রি-একশান
মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ
————————–
কাজেম বাউলের সামনাসামনি হোলো নেয়ামত চেয়ারম্যান ।
বাউলের তারে তারে কী যেন ইশারা দেয়,আর গাঁও-গেরামের নারী,পুরুষ,শিশুরা নাচতে থাকে। অনবদ্য সে নাচনে আকাশের মেঘ ডাকে,শিম-পুঁইয়ের মাচায় সাতরঙা প্রজাপতিরা নাচে।নদীগুলোর ওপর দিয়ে বহমান উকিল মুন্সির গান, সরু লালচে মেঠোপথের খানাখন্দের বাধা ডিঙ্গিয়ে পেরোয় সোলমানের মহিষের গাড়ি।
অতসীকন্যারা সলাজ চোখে সোলমানের কন্ঠের ভরাট ভাওয়াইয়াশোনে।বুকের ভেতরে অধুনালুপ্ত ঢেঁকিকলের ধাপ্পুর –ধুপ্পুর ফিরে ফিরে আসে।
মহিষের গাড়ি থেকে মালামাল নামছে।বাদ্যযন্ত্র।পোশাক- আসাক,তাঁবু,।সঙ্গে নামছে কাজেম বাউল, শিষ্যরা। সদস্যদের ব্যস্ততার মধ্যেই মাছের মতো কেউ কেউ ভোঁস করে দম নেয়।
মাইকম্যান ফিরে এসেছে।শহরে মাইকিং হয়েছে,আইজ রাইতে, জীয়নপুর হাইস্কুল মাঠে কবির লড়াই —খবর রাখেন কী,আর জানেন কী?…..
একগাদা পঙ্গপালের মতো শিশু পেছনে।হাড় জিরজিরে। পুঁইয়ে পাওয়া।চোখে,মুখে কেবল ক্ষুধার যন্ত্রণাকর দৃশ্য।
কাজেম বাউল দলবলসহ তাঁবুতে ঢুকে গেছে।একজন লোক এসে চিঠি রেখে গেছে।
বার বার চিঠিটা পড়লো।কিন্তু কেন?…বাউলগান হলে কী সমস্যাটা? নিজেকে বোঝাতে পারছেনা।কারন গত বিয়াল্লিশ বছরের লাগাতার বাউল উৎসবে গান গেয়ে এসেছে।তার জন্যই গ্রামের এই চৈতালিতে যখন খরখরে কপালের দুঃখগুলো দুরে মিলিয়ে যেতে শুরু করে।গ্রামের মেয়েরা বাপের বাড়ি আসে।স্কুলের শিশুরা মুখিয়ে থাকে–কখন রাত হয়,আর কাজেমের দোতারায় বেজে উঠবে মন তাতানো বিচ্ছেদ।
আজকের চেয়ারম্যান সাহেব এ কী বলছেন!….বাউল গান হবেনা!সমাজটা নাকি পাপে জর্জরিত।পাপ মুছতে হবে।গ্রামের মেয়েদের ঘোমটা বাড়াতে হবে।রাস্তাঘাটে মেয়েরা বেরিয়ে পড়ছে।এটা থামিয়ে ওদেরকে রান্নাঘরে ফেরত পাঠাতে হবে।…
কাজেমের ইচ্ছে ছিলো বলে
দেয়
চেয়ারম্যানকে–
গেলোবার আপনেরা গরীবের চাউল চুরি করলেন তখন ঐটা পাপ ছিলোনা?পিঁয়াজ ইস্টক দিয়া তিনশো ট্যাকা কেজি দরে পিঁয়াজ কিনাইতে বাধ্য করলেন, রাইতের আন্ধারে কত কী করলেন, রহিম শেখের শিশুডারে রেপ করলো আপনের ভাইস্তা তহন কি পাপ হয়না—?
কিন্তু গলায় জোর আসেনা।চারদিকে ভাইরাস।বেশি কথা বলতে বারণ।কারন চেয়ারম্যানই বাউলদের ভাড়া করে।টাকা পয়সা ম্যানেজ করে দেয়।তার কথা না মানার শক্তি তো কাজেমের নেই।
একবছর পর।
একটা মিনিট্রাক এসে গ্রামে ঢুকেছে।রাস্তাঘাট ভালো।মোড়ের দোকানে দোকানে এল,ইডি লাইট জ্বলে।টিভি চলে।আর ওয়ানটাইম কফি চলে প্লাস্টিকের কাপে।
মিনিট্রাকের লবেজান শরীর।নিজে হাঁপাচ্ছে।কাজেমরা
অবসন্ন শরীরটাই টেনে হিচড়ে চলে বিষাদ সড়কে। কেউ কেউ বলেন, আপনাকে আমরা খাওন, পিন্দন করাই।সুতরাং—-
এই ‘সুতরাং পাট্টি’ অবয়বে বিনম্র,লাইটিঁং এর রোশনাইযুক্ত হবে।আপনার কিছু বলার অপশন নাই।আমরা যা বলব,তা ই শুনতে হবে।
ট্রাকের ওপর থেকে গোটা দশেক চ্যাংড়া ছেলে নামছে।এলইডি টিভি,ফ্যান নামছে।ছোটখাটো বিল্ডিং যেন সাউন্ডবক্স গুলো।আর লাইটিংএর সর্বা্ত্মক চেষ্টা।চারপাঁচটা মাইক্রোকার স্কুল মাঠে।কনসার্ট হবে।সংস্কৃতি কী—সেটা বুঝিয়ে যাবে গ্রামবাসীকে।গান কাকে বলে সেটা অনুধাবন করবে সবাই।
কেবল হার্টে রিং পড়া তালেব মাস্টারের ঘুম হবেনা।রফিকুলের সিজার করা শিশু বাচ্চাটা ড্রামসেটেের শব্দে জেগে উঠবে চিৎকার করে।
চেয়ারম্যান নিজেই তদারকী করছে।অজানা আনন্দে উৎফুল্ল গ্রামবাসী। আজকে কোনো ডায়রেক্ট একশান নেই।
থাকলে বিপদ
মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ