Abhisek Saha

# অণুগল্প — শাঁখের করাত
# গল্পকার — অভিষেক সাহা

” বাবা, তাড়াতাড়ি এ ঘরে এসো, একটা মানে বুঝতে পারছি না !” সুদিনকে ঘরে ঢুকতে দেখেই চিৎকার করে বলল ওর তেরো বছরের ছেলে রনি।
সুদিন সবে বাজার সেরে ফিরেছে। আজ রোববার । বাজারের পরিমাণ একটু বেশিই। টুকিটাকি অনেক কিছু আনার ছিল। তার মাঝেই নামল হঠাৎ ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি। ছাতা সাথেই ছিল। সকাল থেকেই আকাশের মুখ ভার। তাই ওটা নিতে ভুল করেনি। এক হাতে ছাতা অপর হাতে বাজারের ব্যাগ নিয়ে বাজার সেরে ফেরা যে কী যুদ্ধ, যে করে শুধু সেই জানে। তবে ফিরেও শান্তি নেই।
” পোস্ত এনেছ। বের হবার সময় বারবার বললাম, তাও ভুল করলে।” সুদিন ঘরে ঢুকতেই গলা তুলে বলল রমলা, সুদিনের বৌ।
একদিকে ছেলে, অপরদিকে বৌ। সুদিন কোন দিকে যায় !
শেষমেষ সুদিন চিৎকার করে ছেলেকে বলল ” একটু অপেক্ষা কর ,আসছি ।”
তারপর নরম গলায় বৌকে বলল ” বোঝোনা কেন ? এত বাজার, তার মাঝে বৃষ্টি নামল , মনে ছিল না !”
” তা, মনে থাকবে কেন? তুমি যে মনে করে বাজার থেকে নিজের বাড়ি চিনে আসতে পেরেছ, অপরূপা বৌদির বাড়ি চলে যাওনি, এ আমার চোদ্দগুষ্টির ভাগ্য!” রাগে গজগজ করতে করতে রমলা বলল।
” কী যা তা বলছ ! ছেলে বড় হচ্ছে, সব শুনতে পাবে ! ঠিক আছে আমি এক্ষুনি পোস্ত নিয়ে আসছি। ” সুদিন বৌকে শান্ত করার চেষ্টা করল।
” সে তো বটেই। তুমি তো বাইরে থাকতে পারলেই খুশি। ঘরে তো মন টেকে না। পোস্ত আনার নাম করে যাবে, তারপর চারটে বন্ধু জুটিয়ে আধঘন্টা আড্ডা দিয়ে বাড়ি আসবে!” রমলা একটুও শান্ত না হয়ে উত্তর দিল।
” এইজন্য আমি বাজারে যাওয়ার সময় পইপই করে বললাম মোবাইলটা সঙ্গে রাখি। তোমার যা মনে পড়বে ফোন করে বলে দিলেই ল্যাঠা চুকে যেত। তুমি নিতে দিলে না। বৃষ্টির দোহাই দিয়ে রেখে দিলে!” কিছুটা বিরক্ত হয়ে বলল সুদিন।
” তুমি তো একথাই বলবে , যত দোষ রমলা ঘোষ। মনে নেই আগের মোবাইলটা জল লেগে নষ্ট হয়ে গেছিল। আমি তোমার ভালোর জন্যই বলেছিলাম, এখন আমিই দোষী ! তুমি তো বলতে পারতে, চিন্তা কোরো না রমলা , আমি ভিজে গেলেও মোবাইলের কিছু হবে না। সে ক্ষমতা তো নেই ! ” রমলা হঠাৎই অভিমানী হয়ে উঠল।
পাশের ঘর থেকে রনির এর মাঝেই দু’বার বাবাকে ডাকা হয়ে গেছে। সুদিন বুঝল এ মুহূর্তে রমলাকে বোঝানো শিবের অসাধ্য। সুদিন ছেলের ঘরে গেল।
” কী সমস্যা বল ?” রনির কাছে জানতে চাইল সুদিন।
” বাবা, শাঁখের করাত মানে কী ?” রনি প্রশ্ন করল।
” যে করাত এগোলেও কাটে পিছলেও কাটে , বুঝলি।” সুদিন উত্তর দিল।
” কিচ্ছু বুঝতে পারলাম না। তুমি এমন করাত দেখছ ?” রনি জানতে চাইল।
” হ্যাঁ !” সংক্ষিপ্ত উত্তর দিল সুদিন।
” আমাকে দেখাও !” রনি উৎসাহ নিয়ে বলল।
খোলা দরজা দিয়ে রমলা কোথায় আছে দেখে নিল সুদিন, তারপর মজা করে বলল ” তোর মা !”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *