সপ্তমীর সকাল। সাড়ে দশটা বাজে। পাড়ার মন্ডপের সামনে সাজ সাজ রব। করোনা চলছে। মন্ডপে নো-এন্ট্রি হয়েছে। তবু উৎসাহে ভাটা পড়েনি। আজ অবশ্য উৎসাহের কারণ অন্য । এলাকার দরিদ্র মহিলাদের বস্ত্র বিতরণ হবে। আগেই পুজো কমিটির সদস্যরা স্লিপ দিয়ে এসেছে একশ জনকে। আজ সব গণ্যমান্যরা বস্ত্র বিতরণ করবেন। যথা সময়ে বিতরণ শুরু হল। ধাক্কা খেল বিমলার সময়।
“এই বিমলা তুই তো বিধবা, রঙিন শাড়ি নিবি?” বছর চল্লিশের বিমলাকে প্রশ্ন করল পুজো কমিটির এক মহিলা সদস্য।
” কেনও নেব না দিদি, আমার মেয়ে পড়বে ।ও গ্রামে থাকে, এখানে আসে না।” বিমলা ওই মহিলাকে বলল।
কথাবার্তা ওখানেই শেষ হল। বিমলা শাড়ি পেল। লাল রঙের ফুল ছাপা। বেশ পছন্দ হল ওর। শাড়িটাকে বুকে জড়িয়ে যেখানে রোজ ভিক্ষা করে সেখানে গিয়ে বসল।
বিমলার পাশে বসে ভিক্ষা করে টেপির মা। ওরও বয়স প্রায় পঁয়তাল্লিশের মত। বহু দিন ধরে বিমলাকে চেনে। কিন্তু কখনও ওর গ্রামের বাড়ি যায়নি। তাই শাড়ি বিতরণের সময় ওখানে থাকলেও ও কিছু বলেনি।
“বিমলা তোর যে গ্রামে একটা সমর্থ মেয়ে আছে বলিসনি তো কখনও!” ফাঁকা পেয়ে জানতে চাইল টেপির মা।
” কাউকে বোল না দিদি আমার কোনও মেয়ে নেই, একটাই পনেরো বছরের ছেলে।” ফিসফিস করে বিমলা উত্তর দিল।
” তবে , তুই তো বিধবা ,লাল শাড়ি পড়বি !” অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল টেপির মা।
বিমলা টেপির মা-র কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল ” না গো দিদি আমি বিধবা না। আমার স্বামী গ্রামে থাকে, লোকের জমিতে মজুরি খাটে। ওই টাকায় কী সংসার চলে বল! তাই তো শহরে আমায় ভিক্ষা করতে পাঠিয়েছে।এই জায়গাটা ওই ঠিক করেছে। এখানকার লোকেরা না সধবাদের থেকে বিধবাদের বেশি ভিক্ষা দেয়, আমি দেখেছি গো। তাই তো আমি বিধবা সেজে ভিক্ষা করি ।”