আকাশে চলাচল করছিল গর্ভবতী নারীর মতো মেঘ। প্রসব বেদনার মতো ঝরে পড়ছে বৃষ্টি। চারপাশ ঝাঁপসা।যেন অনেকগুলো শাওয়ার থেকে ঝরছে বৃষ্টি। কানে আসছে একটানা সেতারের ঝংকার।
আউটট্রাম ঘাটে কলেজ বান্ধবীকে নিয়ে ভিজেছি এই রকম এক বৃষ্টিতে। সেদিন যে কি আনন্দ হয়েছিল। মনে মনে চাইছিলাম এই বৃষ্টি যেন না থামে। বৃষ্টি হোক বিরামহীন। আজীবন ভিজবো।
কিন্তু চাইলেই তো পাওয়া যায় না। সন্ধ্যার আগেই বৃষ্টি থেমে গিয়ে ছিল। সাতদিন জ্বরে ভুগে ছিল শিউলি। কিন্তু কোন অভিযোগ করেনি। বলেছিল, স্মৃতির পাতায় বেঁচে থাকবে এই বৃষ্টি। হয়ত সেদিন আমরা থাকবো না।
সত্যি আজ শিউলি নেই। এই পৃথিবীতেই নেই। বেষ্ট ক্যান্সারে মারা গেছে।
দার্জিলিং গেছি বেড়াতে। হ্যানিমুনে। পাহাড়ী নির্জন পথে হাঁটছি স্ত্রী রুনাকে নিয়ে। হঠাৎ নেমে এলো বৃষ্টি। চারপাশ ঝাঁপসা।পাহাড় গুলি জলছবির মতো। নীরবে ভিজছে পাহাড়। আমরা হাঁটছি বৃষ্টিতে স্নান করতে করতে। অনেকটা পথ হেঁটে ফিরেছি হোটেলে। রুনা বলেছিল, এই দিনটা ভুলবো না কোনদিন। আশা করি তুমিও ভুলবে না। এমন রোমান্টিক দিন আর কোনদিন আসবে কিনা কে জানে। আমি আজকের কথা ডাইরিতে লিখে রাখবো। আমি যখন থাকবো না এই পৃথিবীতে, তখন তুমি পড়বে। আমাকে মনে করবে।
এখন আমার চোখের সামনে সেই ডাইরির পাতা।
আমার মেয়ে তিতলিকে নিয়ে বাড়ির উঠনো ভিজেছি কতদিন। তিতলি দারুন মজা পেয়ে ছিল। বলেছিল, বাবা আমি যখন কাছে থাকবো না। তুমি বৃষ্টির কথা ভাববে। তাহলেই আমার স্পর্শ পাবে।
সত্যি তাই। আজ তিতলি হাজার হাজার মাইল দূরে আমেরিকার টরোন্টো শহরে রয়েছে।
কিন্তু স্পর্শ অনুভব করতে পারছি না কেন? নিজের দেশ ছেড়ে অন্য দেশে গেলে কি স্পর্শ হারিয়ে যায়? স্পর্শেরও অভিমান আছে বুঝি?
ছেলে বেলায় স্কুল থেকে বর্ষা কালে বৃষ্টিতে ভিজে বাড়ি ফিরলে বাবা বকতো। মা দু এক ঘা দিতো। জ্বর হতো। আবার বাদল মেঘের কান্নায় স্নান সের বাড়ি ফিরতাম।
আজ কেউ নেই।রুনা নেই। শিউলি নেই। তিতলি নেই। বাবা মা তো কবেই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেছে। বৃষ্টি অঝোর ধারায় পড়ছে আর বলছে, এই বাদল দিনে তুমি একা, তুমি একা।
এক বিরাট শূন্যতা বুকের ভিতর অনেক উঁচুতে ওরা কোন পাখির মতো পাঁক খাচ্ছে।
এক সময় আমার চোখ ঝাঁপসা হয়ে আসে। বুঝতে পারি আর এক বৃষ্টি নামলো চোখের জমিতে।