একটা প্রতীকী ছোট্ট গল্প
আপনি মধ্যবিত্ত ছা-পোষা সাধারণ
” ফ্যামিলি ” প্রিয় মানুষ – বিগত কুড়ি দিন ঘরে বসেই সরকারের নির্দেশ – বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ যথাযথভাবে পালন করেছেন… কিন্তু আজ যে ১লা বৈশাখ …
আজও কি নিত্য দিনের মতো ডাল চচ্চড়ি ভাত ?
তাই সাতসকালেই আপনি গিন্নিকে বলে বাজারের থলে হাতে রয়না দিলেন বাজারে …
বাজারে গিয়ে দেখলেন শয়ে শয়ে লোক লকডাউন অগ্রাহ্য করে বাধা -নিষেধ না মেনে কেনাকাটায় ব্যস্ত …কারণ পহেলা বৈশাখ-নববর্ষ বলে কথা …
আপনিও তাই দশটা পাঁচটা দোকান ঘুরে মাছ- মাংস – দই- মিষ্টি শাক-সবজি কিছুই বাদ দিলেন না … যাকে বলে দুহাত খুলে হাট- বাজার করলেন
বাড়িতে ফিরে এলেন যথাযথ –
তারপর মহাভোজ ….সকলের মুখে হাসি ধরে না !
গৃহিণী ও হাসি হাসি মুখ করে সকলকে পরিবেশন করতে লাগলেন -আপনার সাত বছরের ছোট্ট মেয়েটি আপনার গলা জড়িয়ে ধরে একটা চুমুও দিলো …
সদ্য মাধ্যমিক দেওয়া একমাত্র ছেলে বললো- বাবা ইউ আর গ্রেট …কত দিন যে এ সব খাইনি… কি যে ভালো লাগছে !
আপনি ও মনে মনে খুব সুখ পেলেন আনন্দ ও পেলেন !
এবারই গল্পের শুরু ….
এরই মধ্যে আবার দিন পাঁচেক বিরতি দিয়ে সরকার আরো ২১ দিনের জন্য লকডাউন ঘোষণা করেছেন …
এদিকে সপ্তাহখানেক পর আপনার সর্দি সামান্য জ্বর জ্বর ভাব –
সময় খারাপ বুঝে আপনি ছুটলেন ফ্যামিলি ডাক্তার বাবুর কাছে !
ফ্যামিলি ডাক্তার বাবু ভালো বুঝলেন না… সামান্য কটা অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে আপনাকে সরকারি হসপিটালে যাওয়ার পরামর্শ দিলেন !
পরের দিনই আপনার স্ত্রীকে সঙ্গে করে গেলেন স্থানীয় মহকুমা হাসপাতালে… গিয়ে দেখলেন অসংখ্য মানুষের ভিড় …
কিন্তু করোনা পরীক্ষার কিট- প্রায় নেই বললেই চলে- অগত্যা তাঁরা আপনাকে ট্রানস্ফার করলেন এ-মআর বাঙ্গুর হসপিটাল …
অনেককে হাতে-পায়ে ধরে একটি গাড়ি ভাড়া করে আপনি উপস্থিত হলেন বাঙ্গুর হসপিটালে…
করোনার উপসর্গ থাকায় সেখানে আপনাকে এডমিশান করে নেওয়া হলো !
আপনার স্ত্রীকে ডাক্তার বাবুরা কিছু প্রশ্ন করে – বললেন রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত কিছু বিধি নিষেধ পালন করারও নির্দেশও দিলেন …
আপনার স্ত্রী বিষন্ন মনে বাড়ি ফিরলেন এ-কা- এ-কা …
ততক্ষণে গ্রাম্য পাড়া-প্রতিবেশীরা জেনে গেছে আপনার অসুস্থতার খবর …আপনার ছেলে মেয়ে দুটি ঘরে তালা বন্দী …সকাল থেকে খাবার জোটে নি তাদের !
পাড়া-প্রতিবেশী আপনার ঘর মুখো হয়নি কেউই… এমনকি নিজের দাদা ভাইয়েরা ও নয়… বন্ধুবান্ধব তো কোন ছাড়…
এতদিন আপনি যাদের সঙ্গে আড্ডা মেরেছেন- রকে বসে গল্প করেছে
আত্মীয়তা বজায় রেখেছেন যথাসাধ্য !
সময় যে বড়ই অসহায় …
এই পরিস্থিতিতে কেই বা জীবনের ঝুঁকি নিতে চায়?
দুদিন পরে আপনার রিপোর্টে ” করোনা পজেটিভ” এসেছে তাই সরকারের পক্ষ থেকে আপনার ফ্যামিলির লোকজন- স্ত্রী ছেলে মেয়েকে এক জায়গায় স্থান সংকুলান না হওয়ায় বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করেছে ..
এই পর্যন্ত খবর আপনি শুনেছেন এক আত্মীয়ের কাছে … ব্যাস এই টুকুই-
আপনি শুধু বেডে শুয়ে শুয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলছেন আর মৃত্যুর দিন গুনতে গুনতে ঈশ্বরকে দোষারোপ করে কাঁদছেন আর বলছেন হাই ঈশ্বর কি করলেন আমাদের ?
গল্পটা আর একটু বাকি …..
এদিকে আমাদের রাজ্য তৃতীয় স্তরে পৌঁছে গেছে অর্থাৎ কোথা থেকে করোনা ভাইরাসটি ছড়াচ্ছে তার উৎপত্তিস্থল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না !
হাজার হাজার রুগী আসছে-যাচ্ছে মৃত্যু হচ্ছে অবিরত …কিন্তু আনন্দের বিষয় আপনি সুস্থ হয়ে উঠেছেন .. আগামীকালই আপনাকে ছুটি দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ডাক্তারবাবুরা !
যথারীতি সরকারের গাড়ি সরকারি লোক এসে আপনাকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে গেছে!
কিন্তু সামান্য জল টুকুও গড়িয়ে দেবার লোক জনের পাত্তা পাওয়া দায়…
ব্যাংক থেকে লোন নেওয়া আপনার স্বপ্নের বাড়িটা যেটার ই-এম-আই এখনো বাকি- হ্যাঁ সেই স্বপ্নের বাড়ী খাঁ-খাঁ করছে …
আত্মীয় পরিজন ছেলে-মেয়ে স্ত্রী কেউ নেই … আপনি একা- একা আর একা…
পড়ার সেই কুকুর টা.. আপনার ছোট্ট মেয়েটি যাকে লালি বলে ডাকত – যে প্রতিদিন দুপুরে অটো- কাটা খেতে আসতো.. তার ও পাত্তা নেই…
চারিদিকে মৃত্যুর ছায়া …
কারা যেন ওত – প্রোত ভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে আপনার চারিদিকে… !
নিজের মৃত্যু ভয়ে ভীত আপনি নন … ভয় পাচ্ছেন আপনার মেয়ে -ছেলে- স্ত্রী বাড়ি ফিরবে তো ?
এই চিন্তা দিনরাত আপনাকে পাগল করে তুলছে…. !