একাকীত্ব
সুদীপ চক্রবর্তী
চাকরিটা চলে গেছে পৌঁছালো তোর কানে ,
রোজকার আড্ডার মাঝে সন্ধ্যা আর রাতের মাঝখানে।
ভেবেছিলাম যাব তোর বাবার কাছে কথাটা শুরু করবো বলে ,
সেটা আর হলো না ,
তোর মনের অবস্থাটা আর জানাতে পারলি না ,
চলে গেলি বাড়ির পছন্দের লোকের সাথে ,
আর কোনো খবর নাই ,
দেখা হয় নাই কোনো অলি গলির পথে ,
আজ দেখা হলো তিরিশ বছর পর ,
অনেক দূরের মানুষ ,
কাছ থেকে হয়ে গেলি পর ।
সেই মাঠ নেই , নেই পরিচিত উঠোন ,
শান্তির জায়গা ছিল অশ্বত্থ গাছ তলা ,
শুধু হতো সারাদিনের জমে থাকা কথা বলা ,
তোর মনে আছে কি ?
আমার সবই মনে আছে ,
যদিও এখনও আমার ঘরে সত্যি বেমানান তোর একটা পুরানো ছবি লটকানো আছে ,
কিছুটা মুছে গেছে , কিছুটা অস্পষ্ট ,
বাকিটা বেঁচে আছে ।
যদিও মনের মধ্যে সব ছবিই জ্বল জ্বল করে চারিদিকে ঝুলে আছে ।
মুখটা সেই আগের মত মিষ্টি আছে ,
চুলে সামান্য পাক ধরেছে ,
কে যেন বল্লো ,
ঐ দেখ বড় ছেলের হাত ধরে চলেছে ,
আমায় কিন্তু চিনতে পারলো না ,
হয়তো বদলে গেছি ?
ছিলাম তো অনেক দিন একসাথে কাছাকাছি ।
তবুও চেনা অচেনার দোলাচলে জীবন কাটিয়ে দিলাম ।
এটাই কি শেষ বোঝাবুঝি ?
আজ বড় বাড়ি আছে , বড় চাকরির সাথে আধুনিক গাড়ি আছে ,
মাঝে কোনো সাঁকো বা সেতু নেই , যা তোর সাথে আমার আবার নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেবে ।
তোর ভালো লাগুক আর না লাগুক একটা সংসার আছে ,
আমি কিন্তু একা ,
একাকীত্বই একটা সংকট ,
স্থায়ী হিসাবে রয়ে গেছে ।
সব কিছুই মানিয়ে নিয়েছি ,
কিন্তু আজও একাকীত্ব কে মানতে পারিনি ,
নদীতে যেমন নৌকা চলে ,
আবার ফিরে আসে ঘাটে ,
আমারও তাই , চাকরি থেকে ঘরের ঘাটে ,
প্রতিদিন তোকে মনে করে তোর ছবির পাশে একটা সুগন্ধি ধূপ জ্বালাই ,
যাতে তোকে কোনোদিন ভুলে না যাই ।
নাইবা পেলাম তোকে ,
কিন্তু মনের মধ্যে ছবি রেখেছি এঁকে ।
আমার কোনো দুঃখ নেই , নেই কোনো শোক ,
তোর ছবি বেঁচে আছে ,
জীবনে দিয়েছে আলোক ,
জীবন চলেছে জীবনের মতো যতদিন মৃত্যু না আসে ,
তোর আমার স্বপ্ন সব সময় থাকবে আশেপাশে ।
জীবন শেষ হবার আগে একবার শেষ দেখা চাই ,
দুদন্ড গল্প করে একাকীত্ব কে বিদায় দিয়ে যাই ।