কবি তুমি // ড. সুজিতকুমার বিশ্বাস
নিঃশব্দ সমুদ্র থেকে তীব্র দিব্যদ্যুতি-
শব্দের মালায় গাঁথা, গূঢ় রূপরেখা;
উজ্জ্বলের সৃষ্টিকর্তা দেবরূপে দেখা,
যেখানে লুকানো আছে তীব্র অনুভূতি
আনন্দে মগন তুমি প্রিয় সৃষ্টিস্থিতি !
সময়ের মুখোমুখি চিরন্তন লেখা
এমনই প্রতিজ্ঞ তুমি কল্পরূপে শেখা-
উদ্ভাসিত স্বপ্ননীল আলোকপ্রিয়তি।
কবি তুমি, প্রিয় কবি- শব্দ ব্রহ্মসার
অলঙ্কারে ভাষাবোধে অনন্য সে ঋষি;
প্রকৃতি বুকেতে আসে দুঃখেতে শ্রাবণ-
শব্দের আলোক সাথে মুখ মালিকার
ছন্দোবদ্ধ পদে তুমি সবার প্রেয়সি;
তোমার চোখের পরে বিষাদ প্লাবন।
.
পাঁচ পয়সার জীবন // ফরহাদ হুসেন
যে জীবনের পাঁচ পয়সা দাম নেই।এমন একটা জীবনের মালিকানা
আমার হাতে।মৃত্যু আসবে বলে
জীবনটাকে পাঁচ পয়সা বলছি না। সেটা স্বাভাবিক।আমার যেমন
আসবে,কিট-পতঙ্গদেরও তেমনি
আসবে ।অমরত্ব কারোর নেই……
তবে,
কিট-পতঙ্গদের সঙ্গে আমার একটু ফারাক আছে।
তাদের সংখ্যায় অধিক পা।আমার মাত্র দুটো!কি করে পেরে উঠি?
তাইতো আজ কাল তারা
ঘেনঘেনিয়ে,পেনপেনিয়ে কত কথাই না শুনিয়ে যায়।
পাঁচ পয়সার জীবন!তাতেই কত আশা!আজকাল মনে হয় আশা
অভিমানী প্রিয়তমা।যে আক্ষেপর
সুরে বলে-
“তুই পাবিনা রে পাবিনা।আমাকে কোন দিনেই পাবিনা।একটু
একটু করে দূর থেকে দূরান্তে চলে
যাচ্ছি তোকে ছেড়ে।”
আশার চোখে জল!
বারবার ডাকতে ডাকতে ছিঁড়ে যায় কন্ঠবীণার মধুর তান।
ব্যর্থতার গান…
রংহীন চোখ,তবু আশা আবছা ভাসমান!
.
পিড়িং পিড়িং – ১৮ // মাধব মন্ডল
বলেছিলি যেটা যেটা
এনেছি তো সেটা সেটা
তবু কেন হাসি নেই!
মনে তোর বাঁশি নেই?
অ থেকে ক সব দোকানে
এর চেয়ে ভাল কই?খোকা নে
ঠিক আছে,কাল হোস সঙ্গী
নে নে সব তোর হোস নারে জঙ্গী!
.
মেঘবন্ধু // (হাতে খড়ি ২) // শিশু সাহিত্য
রণেশ রায়
গভীর জঙ্গলে ময়ূর আর শেয়াল দুই বন্ধু। রোজ বিকেলে গাছের নিচে এসে গল্প করে। সে কত গল্প ! বাঘ বাঘিনীর গল্প সিংহ সিংহীর গল্প। সাপ নেউলের গল্প। এমনি করে তাদের চলে। বাঘিনী দূর থেকে দেখে। কখনও কখনও মেঘ ডাকে আকাশে।
ময়ূরকে ডাকে। ময়ূর কত খুশি। সে পেখম মেলে নাচতে থাকে। মেঘ বৃষ্টি হয়ে নামে। মযূরের হাত ধরে নাচে। শেয়াল তার তালে তালে ডুগডুগি বাজায়। জঙ্গলে নাচ গানের মেলা। বাঁদর ভোঁদড় খরগোশ। আর কতরকম পাখি। যে যেখানে থাকে দৌড়ে আসে।
বাঘিনীর সব দেখে রাগ। সে নিজে থেকে কেন যাবে ! ময়ূরের যত ভাব শেয়ালের সঙ্গে ! ওর হিংসে হয়। আর সে তো জঙ্গলের রানী। তার কত শক্তি, কত সম্মান। সবাই তাকে ভয় করে। তাকে নেমন্তন্ন না করলে সে নিজে থেকে যাবে কেন? সে রাগে ফোঁসে। আসলে ময়ূরকে ওর খুব পছন্দ। ও ময়ূরকে বিয়ে করতে চায়।
একদিন শেয়ালের খুব জ্বর। ময়ূর চলেছে বদ্যির বাড়ি। জঙ্গলের ওই প্রান্তে। রাস্তায় বাঘিনী তার রাস্তা আগলে ধরে। ময়ূর কি করে ! বাঘিনী বলে:
—– তুই শেয়ালকে ছেড়ে আমার কাছে আয়। আমরা বিয়ে করে সুখে সংসার করব। আর বাঘকে পাঠিয়ে দেব শেয়ালের ঘরে।
বাঘিনীর আর দোষ কোথায়? ময়ূর এতো সুন্দর ! পেখম মেলে নাচে। ময়ূরী নাচতে পারে না। নাচে ময়ূর। জঙ্গলের রাজ্যে সে কত সুন্দর ! তাকেতো সবার পছন্দ হবেই। ময়ূর ভয় পায় ! এখন কি করে বাঁচবে? সে বুদ্ধি করে পেখম মেলে নাচতে শুরু করে। বাঘিনীতো পাগল। তার কথা বন্ধ হয়ে যায় । শান্ত হয়ে বসে নাচ দেখে।
আকাশ থেকে মেঘ দেখে বোঝে ময়ূর নিশ্চয়ই বিপদে পড়েছে। নইলে অসময়ে ময়ূর বন্ধু নাচে কেন ? সে তো ডাকে নি। সে না ডাকলে ময়ূর নাচে না তো ! মেঘ বন্ধু বৃষ্টিকে সঙ্গে নিয়ে নেমে আসে। ঝম ঝম শব্দে বৃষ্টি এতো জোরে পড়তে থাকে যে বাঘিনীর চোখ ঝাপসা হয়ে ওঠে। সে অন্ধকার দেখে।
এই ফাঁকে ময়ূর মেঘবন্ধুর ডানায় উঠে বসে। মেঘবন্ধু তাকে উড়িয়ে নিয়ে যায়। বৃষ্টি বিদায় নেয়। বাঘিনীর দৃষ্টি ফিরে আসে। কই ! ময়ূর কই ! সে রাগে ফুঁসতে থাকে। বৃথাই তার হালুম হুলুম।
মাটির সুরে // বিশ্বনাথ পাল
.
হৃদয় পুরে
একটি গানই বাজে।
দ্বিধাদ্বন্দ্বে
ভাল মন্দে
সাজো নতুন সাজে।।
মাটির গন্ধে
জীবনানন্দে
ভরপুর হও সব
মাটির দোলায়
জীবন জুড়ায়
মাটির ই উৎসব।
মাটির কাছে
যারাই আছে
তারা মাটির লোক।
মাটির জন্য
জীবন ধন্য
মাটিই মোছে শোক।
মাটির কারণে
আপন মরণে
যারা আলো দেখায়
তাদের কথা
মর্মে গাঁথা
মহাকালের পাতায়।।