবনাগুলোর বিশদ পরিচয় পাওয়া যায়।

 সেখানে তিনি অলীকতার ওপর রচনা নির্মাণ করেছেন (দি মিথ অফ সিসিফাস) কিন্তু আরো অনেকদূর এগিয়েছেন। সূচনাতেই তিনি বিদ্রোহের আধ্যাত্মবিদ্যা নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা করেছেন এবং এই সিদ্ধান্তে এসেছেন যে “আমি বিদ্রোহ করি, কারণ আমাদের অস্তিত্ব আছে” যার দ্বারা তিনি সাধারণ মানব অবস্থার স্বীকৃতিকে বোঝাতে চেয়েছেন। কাম্যু বিপ্লব এবং বিদ্রোহের মধ্যে একটা পার্থক্যের রেখা টেনেছেন এবং লক্ষ্য করেছেন যে ইতিহাস আমাদের এটাই দেখিয়েছে বিদ্রোহীদের দ্বারা সংঘটিত বিপ্লব চিরকালই একটা অত্যাচারী রাজত্বের জন্ম দিয়েছে, তাই তিনি বিপ্লবের সাথে নীতিকে যুক্ত করার গুরুত্ব দিয়েছেন। কাম্যু একটা জটিল প্রশ্নের উত্থাপন করেছেন - একটা নীরব বিশ্বে মানুষের পক্ষে কি নৈতিক পথে এবং অর্থপূর্ণভাবে কাজ করা সম্ভব? তাঁর মতে এর উত্তর হল হ্যাঁ, কারণ অলীকতার অভিজ্ঞতা এবং এর সম্বন্ধে মানুষের সচেতনতার ফলে নীতিবোধ তৈরি হয় এবং তা আমাদের কাজের সীমারেখা টেনে দেয়। কাম্যু বিদ্রোহের আধুনিক রূপকে দুটো ভাগে ভাগ করেছেন। প্রথমটি হল একটা আধ্যাত্মবিজ্ঞানমূলক বিদ্রোহ যা হল - “এমন একটা আন্দোলন যার দ্বারা মানুষ তাঁর নিজের অবস্থা এবং সমগ্র সৃষ্টির বিরুদ্ধেই প্রতিবাদ করতে থাকে।”
আর দ্বিতীয় রূপটি হল ঐতিহাসিক বিদ্রোহ যে বিদ্রোহের দ্বারা আধ্যাত্মমূলক বিদ্রোহের বিমূর্ত শক্তিকে বাস্তবায়িত করার চেষ্টা করা হয় এবং এর মাধ্যমে বিশ্বকে পরিবর্তন করা হয়। এক্ষেত্রে, বিদ্রোহী অবশ্যই সমগ্র বিশ্বের পাপ এবং প্রতিটা বিদ্রোহের মধ্যে ঘটে চলা জটিল পাপের মধ্যে একটা সামঞ্জস্য বজায় রাখে এবং কোন অবিচারমূলক যন্ত্রণার সৃষ্টি করে না।

     কাম্যুর উপন্যাস এবং দার্শনিক প্রবন্ধগুলো এখনও যথেষ্ট প্রভাব বজায় রেখেছে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে। কাম্যুর মৃত্যুর পরে, তাঁর প্রতি আগ্রহ থেকে জন্ম নেয় (এবং হ্রাস পেতে থাকে) নব্য বাম। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর কমিউনিজম সম্পর্কে তাঁর বলে যাওয়া বিকল্প পথের প্রতি আগ্রহ নতুন করে বাড়তে শুরু করে। মানবতাবাদ সম্বন্ধে তাঁর সমালোচনা এবং রাজনৈতিক সহনশীলতা, মত বিনিময় এবং অসামরিক অধিকারের প্রতি তাঁর সমর্থনের জন্য তাঁকে আজও স্মরণ করা হয়।
        যদিও কাম্যুর সঙ্গে সোভিয়েত-বিরোধী কমিউনিজমের যোগ করা হয়, যেখান থেকে ট্রেড-ইউনিয়নপন্থী নৈরাষ্ট্রবাদের প্রসঙ্গও এসে পড়ে, কিছু নব্য-উদারবাদীরা তাঁকে তাঁদের রাজনীতির সাথে যুক্ত করেন। যেমন, ফ্রান্সের রাষ্ট্রপতি নিকোলাস সারকোজি তাঁর মৃতাবশেষকে প্যান্থেয়নে সরিয়ে আনবার কথা বলেছিলেন যার ফলে অনেক বামপন্থীরাই রুষ্ট হন।

(সমাপ্ত)

চতুর্থপর্বেরলিঙ্ক

https://www.facebook.com/groups/sahityapatrika/permalink/1107788523211721/

[* তথ্যসূত্র-অন্তর্জাল]

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *