সেই সব চড়ুইভাতি – দীপাঞ্জনা দাস

সময়টা মোটামুটি 80 র দশক জুড়ে । তখন মফস্বলে প্রায় সব পাড়াতেই শীতকালে বাচ্চাদের একটা পিকনিক চালু ছিল । আমাদের পাড়ায় আমি ছিলাম ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোয় ওস্তাদ । আমাদের 6 জনের একটা দল ছিল । আমি , টুকাই , বুবুন , মৌ , তুলি , মামনি । আগের দিন সন্ধ্যাবেলা 6 জন মিলে শুরু করতাম ছোটদের (অনূর্ধ্ব 10) বাড়ি বাড়ি গিয়ে চাল , ডাল , তেল ,  আলু সংগ্রহ করা ।  চাল মাপার কৌটো নিয়ে অভিযানে বেরোতাম আমরা । সবাই vi , vii , viii এর বেশী না হলেও নিজেদের বেশ কেউকেটা মনে হত ।

অনূর্ধ্ব 5 রা আধকৌটো আর বাকীরা ভর্তিকৌটো চাল দিত । চাঁদা অনূর্ধ্ব 10 রা দিত 15 টাকা , আমরা উদ্যোক্তা বলে দ্বিগুণ দিতাম । রাতে উত্তেজনায় ঘুম হতনা কারো ।  পরদিন কোনো একজন কাকু বাজার করে আনত পিকনিকের । হ্যাঁ , বন্ধুর বাবা কে নির্দ্বিধায় কাকু আর তুমি বলতাম আমরা । কেউ uncle বা আপনি বললে কানমলা খেতে হত । বাজার থেকে লঙ্কা , ডিম , ফুলকপি , টমেটো , পাঁচফোড়ন এসে গেলে মায়েরা রান্না শুরু করত । পাশাপাশি চলত জনাকুড়ি বাচ্চার তাণ্ডব নৃত্য । আমরা 6 জন সেদিন তাদের সামলানোর দায়িত্বে থাকতাম । তারই ফাঁকে আমাদের ব্যাডমিন্টন খেলাও হয়ে যেত কয়েকবার । ডিজে বক্স না থাকলেও আনন্দের খামতি ছিলনা । জীবন্ত ডিজে বক্স গুলোই মাত করে দিত সবাই কে ।

এরপর মাঠে শতরন্চি পেতে খেতে বসানো হত বাচ্চাদের । পরিবেশনে 6 দিদি । ওরা খেত কম , ছড়াত বেশী । কাকিমারা খোলা উঠোনে ঘেমেনেয়ে রান্না করেও হাসিমুখে এঁটো পরিস্কার করত সবার । রান্না বেশীই হয়ে যেত প্রতিবার । ফলে আমাদের খাওয়ার পর মায়েরাও বসে যেত সেগুলোর সদ্ব্যবহার করতে । আর টুকাই এর মা , লক্ষী কাকিমার হাতের মুগডাল ছিল আমাদের খুব পছন্দের । ( কিন্ত পরবর্তী বিপদের কথা ভেবে , খুব বেশী দেওয়া হত না )। তারপরও খাবার উদ্বৃত্ত হত । তখন fridge ছিল না কারো বাড়ি ।

তাই আমরাই পোঁটলা বেঁধে জোর করে কাকিমাদের হাতে দিয়ে দিতাম কাকুদের জন্য । একটা দিন অনাবিল আনন্দে কেটে যেত আমাদের । কিন্ত দুঃখ একটাই , নিজের না হয়েও , নিজের থেকেও বেশী কাকু কাকিমারা আজ অনেকেই ছেড়ে চলে গেছে আমাদের । আর জীবনের বহমানতায় আমরা আজ ও ভেসে চলেছি নতুন পরিবার , নতুন সঙ্গী , নতুন প্রজন্মের হাত ধরে , কিছু দুর্মূল্য অতীত স্মৃতি আর ছেড়ে যাওয়া কাছের মানুষ গুলোর জীবন দর্শন কে পাথেয় করে । 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *