…দীপ্ত বাড়ি ফিরতেই তাঁর মা বললেন, ” কি রে, আজ এত তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে আসলি। শরীর খারাপ করেনি তো? “
দীপ্ত বলল, ” না, মা, শরীর ঠিকঠাক আছে। আজ একটু তাড়াতাড়ি বাড়ি আসতে ইচ্ছা হল, তাই চলে এলাম। “
দীপ্ত বুঝতে পারল তাঁর চাকরী জীবনে আজ প্রথম সে সময়ের আগে বাড়ী আসায় তাঁর মা সত্যিই অবাক হয়েছে। দীপ্ত আর কথা না বাড়িয়ে জামাকাপড় ছেড়ে স্নানঘরে ঢুকল। সারাদিন অফিস করে বাড়ি ফিরে সাওয়ারের তলায় দাঁড়িয়ে কলটা খুলে দিল। গুনগুন করে গান গাইতে গাইতে অন্যদিনের তুলনায় একটু বেশী সময় ধরেই স্নান করল সে। জলের ঝরণা ধারা আর তাঁর মনের মধ্যে চলতে থাকা আনন্দ ধারা যেন মিলেমিশে একাকার হয়ে তাঁকে এক অপার্থিব জগতে ভাসিয়ে নিয়ে চলেছে।
রঞ্জুর মনে সেই একরকম অবস্হা। কোনভাবেই সে দীপ্তকে ফিরে পাওয়ার আনন্দটা গোপন করতে পারছে না। উদ্যাম সমুদ্র স্রোতের মত তাঁর মনের প্রাচীর ছাপিয়ে তাঁর চোখে, মুখে ছড়িয়ে পড়ছে। সে গুনগুন করে গান গাইতে সংসারের কাজ করতে থাকল। তবে প্রতিদিনের একঘেয়েমি কাজ করতে তাঁর বেশ ভাল লাগছে আজ। মাঝেমাঝেই চোখ আর মন চলে যাচ্ছে ফোনের দিকে। নেট অন করাই আছে প্রত্যাশিত মেসেজের অপেক্ষায়। তাঁর মনে সেই কলেজের দিনগুলোর মত চঞ্চলতা। ঠিক যেভাবে কলেজের দিনগুলোতে দীপ্তর সঙ্গে দেখা করার জন্য ছটপট করত।
নিজের মানসিক অবস্থা রঞ্জুকে অবাক করে দিচ্ছে। কতদিন সে এইরকম আনন্দানুভূতি থেকে বঞ্চিত ছিল। কতদিন সে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছিল। সত্যিই সে দীপ্তকে ভুলে গিয়েছিল সংসারের চাপে, সময়ের স্রোতে। কি করে পেরেছিল সে। হয়ত দীপ্তর উপরে অভিমান তাঁকে সাহায্য করেছিল। তবুও সে ত জানত দীপ্তর অবস্হা। তাঁর ও অপেক্ষা করা উচিত ছিল। এইসব ভাবনাও ভিড় করে আসছিল তাঁর মনে বাঁধভাঙা স্রোতের মত।
দাদা আর ভাই বাড়ী ফিরলে তাদের চা বিস্কুট দিল রঞ্জু প্রতিদিনের মত। তারপর রাতের রান্না করা, সবাইকে খেতে দেওয়া। খেতে বসে রঞ্জুর দাদা বলল, ” তোর কি কিছু হয়েছে?”
রঞ্জু চমকে উঠল। আবার সেই এক প্রশ্ন, তাঁর মাও সন্ধ্যাবেলায় একই প্রশ্ন করেছিলেন। এখন আবার দাদা। তাহলে সত্যিই কি তাঁর কাজের মধ্যে তাঁর মনের চঞ্চলতা সবার কাছে প্রকট হয়ে ফুটে উঠছে? নিজেকে সামলে নেওয়ার চেষ্টা করে সে বলল, “কেন? “
তাঁর দাদা বলল, “না, মনে হল। বাড়ি ফেরা দেখছি তুই কখনও উদাস, কখনও খুশি মনে গুনগুন করে গান করছিস। তাই জানতে চাইলাম। সাধারণত এরকম মুডে তোকে দেখিনা ত। ” দাদার কথা শুনে রঞ্জু খুব লজ্জা পেল। তাঁর ভাই এবার তাঁকে দেখে হাসতে লাগল। রঞ্জু বলল, ” কেন? আমি কি গান গাইতেও পারব না। ”
তখন দুভাই মিলে বোনকে একসাথে বলল, ” না, না, রাগ করছিস কেন? তোর গান ভাল লাগে নি সেটা ত বলিনি। তুই যে আজ এতদিন পর আবার সেই আগের মত গুনগুন করে গান করছিস সেটা সেই ছোটবেলার কথা, তোর কলেজ যাওয়ার দিনগুলোর কথা মনে করিয়ে দিল। “
রঞ্জু দাদা আর ভাই এর কথার কোন উত্তর দিল না। তাদের খাওয়া হলে বাসনগুলো নিয়ে চলে গেল। তারপর মাকে খাইলে, নিজে খেয়ে রান্নাঘরের কাজ শেষ করে নিজের বিছানায় এসে বসল। আজ বিকালের পর থেকে তাঁর মন দীপ্তময়। ঠিক তখনই তাঁর মুঠোফোনে ম্যাসেজ ঢোকার শব্দ হল।……….