Akash Shil

আকাশ চন্দ্র শীল

“অর্ঘ্য বিরোচন”


আকাশ চন্দ্র শীল

এইতো সেদিন!
নির্ঘুম রাত্রি কাটিয়ে শিস দেওয়া দোয়েলের আগে উঠে লক্ষ্মীর অর্ঘ্য বিরোচনের জন্য শিউলি,জবা,সন্ধ্যামালতী কুড়ানোর এক মহা প্রতিযোগিতা ছিলো।
ঘরে বিদ্যুৎ ছিলো না। একটা হারিকেনের নিভু-নিভু আলোতে শুধু ঘরের চালার তক্তপোষের দিকে তাকাতাম,একটু আলো হয়েছে কি না দেখার জন্য। সাহস হয়নি একটুখানি দরজা খুলে বাইরেটা দেখে আসার। এক নাম না জানা জুজুর ভয় ! মা ঘুমোচ্ছে। ডেকে তোলার সাহসটুকুও হচ্ছিলো না। হুট করে দু’একটা শব্দ শুনতে পেয়ে একছুটে দৌড়ে বেড়িয়ে গিয়ে দেখি আমার শিউলি তলায় ভাগ বসিয়ে দিয়েছে একজন। কিন্তু,আমি সহজে হেরে যাওয়ার লোক নই কিনা!

সমস্ত ক্ষিপ্রতাকে কাজে লাগিয়ে আমার ডালিখানা পূর্ণ্য করে দৌড় দিতাম জবা তুলতে। কিন্তু, ও মা! গতদিন গুনে রাখা ফুলের কুড়ির চাইতে ফুল কম। সে যাকগে-তা নিয়ে মাথা ব্যাথা নেই। হলো না হয় একটু কম।আমার তাড়া আছে। পদ্ম আনতে বিলে যেতে হবে। কিন্তু,একা গেলে যদি ঐ গল্পের মতো আমার মাথা নিচ দিকে দিয়ে পা দুটো উপরের দিকে করে কাঁদায় দাবিয়ে দেয় ঐ চোখ দিয়ে রক্তা বের হওয়া ভুতটা,তাহলে তো স্কুলে যেতে পারবো না।কি মুশকিল! বন্ধুর বাসায় গেলাম, আলো তখনো স্পষ্ট হয়নি। কেমন একটা নিস্তব্ধতা। সবাই ঘুমে বিভোর।


সাইকেল নিয়ে বের হয়ে গেলাম একাই। পদ্ম বিলও ফাঁকা। সব নিয়ে গেছে দাস পাড়ার লোক। দুটো আধফোটা পদ্ম নিয়ে রাম- রাম করতে করতে একদম বাড়িতে। এখনো আলপনা হয়নি,পূজা হয়নি। মা আলপনা দিতে দিতে গুন গুন করতেছিলো —–
“প্রভাত সময়কালে, শচীর আঙ্গিনার মাঝে,কার গৌড় নাচিয়া বেড়ায় রে।”
লক্ষ্মীর আলপনায় আবার ধানের ছড়া ও লক্ষ্মীর পদচিহ্ন আকঁতে হয়। আমি ও একটু চেষ্টা করলাম মায়ের থেকে চালের বাটা নিয়ে। নিজেকে তখন ছোটোখাটো লিওনার্দো দ্যা ভিঞ্চি মনে হচ্ছিলো। কিন্তু,তারপর ও মা কেনো জানি কানে ধরে দড়াম করে এক ঘা বসিয়ে দিলো।বুঝতে না পেরে ফ্যালফ্যাল করে মায়ের মুখ চেয়েছিলাম। কিছুক্ষণ পর বোধগম্য হলো যে লক্ষী পূজায় বাঘ তো এলাও না । বাঘ না,বাঘের কত প্রজন্মের পূর্ব পুরুষ এঁকেছিলাম তা স্বয়ং লিওনার্দো দ্যা ভিঞ্চির ও ঠাওর করতে ঈষৎ কষ্ট ই হবে।


নারকেলেরে জল খেতে গিয়ে আবার এক ঘা পড়লো পিঠে । নারকেলের জলে নাকি ঠান্ডা লাগে। পূজা শুরু হওয়ার আগে সবার ঘরে উঁকি দিয়ে আসলাম। যাক,আমার চাইতে কেউ বেশি ফুল কুড়াতে পারে নাই। মা ভোগে নিবেদনের জন্য ফল কাটার সময় একটা চাওয়ার পর সুন্দর করে বলে দিল-
“এখন একদম নয়। পূজোর পরে খাবে।”


অঞ্জলি শেষে দরজা বন্ধ করে দেওয়ার পর উঁকি দিয়ে খেয়াল করছিলাম আর ঠাহর করতে পারছিলাম যে,ঐ সন্দেশ গুলো আমার দিকে তাকিয়ে আমায় ডাকতেছিলো। একটু পর পাশের বাড়ি থেকে প্রসাদ চলে এলো। থালা নিয়ে বসে পড়লাম। এক মুহুর্তে থালা ভরে গেলো।লুচি, নাড়ু,মুড়ি,আপেল,কমলা,আনারস, আখ,নারকেল আর ও হাজারোটা ফল। কিন্তু, মনটা শুধু ঐ সন্দেশের দিকেই পড়ে রইলো।

আকাশ চন্দ্র শীল
শিক্ষার্থীঃ ইংরেজি ভাষা বিভাগ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

https://bangla-sahitya.com/post/

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *