রবাহুত কাল থেকে তুমি হৃদয়ের কাছাকাছি

shrutisahitya.com


রাস্তা ও আমি // মাধব মন্ডল

এতটা দিন রাস্তায় কেটে গেল

প্রয়োজনে হাঁটলে ছুটলে

কেউ কেউ খুঁড়লেও

দেখছি চলছি বলছিও।

বাকিটাও রাস্তা গিলুক

দুব্বো ঘাসের ঝোপে সার সার পিঁপড়ে

একটা দু’টো উচ্চিংড়ে উশখুশ করে

শাঁখের শব্দের সঙ্গে তারাও বেজে ওঠে।

আমারও নিজের কিছু শব্দ ছিল

ক’টা শব্দ শোনারও ছিল

কেউ কোনোদিনও বলেনি এগিয়ে

উপযাজক হয়ে আমিই বললাম আকাশ মাটি পাতালকে।

ও আকাশ ভালবাসো

ও মাটি ভালবাসো

ও পাতাল ভালবাসো

একথা শুনেই থতমত খেয়ে গেল তারা।

আমি যে আমি আত্মবিশ্বাসী

ধীরে ধীরে পাথর হয়ে গেলাম

কখন যেন আমিও একটা রাস্তা হয়ে গেলাম

এসো আকাশ মাটি পাতাল এসে খেলো।

আমার কথারা বুকের পাথরে চাপা থাক

তোমাদের চাবুক কিংবা ঠোঁটের লালা

গরম বা ঠান্ডা শরীরের লোম

হঠাৎ ওঠা শরীরী ঝড় খেলুক এ রাস্তায়।

সেই ছোটবেলার মত ঘুম ডাকি

এক থেকে একশো গুনি উল্টো

গুনেই চলি অস্থিরতা

অস্থিরতা আঁক কাটে চোখে আর বুকে।

.

প্রিয় নারী   – নাসির ওয়াদেন

রবাহুত কাল থেকে তুমি হৃদয়ের কাছাকাছি

তুমি দাঁড়, আমি মাঝি

পরপারে যাবে আমাদের অভিলাষ,

প্রিয় নহলি ঘাস,,,

হাসিটুকু সূর্যের আলো ভেজা তৃণপত্র

জ্যৈষ্ঠের ঝড়ে উড়ে যত্রতত্র

বুক দুরুদুরু, অভিসার পথে হাঁটে

প্রিয় নারীর রাত জেগে নিশি কাটে

কত জমানো দুঃখ, আনন্দ, ভালবাসা

জলজ প্রত্যয় নিয়ে নিশ্চিত বাসর খোঁজে

আজও  বিশ্বাস নিয়ে আছে  সে যে …

.

রুক্ষতা ঢাকি   //মলয় অধিকারী

সিলভিয়া ….স্পদ্মন কেমন স্টেথোস্কোপ চেপে বেকে বসে দেখো,দশম মলাটে

তোমারএপ্রিল অবেড ,আমি আবার প্রতারিত হই,এক আলোক জারজ……অফস্প্রিং ,

সাদা ভেসলিনে শীতের রুক্ষতা ঢাকি, অপেক্ষার উন্মেষ…..নকটারনালে আবির

খেলছে,মধ্য গগনে উন্মাদ হাসি,

.

বাঙ্গালী নারী

নন্দিত নন্দিনী নন্দিনী

আমি মুখ ফুটে কিছু বলতে না পারা অবলা এক নারী ,

প্রয়োজনে রূপ বদলে দিয়ে হিংস্র হতে পারি।

আমি শিশির স্নাত ভোরের শিউলি,অথই জলের কমল

আবার উদগিরিত লাভার মত উত্তপ্ত অনল।

আমি মুসলিম মেয়ে, বাংলার বধূ, ঘোমটা দিয়ে চলি

প্রয়োজনে নাঙ্গা তলোয়ারটাকে শত্রুর তরে তুলি।

আমি মায়ের কোলে লুটোপুটি করি আদরের সোনা মেয়ে

আবার দেশ হতে দেশে ছুটে বেড়াই আলোর মশাল নিয়ে।

যে দুই হাতে মেহেদী আঁকি পরি কাঁকন বালা চুড়ি,

সে দুই হাতে পাথর ভেঙ্গে সভ্যতাকে গড়ি।

নির্যাতনে নিঃশেষ আমি, যেন এ ধরনী মৃত্যুকুপ

আবার নির্যাতনের খড়গ হাতে অগ্নিমূর্তি রূপ!

আমি তিলে তিলে গড়া সুখের মোহটা

ছুড়ে ফেলে দিতে পারি

তবু অনেক যত্নে,মায়ার বাঁধনে, তাকে ধরে রাখি

হয়ে “অবলা নারী”।

মমতাময়ী মা যে আমি, কখন ও বা কার ও প্রিয়া

ভাবি বোন বন্ধু আবার কখন ও বা কালো ছায়া।

এত শত রূপে রূপায়িত আমি বিধাতার সেরা সৃষ্টি ,

কখনও বা পাই চরম হেলা কখনও বা শুভ দৃষ্টি

এটাই  বাঙ্গালী নারী   ।

.

অবসর নেই তার  //  রণেশ রায়

আলো আঁধারের মিলন মেলায়

দিনের অবসানে

বার্ধক্যের গোধূলি বেলায়

সে আজ

জীবনের  খেয়া ঘাটে ডিঙা বায়।

ক্লান্ত শ্রান্ত অবসর লগনে

অবসৃত হয়েও

অবসর কোথায় চলমান এ জীবনে?

শরীর চলতে চায় না, অবসর তার,

সময়ের ডানা বেয়ে

এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে

মনের চলন অবিরাম,

অবসর কোথায় আর ?

কাকে খুঁজে ফেরে সে,

কার সাথে কথা বলে,

কার সাথে সহবাস?

বার্ধক্যের এ বেলায়,

আজ নক্ষত্রের বাস

মনের অলিন্দে তার চাষ,

তার চেতনায় থাকে না বিরাম

নক্ষত্রের সে জগতে

চলাচল অবিশ্রাম,

উপলব্ধির মুক্ত গগনে উড়ে বেড়ায়

স্মৃতির রোমন্থন সে মুক্ত ছড়ায়

সমুদ্র মন্থন তার ভাবনায়,

স্মৃতির প্রস্ফুটন চেতনার কাননে

ভাবনা ডানা মেলে

সে ফিরতে চায় শৈশবের খেলা প্রাঙ্গনে।

অন্ধকার নিঝুম নেই কোন কোলাহল

পাখিরা ফিরে গেছে আলয়ে,

সমুদ্র তট ছেড়ে বিদায় নিয়েছে দূরে,

জঙ্গল নির্বস্ত্র নির্বাক, আকাশ উদাসীন,

দিনে সূর্যের বিদায় রাতে চাঁদ ফেরার,

পূর্ণিমার রাতে ঘোর তমসা,

তুমি আমি বসে বাতায়নে

নির্লিপ্ত নির্বিকার নেই কোন হুশ,

গৃহস্থের বাসায় লুঠেরার রাজ।

.

তবু আজও //  রণেশ রায়

সুকন্যা, আশা ছিল  আমার

তোমাকে পাব একদিন

কিন্তু পাওয়া হলো না আর,

হারিয়ে গেলে কোথায়

কোন সে অজান পাড়,

কথা ছিল রক্ত করবী ফুটবে এ জীবনে

রজনী গন্ধ্যার সুবাসিত রাতে

জীবন কাননের মহুয়াকুঞ্জে

মিলব এসে দুজনে,

উপহার দেব রক্তিম পলাশ তোমাকে

ঊষার আগমনে কোন এক নব প্রভাতে

আলিঙ্গনে জড়াবে তুমি আমাকে।

হলো না আর মেলা দুজনে

কোথায় যে হারিয়ে গেলে কে জানে,

তবু আজও আমি অপেক্ষায়

তোমায় পাব আমি

উদয়ের পথে  মুক্তির নিশানায়।

শুধু থাকি চেয়ে   // রণেশ রায়

আজ এই অম্লমধুর গোধূলি বেলায়

আমার ভাবনা আমাকে ফিরে পেতে চায়

শৈশবের সেই আনন্দ মেলায়

কৈশরের রোমাঞ্চিত জ্যোৎস্নার খেলায়,

চল চপলা  কিশোরীর ইশারায়

কে সে নীরবে পাশে এসে দাঁড়ায়

খুলে যায় আজও হৃদয়ের দরজা

ফিরে পেতে  চায় যৌবনের রণসজ্জা;

যৌবনের মহুয়াবনে আজও বিচরণ তার

মেলে এসে অঙ্গনে আমার

কাল বৈশাখির ঝড় তুফান তোলে

স্নায়ু জগতে ভাবনার দীপ জ্বলে

চেতনার দরজা খুলে যায় বার বার

তবু আমি নিরুপায় নির্বিকার

ভেসে চলি বার্ধক্যের খেয়া বেয়ে

নিশ্চুপ অচল আমি শুধু থাকি চেয়ে।

.

পার্বতী  // মাধব মন্ডল

যতগুলো ছুঁড়েছো গুলি

একে একে সব ক’টাকে বার করেছি

দেখো এসে

ওগুলো খেলনা বানিয়ে শুয়ে আছি পাশে!

এ চোখ তোমার চোখে গেঁথেছি

বুদ্ধের ঠোঁট থেকে হাসি কেড়ে লেপেছি এ ঠোঁটে

যা মন হয় ছোঁড়ো দেখি ছোঁড়ো!

কতদিন বলেছি তোমাকে

কোনওদিন দুষ্মন্ত বিস্মরণে ভুগবো না

তুমিও হয়ো না!

তোর বুকে অপরাজেয় থাকবোই আমি!

সবকিছু দিলি তুই কুন্ঠায় বা স্বেচ্ছায়

আমি শুধু তোর হয়ে থেকে যাবো বাকিটাকাল

এ আর কঠিন এমন কি!

তবুও ঐ হাতে অবিশ্বাস্য ছুঁড়ে গেলি গুলি

আরও যদি দস্যুতা থেকে থাকে তোর

চলে আয় তাড়াতাড়ি

দেখে যা রক্ত

তোরই তো রক্ত!

খেলা জমে যাক

হাততালি বুকতালি বাজুক উঁচুতে

ডিজেরা লজ্জা পাক

প্রচুর মাল গিলুক ন্যাড়া প্রেম রাস্তায় রাস্তায়!

আমি তবু খেলে যাব অবুজ গতিতে

মরবার আগে তোর মিষ্টি চোখ জল খাব

থমকানো নিঃশ্বাসে!

একটা তারিখ ডাক দেবে

দুড়দাড় ধুমধাড়াক্কা সব কিছু ছুঁড়ে

তুই আসবি জানি শেষ শ্বাসে

পার্বতী রাত জাগে সব কালাকালে!

.

আমার সমর্পণে  //এরসাদ আলী

আমি ক্লান্ত পথিক এক, চতুর্দিকে ব্যস্তদুনিয়ার মানা

আমি দুদন্ড শান্তি চেয়েছিলাম তোমার পানে চেয়ে – সোহানা।

পাল ছিঁড়েছে যে নাবিকের, সেই বোঝে দখিনা হাওয়া,

সেই মাঝিরই অবরুদ্ধ শ্বাসে আমার তোমাকে চাওয়া।

উষ্ণ কালো মেঘের এক চিলকে চমকানি, ঘটায় শিহরণ

আমি নীড়ের মধ্যে চেয়ে রই ঠিক তেমনি, অবাধে নির্জন।

আমি নিয়েছি গোধূলির সবুজ ঘাসের এক টুকরো শিশিরের ঘ্রাণ,

‘অবাধে-আচরণে মূল্যহীন এই পথিক’- যার নেইকো কোনো প্রাণ।

আমি কৃষ্ণ চূড়ার মুখফলকে দেখেছি তিতলির হানা

আমি সত্যি দুদন্ড শান্তি চেয়েছিলাম তোমার কোলে- সোহানা।

কুয়াশাভরা রাতে, শীতের প্রহরে তেপান্তরের দর্পণে

আমি দেখেছি একটুকরো শিশিরে তোমার পথ, আমার সমর্পণে।

অতি দূর ক্লান্তির পথ, হাল ভেঙে ছিঁড়েছে পথের দিশা

পাখির কলরবে তেমনি জেগে ওঠে এক স্নেহভরা ভালোবাসার পিপাসা।

মরুভূমির ওই বিভীষিকা মিশে যেমন ধুলার ধেয়ে,

তেমনি চলে ছলনা আমার তোমার পথ চেয়ে।

পথ চেয়ে রয় চাতক যেমন বৃষ্টির খোঁজে অবান্তরে,

আমি জেগে রই নিশীথে ওই চাতকের মতো করুনার সীমান্তরে।

ঘুরে ফেরি ধোঁয়াশাভরা আঁধারে, মেতেছি কর্মে নানা

আমি নিশীথে দুদন্ড শান্তি চাই তোমার কথোপকথনে -সোহানা।

  ( সংগ্রহীত: ভোরের দোয়েল )

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *