Afnan Sheela

।।আত্মজয়।।
আফনান শীলা

ঝড়ো হাওয়ায় অনেকটা উড়তে উড়তে বাসায় এসে ঢুকে বিন্দু।
ও চেয়েছিল অফিসে আজ অনেকটা সময় থাকবে,বেশ কিছু কাজ আগাম গুছিয়ে রাখবে। কারণ
কিছুদিনের একটা ব্রেক নেয়ার ইচ্ছাটা খুবই মনে ঘুরছে কদিন ধরে।

ঝড় বৃষ্টি মুহুর্তে মনোযোগ উড়িয়ে নিয়ে গেলো।আজ তাই ওর পূর্ণ গৃহ যাপন।কোথাও
যেতে ইচ্ছা করছে না।যদি ও একটা বুক শপ ক্যাফে তে মা দিবসের একটা অনুষ্ঠানে
যাওয়ার কথা ছিল। বিন্দু ভেবে নিল, আজ সবই অন্যরকম হবে।

সন্ধ্যে হয়ে গেছে অনেকক্ষণ। বিছানায় গড়াগড়ি ছেড়ে উঠে বারান্দায় দাঁড়ায়
বিন্দু। আম গাছটার আমগুলো হলুদ রঙ ধরতে শুরু করেছে।প্রাণ ভরে হাল্কা বাতাস
টেনে নিয়ে নিজেকে ও হাল্কা করতে চায় ও।

শহরের শেষ প্রান্তে এই বাড়ি টা। একটু হাটলেই নদীর পাড়ে চলে যাওয়া যায়। যদিও
আগ্রাসী মানুষদের কল্যানে নদীর পানি কালো ঘোলা।কাছাকাছি এলেই দেখা যায় নদী
দখলের কী আয়োজন! হোক তার জল ঘোলা, তবু ও নদী তো!বিন্দু তাই কখনো কখনো এই
দুখিনী নদীর পাড়েই গিয়ে দাঁড়ায়।

মজিদের সাথে বিন্দু নদীটার মতোই ছিল।নীরবে
নি:শব্দে শুধু নিজেকে নিবেদন আর নিত্য লাঞ্ছনার পেয়ালা পান!

বহুদিন ধরেই ও সহ্য করে আসছে মজিদের আগ্রাসন। কিন্তু ইদানিং কালে মজিদের
দূর্ব্যবহার সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছিল।নিজের ঘরে নিজেই পরবাসী। কত আর এ জীবন মেনে
নেয়া যায়!

বহুদিনের ভাবনার ফসল,-চূড়ান্ত সিদ্ধান্তটা নিয়েই ফেলে বিন্দু।মজিদের বাসা
থেকে বেরিয়ে আসে।সহসাই বাইরের বাতাস তার কাছে অনেক হালকা লাগতে শুরু করে।

জেনি আপার এই নির্জন বাড়িতে উঠে এসে বিন্দু নিজেকে নতুনভাবে আবিষ্কার করে।
বুঝতে পারছে তার নিজের অন্তর্শক্তি।ভাবতে পারছে তার মতো অন্য মেয়েদের নিয়ে।
তীব্র একটা ইচ্ছা কাজ করছে, আত্মভোলা মেয়েগুলোর ভেতরের আগুন কে জাগিয়ে তুলতে।

বিন্দু জেনে গিয়েছে, তার আর ঘরে ফেরা হবে না।বরং বিশ্ব সংসারে লাখো মানুষের
অনুপ্রেরণা ই হতে চায় সে।

চলবে–

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *