হরপ্পা সভ্যতা /দেবদাস কুণ্ডু

‘আচ্ছ এখানে একটা টালির বাড়ি ছিল না?’

‘হ্যাঁ ছিল তো।’

‘একজন বিধবা দোলের দিন ভোগ দিতেন না?’

‘হ্যাঁ ।দিতেন তো।’

‘একটা লাল রংয়ের সিমেন্টের দোলমঞ্চ ছিল না?’

‘ছিল তো।’

‘দোলের দিন তার ওপর দোলনা বাঁধা হতো না?’

‘হতো তো। দুপাশে বাঁশ খাড়া করে দড়িতে ঝোলানো হতো উল্টো জলচৌকি। ‘

‘ হ্যাঁ ।’

‘ দোলনায় দুলতো পিতলের রাধা কৃঞ ।তাই না।? ‘

‘ একদম ঠিক। ‘

‘ একটি যুবক ছেলে, ঐ বুড়ির নাতি হবে, দড়ি টানতো। দোলনা দুলতো।বুড়ি গান গাইতো। গলা ভালো ছিল না। কিন্তু ভক্তি ছিল নিখাদ। আমি ঠিক বলছি তো? ভুল হলে বলবেন।’ 

‘এখনও পর্যন্ত কোন ভুল বলেন নি আপনি। ‘

‘এই অঞ্চলে তখন সমাজ বিরোধীদের খুব দৌরাত্ব ছিল। তাই না?’ 

‘ হ্যাঁ তাই ছিল। ‘

‘হেমেন মন্ডল ছিল, কান কটা দিলীপ ছিল, ছুপা ভাই ছিল। তারা পয়দা তুলতো দোকানদার, ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে। এলাকা ভাগ ছিল। এলাকা  নিয়ে মাঝে মাঝে বোমা বাজি হতো। একবার তো এই রাস্তার ওপর, দোলের দিন ছিল একটা ছেলে দিনের বেলা পেটে ছুরি ঢুকিয়ে পালাল। ছেলেটা রাস্তায় পড়ে ছটপট করছিল। এক সময় নিস্তেজ হয়ে পড়লো। মারা গেল। পুলিশ এসে লাশ তুলে নিয়ে গেল। এমন হামেশাই হতো। তাই না? ‘

‘ একশো শতাংশ সত্যি। ‘

‘ সেই বুড়িমা তো মারা গেছে’? 

‘ তিরিশ বছরের আগের কথা। তখনই ছিল ষাট। ‘আচ্ছা সেই বাড়িটা কই ?’ 

‘এই যে ছ তলা বাড়ি দেখছেন, এটাই টালির বাড়ি ছিল।’ 

:ও আচ্ছা। ‘

‘ সেই যুবক ছেলেটি? ‘

‘ এই তো আমি। আপনার সামনে দাঁড়িয়ে আছি। এখন আমার পয়সট্টি।’ 

‘ আচ্ছা এখনও সেই খুনোখুনি আছে? ‘

‘ আছে। আগে ছিল সমাজবিরোধী।এখন সব বেকার ছেলেদেল ইট বালির সাপ্লাই নিয়ে মারামারি। এই তো এর মধ্যে, হ্যাঁ, সেদিনো হোলি ছিল, একটা ছেলে দুপুর বেলা পিস্তল দিয়ে আর একটি ছেলেকে গুলি করলো। ছেলেটাও পকেট থেকে 

পিস্তল বের করে ঐ আহতো অবস্থায় গুলি করলো। নিভূল নিশানা। মাটিতে পড়ে রইল দুটো লাশ। ‘

‘ আচ্ছা সেই দোল মঞ্চ এখনও আছে? ‘

‘ কি করে থাকবে? এখন কেউ দোলপূনির্মায়

রাধাকৃঞ্চর গান গায়? ‘

‘ তাহলে দোলমঞ্চ গেল কোথায়? ‘

‘ এই ছ তলা বাড়ির গর্ভে। ‘

‘ আচ্ছা যদি এই বাড়িটার মাটি খোঁড়া যায় তবে

কি দোল মঞ্চটা পাওয়া যাবে? ‘

এইবার  শিবশংকর রায় লোকটার দিকে তাকায়।তারই বয়সি হবে। লোকটাকে অদ্ভূত মনে হয় তার। তবু শিবশংকর রায় বলেন,’ আপনি তো পাগল মানুষ! মাটি খুঁড় দোলমঞ্চ পাওয়া যায়? এটা কি হরপ্পা সভ্যতা? ‘

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *