……. দুপুরের পর থেকে দীপ্তর পৃথিবীর রংটাও যেন নতুন সূর্যালোকের প্রভাবে সত্যই উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। হঠাৎ করেই সবকিছু যেন নতুন করে ভাল লাগতে শুরু করেছে। সবসময় রুক্ষ ও গাম্ভীর্য ভরা একটা ব্যক্তিত্বের মোড়কে যেন নিজেকে ঢাকা দিয়ে লুকিয়ে রাখত সে। অফিসে তাঁর অধস্তন কর্মীরা তাঁকে এতটাই ভয় পেত যে মাঝেমাঝে সে নিজেই বিব্রত বোধ করত। কোনদিন কারো সাথে খারাপ ব্যবহার করেছে বলেও তাঁর মনে পরে না। তবুও সবাই যেন তাকে একটু বেশীই সমীহ করত।
হঠাৎ তাঁর চেম্বারের কলি বেলটা বেজে উঠল। অন্যদিন সে চেয়ারে বসে কাজ করতে করতেই তাঁর সাথে দেখা করতে আসা ব্যক্তির উদ্দেশ্যে বলে উঠত…… “ইয়েস্, কাম ইন।”
আজ রঞ্জুর মেসেজ পেয়ে তাঁর আর কাজে ঠিকঠাক মন বসছিল না। সে উঠে গিয়ে নিজেই দরজাটা খুলে দিল। দেখল ম্যানেজার সাহেব এসেছেন তাঁর সাথে দেখা করতে কতকগুলি ফাইল নিয়ে।একটু হাসিমুখেই দীপ্ত ম্যানেজারকে বলল….. “আসুন, ভিতরে আসুন। ” বলে সে চেয়ারে গিয়ে বসল।
দরজার দিকে নজর ফেরাতেই দেখল ম্যানেজার বাবু কেমন বিব্রত বোধ করছেন ভিতরে আসতে। তাঁর মুখে হাসি দেখে ম্যানেজার বাবু এতটাই অবাক হয়েছিলেন যে দীপ্ত বাবু উঠে এসে দরজা খুলে দিলেন সেটার ঘোর কাটিয়ে উঠতে না পেরে সেখানেই স্থানুবৎ দাঁড়িয়ে ছিলেন। দীপ্ত আবার ডাকল…… “কি হল? আসুন। “
ম্যানেজার বাবু চমকে উঠে বললেন ……” ইয়েস স্যার। ” বলতে বলতেই হন্তদন্ত হয়ে ভিতরে ঢুকলেন।
দীপ্ত বলল, … “বসুন “।
ম্যানেজার বাবু টেবিলের উপরে ফাইল গুলো রেখে চেয়ারে বসলেন এবং দীপ্তর দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে বললেন, ……” একটা কথা বলব স্যার যদি কিছু মনে না করেন? “
দীপ্ত বলল, “বলুন। “
ম্যানেজার বাবু বললেন, ” এতদিন আপনি অফিসে আসছেন। আজ প্রথম আপনাকে হাসতে দেখলাম। তাই একটু ……”
ম্যানেজার বাবুর কথা শুনে দীপ্ত হো হো করে হেসে উঠল। বলল ….” আপনারা সবাই আমাকে এত ভয় পান কেন ? আমি কি কোন ভয়ঙ্কর জীব?
ম্যানেজার বাবু একটু ইতস্ততঃ করে বললেন….. ” আপনি অফিসের বস। তাতে রাসভারী মানুষ। তাই সবাই আপনাকে একটু সমীহ করে চলে। “
ম্যানেজার বাবুর কথা শুনে দীপ্ত আবার হেঁসে উঠল।
ম্যানেজার সাহেব ফাইল গুলো খুলতে গেলে দীপ্ত বলল, …..” আজ থাক। আজ আর কাজ করতে ইচ্ছা করছে না। কাল করব। সত্যি বলতে কি আজ অনেক দিন পরে একজন হারিয়ে যাওয়া মানুষকে ফিরে পেয়েছি। তাই মনটা আজ খুব খুশি। “
ম্যানেজার বাবুকে কথাটা বলতে পেরে দীপ্তর মনে হল যেন নিজেকে একটু হাল্কা লাগছে। ম্যানেজার বাবু চলে যেতেই সেও বাড়ী যাওয়ার জন্য বের হল।
অফিস থেকে বের হতেই দেখল ফুল বিক্রেতা ছোট ছেলেটা ওকে দেখেই ছুটে পালাল।।ক’দিন আগেই অফিসে ঢোকার সময় ছেলেটা ফুল নেওয়ার জন্য জোরাজুরি করছিল বলে দীপ্ত ওকে বকেছিল। দীপ্ত ছেলেটাকে ডাকল। ছেলেটা কাঁচুমাঁচু মুখ করে এসে ওর সামনে মাথা নীচু করে দাঁড়াল।
দীপ্ত বলল তোর ফুল গুলো আমায় দিবি। ছেলেটা ওর দিকে না তাকিয়ে ফুলগুলো এগিয়ে দিল। দীপ্ত ফুলগুলো নিয়ে একটা দু’শো টাকার নোট ওর হাতে দিয়ে বলল…. “এটা আমি তোকে দিলাম। ” ছেলেটা হাসতে হাসতে চলে গেল। দীপ্তর মনটা আরও একবার আনন্দে ভরে উঠল। রঞ্জুকে ফিরে পেয়ে ও যেন আবার সেই পুরানো দিনগুলোতে ফিরে যাচ্ছে।……