পার্কের বেঞ্চে বসে অয়নের হাতে হাত রেখে অন্তরা বলল,”আমাকে একটু তোমাদের বাড়িতে নিয়ে চলনা ,মাসিমার সঙ্গে একটু আলাপ করে আসি ” অয়ন গভীর ভাবে অন্তরার হাতটা নিজের হাতের মুঠোর মধ্যে টেনে নিয়ে বললো ,”আর কটা দিন অপেক্ষা করো, বধূবেশে তোমাকে নিয়ে যাব আমার মায়ের কাছে ।”এরপর অন্তরা আর অয়ন কথা বলে তাদের আগামী স্বপ্নের দিনগুলো নিয়ে।পরিকল্পনা করেকত কী তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে ।
অন্তরা বি.এ.পাশ করেছে ইংরেজিতে অনার্স নিয়ে। একটা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে চাকরী করছে।উচ্ছ্বল সুন্দরী প্রাণবন্ত একটি মেয়ে। অয়ন তুলনায় বয়সে একটু বড়।একটি প্রাইভেট সংস্থায় চাকরীরত।অন্তরার সাথে অয়নের আলাপ হয়েছে হঠাৎই।স্কুলে যাওয়ার সময় তাড়াতাড়ি রাস্তা পার হতে গিয়ে অয়নের বাইকের সামনে এসে পড়ে অন্তরা।ঠিক সময়মত ব্রেক না কষলে বিপদ ছিল অবধারিত।যাই হোক অয়ন বাইক থামিয়ে যখন রেগে বলে উঠেছিল”ব্যাপার কী?রাস্তায় ঠিক করে চলতে পারেন না?”তখন সে লক্ষ্য করল সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটা থর থর করে কাঁপছে।তাকে ধরে নিয়ে রাস্তার ধারে মিষ্টির দোকানে বসিয়ে ঘাড়ে মাথায় জল দিয়ে সুস্থ করেছিল সে।তখন থেকেই আলাপ। এখন তা ঘনিষ্ঠতায় পরিণত হয়েছে।
প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী অবিনাশ বাবুর একমাত্র মেয়ে অন্তরা । খুব আদর আহ্লাদে বড় হয়েছে। তার সব আবদার বাবা মা পূরণ করে।খুব আনন্দেই দিন কাটে অন্তরার।
অন্তরার বাড়ির পাশেই দুটি বাড়ি পরেই শুভর বাড়ি।শুভ অন্তরার থেকে বছর চারেকের বড়।সদ্য ব্যাংকে চাকরী পেয়েছে।অন্তরা বুঝতে পারে শুভ তাকে পছন্দ করে।কিন্তু মুখ ফুটে কোনোদিন কিছু বলেনি ।মাঝে মাঝে ছুটির দিনে ও যখন বাইরে বের হয় তখন বুঝতে পারে আড্ডা থামিয়ে দুটো ভালোবাসার চোখ ওর দিকে তাকিয়ে আছে।
কিন্তু অন্তরা এই নিয়ে কিছু ভাবেনা।অন্তরা আর অয়নের সম্পর্ক গভীর হতে থাকে।এর মধ্যে অন্তরার বাড়ির থেকে সম্বন্ধ দেখা শুরু হলে অন্তরা অয়নকে জানায়। অয়ন আসে তার মাকে নিয়ে অন্তরাদের বাড়ি। অন্তরার বাবা কোনোদিনই মেয়ের কোনো আবদার অপূর্ণ রাখেননি ।অন্তরাদের বাড়িতেও বসেই বিয়ের কথা বার্তা পাকা হয়ে যায় ।
অবশেষে প্রতীক্ষার অবসান হয়।বিয়ের দিন উপস্থিত। আয়োজনের কোনো ত্রুটি রাখেননি অবিনাশ বাবু।অনেক আত্মীয় স্বজনে বাড়ী গম গম করছে।শুভ ওএসেছে।নানা কাজে সাহায্য করছে। কিন্তু অন্তরা খেয়াল করেছে ওর মুখটা বড় ম্লান।বিকেল পার হয়ে সন্ধ্যা নামে। বর বেশে উপস্থিত হয় অয়ন।অন্তরার মনে কত স্বপ্ন উঁকি দিয়ে যায়।আজ তাদের প্রেম পূর্ণতা পাচ্ছে।খুব খুশী আজ সে। হঠাৎ বাইরে একটি পুলিশের গাড়ি এসে থামে।একজন মহিলা নামে গাড়ী থেকে।পিছনে পুলিশ। সোজা চলে আসে তারা বর যেখানে বসে আছে সেখানে।মহিলাটিকে দেখে অয়ন উঠে দাঁড়ায়।মহিলা বলে,”তুমি স্ত্রী সন্তান রেখে আবার বিয়ে করছ?”এই আকস্মিক ঘটনায় হতভম্ব হয়ে যায় অন্তরার বাড়ির লোক।সেই মহিলা বলে,সে অয়নের বিবাহিত স্ত্রী। বছর চারেক আগে তাদের বিয়ে হয় ।দু বছরের একটি ফুটফুটে মেয়েও আছে তাদের।সাত আট মাস আগে তার খুব শরীর খারাপ হলে এবং তাকে বাপের বাড়ি রেখে আসে।বলে মার বয়স হয়েছে বাচ্চা নিয়ে এই অবস্থায় তার এখন বাপের বাড়ি থাকাই ভালো।এরপর অয়ন উৎসাহ দেখায়নি তাকে বাড়ি ফিরিয়ে আনার জন্য। বলেছে নতুন ফ্লাট কিনেছে ।আগের ভাড়া বাড়িটা ছেড়ে দিয়েছে। নতুন বাড়িতে কিছু কাজ হচ্ছে। গোছ গাছ করে তাকে নিয়ে আসবে। ছোটবাচ্চা নিয়ে তাকে যাতে ঝামেলা না পোহাতে হয় তার জন্যই এই ব্যবস্থা।তারপর সে শুনতে পায় লোক মুখে অয়নের আবার বিয়ের কথা।এবংনির্বাক ।কিছু বলেনা সে। সুছন্দাকে দেখে সেও খুব হতভম্ব।নিরীহ বোকা সুছন্দা যে যেভাবে এখানে চলে আসবে ভাবতেও পারেনি সে।পুলিশ এসে নিয়ে গেল বরবেশী অয়নকে। আনন্দময় বাড়িটার মধ্যে নেমে এলো নিরানন্দের ছায়া ।সব কথা গেল অন্তরার কানে।তার চোখের সামনে থেকে মিলিয়ে যেতে লাগলো সব স্বপ্ন।এত বড় প্রতারণা!অয়নকে সে কত ভাল বেসেছিল-জীবনের প্রথম ভালোবাসা।বুকের মধ্যে কষ্ট যেন দলা পাকিয়ে উঠতে লাগল। অবিনাশ বাবু বলতে লাগলেন,”এবার কি হবে আমার মেয়ের?অজে লগ্নভ্রষ্টা হবে।কে আর ওকে বিয়ে করবে এরপর?মেয়ের কথায় ছেলেটাকে বিশ্বাস না করে যদি একটু ভালো করে খোঁজ খবর নিতাম তাহলেএই অঘটন ঘটত না ।সব আমার গাফিলতি।”বলতে বলতে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি।ধরাধরি করে তাকে ঘরে আনা হয়। আস্তে আস্তে একটু ধাতস্থ হন তিনি।শুভ অবিনাশ বাবুকে বলে,”আপনার কোনো আপত্তি না থাকলে আমি অন্তরাকে বিয়ে করতে চাই। “অবিনাশ বাবু জড়িয়ে ধরলেন শুভকে ।বললেন “তুমি আমাকে বাঁচালে বাবা। অনেক অনেক আশীর্বাদ করি তোমাকে। শুভর কথা শুনে আস্বস্ত হলেন তিনি।শুভ অন্তরার ঘরে ঢুকল।মুখের সব রক্ত যেন কে শুষে নিয়েছে অন্তরার ।বিবর্ন দেখাচ্ছে ওকে ।ওকে দেখে খুব কষ্ট হলো শুভর ।খুব আস্তে আস্তে শুভ বললো অন্তরাকে,”আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই অন্তরা । ভেবোনা আমি দয়া করছি তোমায়। আমি তোমাকে ভালো বাসি অন্তরা।সেই ছোটবেলা থেকে। আমি তোমাকে সুখী দেখতে চাই । তুমি আমাকে ফিরিয়ে দিওনা।”অন্তরার মনে হয় ঈশ্বর প্রেরিত দূতের মতো যেন শুভ আজ এসে দাঁড়িয়েছে তাদের পরিবারের সম্মান রক্ষার জন্য।মিথ্যে ভালবাসার ফাঁদে পড়ে কি সর্বনাশটাই না হতে যাচ্ছিল তার । ঘৃণা হলো অয়নের প্রতি তার ।সে সঁপে দিলো নিজেকে প্রকৃত ভালোবাসার কাছে।বাড়িতে বেজে উঠলো সানাই । অবিনাশ বাবু খুব খুশী। অবিনাশ বাবুর স্ত্রী বার বার ঠাকুরকে ডাকছেন আর বলছেন “তুমি আছো ঠাকুর তাইতো শুভর মতো ছেলেকে জামাই হিসাবে পেলাম ।তুমি আছ বলেই আমার মেয়েটা বিপদ থেকে রক্ষা পেল ঠাকুর। ধুমধাম করে বিয়ে হল শুভ আর অন্তরার। শুরু হলো তাদের সুখের জীবন।