আব্দুল মান্নান
গণ-মানুষের কবি
ফুলের প্রতি কবি’র অনুরাগ সহজাত। কাজী নজরুল ইসলামকে চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন প্রেমেন মিত্তির, নিম্নোক্ত কবিতার লাইনে –
বজ্র, বিদ্যুৎ আর ফুল – এই তিনে নজরুল।
কবি দিলওয়ারের সঙ্গে সাক্ষাতের একযুগ আগে এক বন্ধু তাঁকে নিয়ে একটি গল্প বলেন। গল্পটিতে কবি’র সৌন্দর্যপ্রীতি ফুটে উঠেছে।
বিয়ের পর বন্ধু স্ত্রীকে নিয়ে শশুর বাড়ি বেড়াতে গেছেন। দিলওয়ার সাহেবের পাশের বাড়ি – সেখানে কবি’র সঙ্গে নবদম্পতির দেখা হয়ে যায়। তিনি তাদেরকে একটি লাল গোলাপ উপহার দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। গল্প বলা শেষ করে বন্ধুটি মৃদু হাসলেন।
আধুনিক কবিদের অন্যতম প্রধান কবি আল মাহমুদ ও অনান্যরা রাজধানী ঢাকায় সাহিত্য চর্চা করে যশ খ্যাতির অধিকারী হলেন। দিলওয়ার খান – কবি দিলওয়ার নামে সমধিক পরিচিত, এসবের ধার দিয়ে গেলেননা। প্রথম যৌবনে ঢাকায় সাংবাদিকতা করলেও সেখানে মন বসেনি
তাই চলে এলেন নিজ গৃহে প্রকৃতির কাছে, সবুজের বুকে । জীবনভর পড়ে রইলেন এখানে।
প্রত্যহ ভোরবেলা তিনি হাঁটতে বেরোতেন সুরমা নদীর পাড় ধরে। সিলেট শহরের দক্ষিণে সুরমা নদী আঁকাবাঁকা বয়ে চলেছে। সুরমা’র ওপর উপনিবেশ আমলে নির্মিত সেতু- তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের শাসকের নামানুসারে রাখা হয়, কীন্ ব্রিজ। এই কীন্ ব্রিজে দাঁড়িয়ে কবি দিলওয়ার রোজ সূর্যোদয় প্রত্যক্ষ করতেন। এর বিবরণ পাওয়া যায় তাঁর কীন্ ব্রিজে সূর্যোদয়’ নামক একটি বিখ্যাত কবিতায়।
কবি বলতে লাগলেন আল মাহমুদের সঙ্গে প্রথমদিকে সখ্যতা গড়ে উঠার কথা। পরে যোগাযোগ কমে যায়।
তাঁর স্মৃতিচারণে উঠে আসে শৈশবের কথা, মায়ের স্নেহের কথা। কথার এক ফাঁকে সোফা ছেড়ে ভিতরে গেলেন, মুহূর্ত পরে একগুচ্ছ আঙুর এনে আমাদের খেতে দিলেন।
লক্ষ্য করলাম কবি নিঃসঙ্গ, জানালেন সদ্য তাঁর স্ত্রী-বিয়োগ ঘটেছে।
কবি দিলওয়ার তখনো রাষ্ট্রীয় পুরস্কার একুশে পদক পাননি- শুধু বাংলা একাডেমি পুরস্কার পেয়েছেন। সেকথা মনে পড়ায় বললাম সরকার চাইলে অন্তত একটি জনপ্রিয় কাব্যের জন্য একুশে পদক দিতে পারতেন। একথা শুনে কবি আহত ভঙ্গিতে আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন। বুঝতে পারলামনা তাঁর সাহিত্যকর্ম সম্বন্ধে আমার অজ্ঞতা দেখে ব্যথিত হলেন নাকি একুশে পদকের প্রসঙ তুলায়। দীর্ঘশ্বাস চেপে তিনি বললেন, আমার অসংখ্য রচনা রয়েছে যেজন্য সরকার একুশে পদক পুরস্কারের বিবেচনা করতে পারেন।
উক্ত আলাপের ক’বছর পর বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে দিলওয়ারকে একুশে পদক প্রদান করা হয়।
আলাপের সূত্র ধরে কবি বলেন আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশকে একটি প্রশ্ন করে চিঠি পাঠানোর কথা। ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে চিঠি পাঠানো হয়। জর্জ বুশ এর উত্তর দেননি। দিলওয়ার সাহেব সাবলীল ইংরেজিতে কথা বলেন, মুগ্ধ হয়ে শুনি।
পরে যখন জর্জ ডাব্লিউ বুশ আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হলেন তাঁর কাছেও একটি পত্র লিখেন তিনি। জুনিয়র বুশ কবি দিলওয়ারের অনেক প্রশংসা করে সেই চিঠির উত্তর দিয়েছিলেন।
আলাপে আলাপে ঘন্টাখানেক সময় কেটে গেলো টেরই পেলামনা। এবার আমরা উঠে দাঁড়ালাম। কবি কিছু সাহিত্যপত্রিকা উপহার দিয়ে দরজা পর্যন্ত এসে বিদায় জানালেন।
(সমাপ্ত)