“অনুরাগ” কাব্য সংকলন সম্বন্ধে দুটি কথা ।
লিখেছেন স্নেহভাজন বিকাশ চন্দ্র মণ্ডল, কবি ও সাহিত্যিক
যারা পত্র-পত্রিকায়, বিভিন্ন সাহিত্য গ্রুপের পত্রিকার বিভিন্ন সংকলনে, এমনকি আধুনিক ডিজিটাল মাধ্যম যেমন ফেসবুক, টাইম-লাইন, ইনস্টাগ্রাম, ওয়াটসাপ, মেসেঞ্জার, ইত্যাদির মাধ্যমে সাহিত্যের জগতে বিচরণ করছেন, তাঁরা বিশিষ্ট কবি ও সাহিত্যিক বিকাশ চন্দ্র মণ্ডলের বিচরণ অনুভব করতে পারছেন । তিনি প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে উঠে এসেছেন । পুরুলিয়া জেলার রঘুনাথপুর থানার অন্তর্গত গদীবেড়ো গ্রামে তাঁর জন্ম । পেশায় একজন শিক্ষক । আমি মনে করি, বাংলা সাহিত্য সমৃদ্ধকরণে তার সৃজন প্রতিভার উন্মেষ নিঃসন্দেহে উল্লেখযোগ্য ।
বিকাশ চন্দ্র মণ্ডলের এটা হাইকু কাব্য সংকলন । আমরা জানি, হাইকু একধরনের সংক্ষিপ্ত জাপানী কবিতা । তিন পংক্তিতে ৭ মোরাসে প্রকাশ । যদিও হাইকু’র গঠন মূলত তিনটি পংক্তিতে যথাক্রমে ৫+৭+৫ সিলেবল (Syllables) বা মাত্রা নিয়ে গঠিত । যাই হোক, সংক্ষিপ্ত পরিসরে মনের ভাব প্রকাশ । উল্লেখ থাকে যে, আবার জাপানী হাইকু একটি লাইনে লিখিত হয় । শোনা যায়, ইউরোপিয়গণ ১৭ মোরাসকে ১৭ দল মনে করে হাইকু লেখার সূত্রপাত করে । তাদের দেখাদেখি বাংলা ভাষায় ১৭ মাত্রার হাইকু লেখার প্রচলন । এখানে উল্লেখ থাকে যে, শুধুমাত্র বাংলা সাহিত্যেই নয় ভারতে প্রথম হাইকুর আবির্ভাব হয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৯১৩তে লেখা “জাপান যাত্রী” ভ্রমণ কাহিনীর সূত্রে । এই ভ্রমণ কাহিনীর বইটিতে রবীন্দ্রনাথ জাপানের বিখ্যাত মাৎসুও বাশোর দুইটি হাইকুর অনুবাদ করেন । যদিও তিনি ৫,৭,৫ ছন্দের নিয়ম না মেনেই অনুবাদ করেছিলেন । যাই হোক হাইকুর এই রকম পরিস্থিতির মধ্যে বিকাশ চন্দ্র মণ্ডলের হাইকু কাব্য সংকলন “অনুরাগ” প্রকাশ নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয় !
“অনুরাগ” কাব্য সংকলনে মোট ৫৬টি হাইকু কবিতার বিচ্ছুরণ ! কাব্য সংকলনটি তাঁর সৃজনশীলতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত । প্রত্যেকটি লেখায় প্রকৃতি ও প্রেমের মেল বন্ধন সুচারুভাবে তিনি ঘটিয়েছেন । লেখার বাঁধন যথেষ্ট মজবুত ও সহজেই বোধগম্য । কয়েকটি লেখা মন ছুঁয়ে যায় । যেমন “বলা হলো না”তে রয়েছে “বলা হলো না / মনের সে অব্যক্ত / প্রেমের কথা, তারপর “যাবার বেলা”তে “যাবার বেলা / দিয়ো বিদায় মোরে / যে অকাতরে, ইত্যাদি । কবিতা নির্মাণে কবি যথেষ্ট স্বচ্ছন্দ ও সাবলীল । কবিতাগুলি ভীষণ মনোমুগ্ধকর । মূল্যায়নের দিক দিয়ে সর্বঅর্থে অর্থবহ ।
আমরা লক্ষ করেছি, সাহিত্য উন্নয়নের নিরিখে সাহিত্য জগতে কবি বিকাশ চন্দ্র মণ্ডলের অবাধ বিচরণ পুরুলিয়া জেলা ছাড়িয়ে কলকাতার উপকন্ঠেও । যার জন্য কলকাতার বিভিন্ন সাহিত্য পত্রিকার অনুষ্ঠানে তাঁর গৌরবোজ্জ্বল উপস্থিতি আমাদের নজর কাড়ে । এছাড়া বহু পত্র-পত্রিকায় তাঁর সৃজনশীলতার অনবদ্য নিদর্শন আজ সর্বজনবিদিত । আমি চাই, সাহিত্য জগতে তাঁর গৌরবোজ্জ্বল বিচরণ অক্ষুন্ন থাকুক এবং তাঁর কাব্য সংকলনটি পাঠক সমাজে সমাদর লাভ করুক ।
দিলীপ রায় (+৯১ ৯৪৩৩৪৬২৮৫৪)
কথা সাহিত্যিক (ভারত)
বিকাশ চন্দ্র মণ্ডল