Abdur Rahman

সুন্দরের বউ
আব্দুর রহমান

ভোরের আলো সুগন্ধির মতো ছড়িয়ে পড়া মুহুর্তে জানা গেল নীতার মা পলা ঘরে নেই । কথাটা বেলা বাড়ার সঙ্গে জন শ্রুতিতে জনরবে পরিণত হল । কেউ কেউ বলল, জানতাম এটা হবে । এই মেয়ে ঘর করতে পারবে না। পাড়ার সখির ওই বাড়িতে যাওয়া আসা ছিল। সে বলল, পলা ওর স্বামী ছিলনা।

পাড়ায় কে কী বলবে তাই সে কদিনের জন্য সংসার পাতা। সখির এলাকায় সুনাম আছে। রাতের হাসনুহানার মতো সুগন্ধ তার শরীর থেকে পাওয়া যায়। আসলে সে হাসনুহানা এসেন্স ব্যবহার করে। এই পরিপাটি মেয়েটির কথায় রয়েছে শুকশারী গুণ। স্বামী ছিল না শুনে পরকীয়া এসেন্স পেয়ে সখিকে সবাই ঘিরে ধরে। কী ব্যাপার? কী ব্যাপার ? বলতো খুলে,শুনি ?

পলা বলে সবাই জানে। তার কোল আলো করে ফুটফুটে একটি সন্তান এসেছিল । এ পাড়াতে পলা জন্ম দিয়ে ছিল। বছর দু-এক হল পলার শিশু কন্যার পরিচয় আর প্রিয় হয়ে ওঠার গল্প পাড়ায় সবার কাছে মিস্টি হাওয়ার মতো কিন্তু সখির মুখে পলার কথা বাজ পড়ার মতো সবাইকে চমেক দিয়েছে আর এর ওর মুখে প্রশ্ন চিহ্ন, এও সম্ভব। তা হল কী করে?

পলা পাড়াতে থাকত যে ছেলেটির সঙ্গে সে তার বন্ধু। মেয়েবেলার বন্ধু। তার স্বামী একটা মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানিতে কাজ করে। থাকে আয়ারল্যান্ডে। পলা মা-বাবা হারা মেয়ে। পড়াশোনা মামার বাড়ি থেকে। কলেজে যোগাযোগ ও সম্পর্ক থেকে প্রেম । বিয়ে করে আবিদকে।

সে এখন আয়ারল্যান্ডে কর্মরত। আবিদ আয়ারল্যান্ডে যাওয়ার সময় সমস্যায় পড়ল পলাকে নিয়ে। ওকে নতুন জায়গায় কীভাবে সেটলড করবে? তার ওপর সে প্রেগন্যান্ট। বাড়ির অমতে বিয়ে বলে পলাকে মেনে নেয়নি মা বাবা। আবার পলার কাছের বলে কেউ নেই। দূর সম্পর্কের এক মামার কাছে থেকে পড়াশোনা করেছিল। সেই মামা বেঁচে নেই। পলা বলছিল, “তুমি বিদেশ যাও,আমি মেসে থাকব,ঠিকমত টাকা পাঠিও।”

“এ সময় কীভাবে থাকবে ? তোমাকে মেসে রাখবে না।”
“তুমি যাও, আমি একটা ব্যবস্থা করে নেব।”
“বরং বিদেশের এই জবটা ছেড়ে দিই।”
পলা জোর দিয়ে বলেছিল , “আমার জন্য চাকরি ছেড়ো না। ক্যারিয়ার নষ্ট কর না লক্ষ্মীটি। তুমি যাও।”
” তোমার ব্যবস্থা না করে কীভাবে যেতে পারি,রল?”
“তোমাকে একটা কথা বলব?”

“তোমার আপত্তি নাহলে আমার মেয়ে বেলার এক বন্ধুর কাছে থাকব।”
“আবিদ আর কোনো কুয়ারি করেনি। পলাকে চুমু খেয়ে বলেছিল, সাবধানে থেকো। “

   পলা একদিন সুন্দরের কাছে এল।সব শুনে বলেছিল , "তোর জন্য —তুই যা বলবি তাই করব।"
  তারপর পলা এসেছিল সুন্দরের হাত ধরে এ পাড়ায়। নীতার এখন দু বছর বয়স। করোনার সময়ে আবিদের চাকরি চলে যায়। কিন্তু সে দেশে ফেরেনি। সে সময় অনেক কষ্ট করে তাকে থাকতে হয়। সুন্দর তাকেও পলার হাত দিয়ে টাকা পাঠিয়ে ছিল। পুনরায় সে অ্যাক্সেনজার কোম্পানিতে জয়েন করে পলাকে ফ্লাইটের টিকিট করে ইমেল করে। 

 পলা সুন্দরকে বলে, " এখন কী করব বল? আমি তোমার কাছে থাকতে চাই।"
  সুন্দর যেন সমুদ্রের তীরে ঝড়ো হাওয়ার ঢেউয়ের ধাক্কা অনুভব করছে। পলার মুখের দিকে তাকিয়ে বুকের ভেতরের ঝড় গোপন করে চুপ করে থাকে।
 "তুমি বলেছিল,আমি যা চাইব তুমি তা করবে।"

সুন্দর কোনো কথা বলে না। চেয়ে থাকে পলার দিকে। 
 "আমি তোমার কাছে থাকব। সবাই জানে তুমি আমার স্বামী। আজ চলে গেলে লোকে বলবে স্বামীর ঘর ছেড়ে পালিয়েছি।"

    "শুধু এজন্য —"
  "না, আমি তোমাকে ভাল না বাসলে এতদিন থাকলাম কী করে?"
   "আবিদ?"
 "ওর জন্য করুনা হয়।"

সুন্দর বলল, “ও তো ভাল মানুষ। বড় মনের মানুষ। আমার কাছে আছ জেনেও তোমাকে ডেকে নিচ্ছে। আমি ভাবছি আমি কি পারতাম? তুমি ফিরে যাও।”
পলা সুন্দরকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে। তুমি যে রয়ে গেলে আমার মাঝে। তার কী হবে?”

   সুন্দর তাকে দু হাত দিয়ে ছাড়িয়ে বলল, "আবার যদি দরকার হয় আমি থাকব তোমার পাশে। তোমাদের মেয়ে নীতার বাবা থেকে ওকে বঞ্চিত কর না।"

 পরের দিন সকাল থেকে পলাকে আর দেখা গেল না পাড়ায়। লোকে বলতে শুরু করল, পলা স্বামী ছেড়ে পর পুরুষের সঙ্গে বেরিয়ে গেছে।

     বউ হারিয়ে সুন্দরের মুখে কোনও কথা নেই। 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *