বিদেশি
আব্দুর রহমান
“মা আমাদের বাড়ি কই? আমরা এখানে কেন? পাথরের ওপর শুয়ে থেকে আমার পিঠ ব্যথা করছে। এখন কী খাব? ওরা কী আবার আসবে? আমার খিদে পেয়েছে।”
কোনো উত্তর নেই। নির্বাক। শূন্য দৃষ্টি। পাশেই উত্তরা। এগিয়ে এলো। সে একটি বিস্কুট দিল রাজেশের হাতে। রাজিয়া কোনো কথায় বলে না। সে বধির, শুনতে পায়,দেখতে পায়। তবু শোনে না, দেখে না। একটা জীবন্ত স্টাচু। উত্তরা কিংবা চার বছরের শিশু পুত্রের কথা রাজিয়ার কানে গেল না।
উত্তরা জানে একদল উন্মত্ত যুবক বাড়িতে আগুন দিল। চারদিক ঘিরে শুধু মার মার আওয়াজ ঝড়ের মতো ছড়িয়ে পড়ল। দাও দাও করে পুড়ছে বাড়ি ঘর।নারী-পুরুষ প্রাণ বাঁচাতে ছুটে চলেছে নদীর দিকে। শুধু রুখে দাঁড়িয়ে ছিল আলতাফ। তাকে ঘিরে ধরে তারা। শিশু সন্তানকে বুকে ধরে রাজিয়া ছুটছে নিরাপদ জায়গায়।শুনতে পেল জান ফাটা আওয়াজ। ঘুরে তাকাতেই দেখল আলতাফের বুকে ছোরা বসিয়েছে তার চাচাতো ভাই রফিক। কদিন আগেই বিলের জমি নিয়ে ঝামেলা হয়েছে রফিক আর আলতাফের সঙ্গে।
সে এখন শাসক দলে নাম লিখিয়েছে। সে নেতৃত্ব দিচ্ছে বসন্তপুর বুথ কমিটিতে। এক দিকে বাড়ি পুড়ছে। এক ঘর পাট ভর্তি। পাট পুড়ছে। রাজিয়ার বুকের ভেতর সেই আগুনের দহন। উত্তরা ছুটে এসে টেনে হিছড়ে রাজিয়াকে সঙ্গে করে রেল পুলিশের কোয়ার্টারের পছনে আশ্রয় নিয়েছে দশটি পরিবারের সাথে। উত্তরার স্বামী বীরেন ঘরামি এখনো নিরুদ্দেশ।
ভোট দিয়েছে বিরুদ্ধে দলের প্রার্থীকে। সেই অপরাধ। স্বাধীন মতামত দেয়া নাগরিকদের অধিকার। নির্বাচন গণতন্ত্রের শরীর। আগ্রাসী দল চায় সহমত। না করলে সহবত শেখানো হবে। সহবত শেখানোর অপারেশন চলছে।
বেশ কবছর আগেও জমি অধিগ্রহণ করার সময়ে আলতাফরা পার্টির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে ছিল। সেদিনও ঘর বাড়ি ছেড়ে পাঁচ বছর আশ্রয় ছিল জেলার বাইরে। স্ত্রী পুত্র কন্যা নিয়ে স্বদেশ শূন্য জীবন।উত্তরা ভাবে,স্বদেশের মানুষ কারা? খাঁচার পাখী?
বার বার ফিরে আসে সেই ছোট্ট রাজেশের কান্না। ‘মা আমাদের বাড়ি কই?’