দীনদয়াল বাবুর বড় ছেলের গত পৌষ মাসে পুত্র সন্তান হয়েছে আর বড়লোকদের ছেলেপেলে হলে তাদের দেখার জন্য দু একটা নতুন চাকর-বাকর লাগে। তাই আমার পরিচিত একজনকে তারা তাদের সদ্যোজাতকে দেখার জন্য নিয়োগ করলো।
সে কাজের লোক বড় কামাই করে তাছাড়াও কাজের লোকের নানান অজুহাত লেগেই আছে আজ এটা তো কাল ওটা আর বাহানা তো কোন শেষ নেই কিন্তু মাসের শেষে মাইনার বেলা তখন কোন কামাই নেই, তাই আমায় তিনি বলে নতুন একটা অল্প বয়সী মেয়ে দেখে দেওয়ার জন্য তাদের বাচ্চাটাকে দেখাশোনার জন্য।
আমি এদিক ওদিক ভেবে দেখলাম আমাদের ও পাড়ার লকাই এর মেয়ে তো একটা মেয়ে কাজের কথা আগেই বলেছিল তাই ওকে একবার বলে দেখি, সেইমতো ওকে বলতেই ও এক কথায় রাজি হয়ে গেল তিনজন বাবুর বাড়িতে কাজ করতে। লকাই এর মেয়ের ভালো নাম হলো সুচন্দ্রা যদিও পাড়ার লোকে ওকে চন্দ্রা বলেই ডাকে।
বাচ্চা দেখার কাজেও প্রথম,আগে যদিও মায়ের সাথে ঘরের কাজ করলেও বাচ্চা দেখার কাজ ওর জীবনে প্রথম, তাই খানিকটা ভয় ভয় ও দীনদয়াল বাবুর বাড়িতে কাজ শুরু করলো তাছাড়া দীনদয়াল বাবুরা এমনি খুব ভালো মানুষ, চন্দ্র খুব একটা বয়স না বলে দিন্দয়াল বাবুরা তাকে নিজেদের মেয়ের মতোই দেখতে। চন্দ্রকে একসঙ্গে নিয়ে খেতে বসা থেকে শুরু করে কোথাও গেলে সঙ্গে করে নিয়েও যেত ওকে।
দীনদয়াল বাবুর নাতির ওকে দেখতে দেখতে ওর সাথে বেশ খোশমেজাজেই থাকতো কে জানে হয়তো শিশুমন ওকে নিজের দিদি ভাবতো। চন্দ্র বাচ্চাটিকে নিজের ভাইয়ের মত মনে করত তাই কখনোই বাচ্চাটিকে নিজের কাজ ছাড়া করত না। এমনকি চন্দ্রা বাড়ি ফেরার সময় রাতে যতক্ষণ না বাচ্চাটা ঘুমতো ততক্ষণ সে বাড়ি থেকে বের হতো না, সকালে নিজের বাড়ির কাজ সেরে তাড়াতাড়ি চলে যেত দিন্দয়াল বাবুর বাড়িতে সেই বাচ্চাটির কাছে।
সত্যি এতদিন পর যেন দীনদয়াল বাবুর একটা মনের মতন কাজের লোক পেয়েছে তাই চন্দ্রকে মাঝে মধ্যেই সে কিছু টাকা দিত খাবার খাওয়ার জন্য, তাছাড়া বাড়ির সবাই ওকে খুব ভালোবাসতো এবং বিশ্বাসও করতো, এক টাকাও বাড়ির আনাচে কানাচে পড়ে থাকলেই সেটা ফিরিয়ে দিত।
সারাটা ক্ষণ শুধু বাচ্চাটাকে নিয়ে মেতে থাকতো বাচ্চাটাও বাড়ি যে কারো কাছ থেকে চন্দ্রার কাছেই যেন বেশি ভালো থাকতো, চন্দ্রা কখনোই কোন অন্যায়ের পাশে থাকে না এবং সে নিজেও করে না, সেই কারণেই একবার এক কাজের লোক মালিকের জামার পকেট থেকে টাকা পেয়ে সেটা সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে আর সেটা চন্দ্রা দেখতে পেলে, সেই কাজের লোক চন্দ্রা কে ভাগ দিতে চায় এবং চন্দ্রা তাতে রাজি না হয় উপরন্তু সে বাবুকে জানিয়ে দেয় সব ব্যাপারটা, এই ধরনের নানান ঘটনায় চন্দ্রা দীনদয়াল বাবুর বাড়ির প্রত্যেকটা সদস্য মনে অন্য একটা বিশ্বাসের জায়গা তৈরি করে নেয়।
চন্দ্র যেন দিনেদিনে ঘরের লোক হয়ে উঠেছে বাচ্চাটিও দিনে দিনে বেশ বড় হয়ে উঠেছে বাচ্চাটির নাম হলো রতন, সে এখন বেশ হাঁটতে চলতে পারে এবং ভালই কথা বলতে পারে, প্রতিদিন বিকেলে নিয়ম করে তারা একসঙ্গে বাগানে ঘুরতে যায় কখনো আবার খেলার মাঠে খেলতে যায়, আর ছন্দ এখন আগের থেকে বেশ বড় হয়ে গেছে, বছর দু আড়াই হয়ে গেল এই বাড়িতে।
আরে এখনও অন্য কাজের লোকটা চন্দনারে সত্য বিচারের জন্য তাকে সবসময় মিথ্যে অপবাদ দিতে প্রস্তুত হয়ে আছে, কিন্তু যে যাই বলুক না কেন চন্দ্রা দিন্দয়াল বাবুর বাড়িতে এক অন্য জায়গা করে নিয়েছে তাই যতই অপবাদ দিক না কেন তার কোন অংশেই খামতি পরেনা চন্দন ভালোবাসায়।
আর রতন সবকিছুতেই চন্দাকে পেতে যায় সে যেন চন্দ্রকে দুচোখে হারায়, সময়ের স্রোতে ভাসতে ভাসতে অনেক দিন কেটে গেছে কেটে গেছে বেশ কিছু বছর, রতন এখন স্কুলে ভর্তি হয়েছে, কিন্তু চন্দ্রকে তাও হাতছাড়া করেনি রতন, স্কুলে যাওয়া থেকে আসা অব্দি রতন চাকরি চাই। স্কুলে গিয়ে মাঝে মাঝে বাইরের গাছের তলায় চন্দ্রা বসে আছে কিনা সেটাও লক্ষ্য রাখে রতন।
ওদিকে চন্দ্রা অধীর আগ্রহে স্কুলের জানালার পানে চেয়ে থাকে কখন ভাই এদিকে দেখবে সেই আশায়, স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার সময় দুই ভাই বোনের খুনসুটি দুষ্টুমি তো লেগেই আছে আর তার জন্য মাঝে মাঝে খেসারত দিতে হয় দিন্দয়াল বাবুকে।
কারণ ওরা যে মাঝেমধ্যে লোকের বাগানে ঢুকে তাদের ফলমূল না বলে নিয়ে চলে আসে, অনেকবার বারণ করা সত্তেও কোনো কাজ হয়নি কিছু দিন বন্ধ থাকলে আবার তারপরে ঠিক চালু হয়ে যায় ওদের পুরনো কাজ, একবার স্কুলে রতনের মাথা ফেটে গিয়ে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছিল, কিন্তু চন্দ্রা নিজের রক্ত দিয়ে ভাইকে সুস্থ করে তুলেছিল, সত্যি রক্তের সম্পর্কের না হয়েও এটা অন্য ধরনের টান এটা হয়তো ভালোবাসার টান।
আরো বড় হয়ে গেছে ওরা দুজন আগের থেকে রতন এখন প্রাইমারি স্কুল ছেড়ে সেকেন্ডারি স্কুলে উঠে এসেছে এখন পড়ে পঞ্চম শ্রেণীতে, তবুও চন্দ্রার সাথে সম্পর্ক রয়েছে ঠিক আগের মতনই এমনকি ওর কিছু বন্ধুরা ও জানে চন্দ্রাহত নিজের দিদি। স্কুলে কোন ঝামেলা হলে রতন আর চন্দ্রা দুজন একসাথে সেটা মেটায়। চন্দ্রা ছেলেবেলা কাটিয়ে কৈশোর, কৈশোর কাটিয়ে এখন যৌবনে পা রেখেছে।
তাই ওর বাবা-মা ঠিক করেছে ওকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কন্যাদায় এর কাজ সেরে ফেলবে, কিন্তু কোনমতেই চন্দ্র এখন বিয়ে করতে রাজি না সে চায় আরো কিছু বছর ভাইয়ের সাথে কাটাতে এবং এই গ্রামের সকলের সাথে থাকতে, সত্যি চন্দ্রার যেন রতনের প্রতি কোন টান এসে গেছে, কিন্তু যাই হয়ে যাক চন্দ্রার বাবার কন্যাদায় চিন্তা আরো বেড়ে গেছে তাই লকাই চন্দ্রার জন্য স্বপ্ন দেখা শুরু করেছে।
সেই কথা শুনে রতন মনে মনে খুবই কষ্ট পায় এবং কান্নাকাটি করা শুরু করে। দীনদয়াল বাবু ও তাঁর পরিবারকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করে কিন্তু তাতে কোন কাজ হয়নি, সে কোন মতেই মেনে নিতে পারছিল না যে তার ভালোবাসার দিদি তাকে ছেড়ে চলে যাবে। তাই শেষমেষ কোন উপায় না পেয়ে চন্দ্রা তার ভাইকে বোঝায় যে সে বিয়ে করবে না, কিন্তু একথা যে মিথ্যে সেটা চন্দ্রা আর সবাই জানত শুধু জানত না একমাত্র রতন।
এদিকে লকাই অর্থাৎ চন্দ্রার বাবা ও শহরের সুপুত্রের সঙ্গে সম্বন্ধ ঠিক করে ফেলে। কিছুদিন আগের মতন ভাবে কেটে গেলেও চলে আসে চন্দ্রার বিয়ের তারিখ। বিয়ের আগের দিন চন্দ্র তার ভাইয়ের সাথে শেষবারের মতন দেখা করতে যায়, সারাটা দিন হাসি মজা ঠাট্টা করে কাটিয়ে দিলেও বাড়ি ফেরার সময় চন্দ্রার ওরে চোখের জল চলে আসে সে তার ছোট ভাইকে বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ওঠে।
কিন্তু রতন সেদিনকে কিছুতেই বুঝতে পারেনি সে বুঝতে পারিনি যে তার প্রিয় দিদি চন্দ্রা আর কখনোই এইভাবে তার কাছে ফিরে আসতে পারবেনা। পরেরদিন ছন্দার বিয়েতে রতন মেয়ের বাড়ির লোকেরা গেলেও রতনকে তার সঙ্গে করে নিয়ে যায়নি কারণ তারা জানত যদি সেখানে রতনকে নিয়ে যাওয়া হয় রতন হয়তো মনের দিক থেকে বীভৎস কষ্ট পাবে।
বিয়ের পিঁড়িতে বসে ও চন্দ্রা বারবার ভাইয়ের কথা জিজ্ঞেস করেছে এবং তাকে দেখার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। এমনকি কন্যা বিদায়ের সময় ও চন্দ্রা তার ভাইকে দেখার জন্য মন থেকে মিনতি করেছে কিন্তু তাকে দেখতে পায়নি।
দিন তিনেক হয়ে গেল চন্দ্রাকে দেখতে পারছেনা রতন বারবার বাড়ির সবাইকে জিজ্ঞেস করছে চন্দ্রা কোথায় সবাই রতনকে একই উত্তর দিচ্ছে চন্দ্রার হয়তো জ্বর হয়েছে সেই কারণে সেই বাড়িতে আসছে না। এইভাবে আরও দু একদিন চলে যায় একদিন হঠাৎই বিকেলবেলা খেলতে যাওয়ার সময় চলে যায় চন্দ্রা দের বাড়ি।
সেখানে গিয়ে রতন যা দেখতে পায় তাতেও কষ্টে বুক ফেটে যায়, সে গিয়ে দেখতে পায় চন্দ্রা চন্দ্রা আর বর অষ্টমঙ্গলায় এই বাড়িতে এসেছে, চন্দ্রা ভাইকে দেখতে পেয়ে দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরে, কিন্তু রতন চন্দ্রা থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে শুধু একটাই কথা বলে যে তুই আমাকে মিথ্যে বলেছিলি তুই আমাকে মিথ্যে বলেছিলি,একথা বলে সে ওখান থেকে দৌড়ে চলে যায় নিজের বাড়ি। বাড়ি গিয়ে নিজের ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয় রতন অনেক ডাকাডাকি অনেক চেঁচামেচি করে সে দরজা কিছুতেই খোলেনি।
পিছুপিছু চন্দ্রা এলেও তাতে কোন কাজ হয়নি সে চন্দ্রা কেউ কোনো রকম সাড়া দেয়নি এবং বাইরে বেরোই নি, চন্দ্রা অনেক চেষ্টা করেও সেদিন তার ভাইয়ের রাগ ভাঙ্গাতে পারেনি সে চলে গেছে অনেক কষ্ট সহ্য করে নিয়ে। সেটাতে আর রতন দরজা খুলে না অন্য কাজের লোকদের দিয়ে। সে রাতে রত্না দরজা খুলে নি দীনদয়াল বাবু অন্য কাজের লোকদের দ্বারা সেই দরজা ভাঙতে বাধ্য হন, রতন ওই ঘটনার পর থেকে কেমন একটা হয়ে গেছে একা একা থাকে তেমন কিছু কারো সাথে কথা বলে না খুবই জানো একা নিরালা থাকতে পছন্দ করে আর মাঝে মাঝে কেঁদে ওঠে।
এত পরিমাণে কাঁদে জিওর চোখগুলো কেমন বসে গেছে চোখের নিচে কালচে দাগ পড়ে গেছে ওকে দেখলে মনে হয় যেন খুবই চিন্তিত। এই লক্ষণ ভালো না সেটা ওর বাড়ির লোকের বুঝতে আর বাকি রইল না তাই ডাক্তার বাবু কে ডেকে আনা হয়, ডাক্তারবাবুর পরামর্শ অনুযায়ী রতনকে ঘুরতে নিয়ে যাওয়া হয়, তাতেও কোন কাজ হলোনা। সে সর্বত্রই যেন চন্দ্রাকে খোঁজে কিন্তু চন্দাকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব না।
এভাবে কেটে গেল আরো বেশ কিছুদিন কেটে গেল বেশ কিছু মাস তবুও রতন একটুও বদলায়নি ঠিক রয়ে গেছে আগের মতনই। এখন আবার রতনের একটা সমস্যা শুরু হয়েছে বেশ কিছুদিন যাবত ওর পেটে হালকা হালকা ব্যথা শুরু হয়েছে, পাড়ার ডাক্তার দেখানো হয়েছে সে বেশ কিছু ওষুধ দিয়েছে কিন্তু তাতে যেন ঠিক মতন কাজ হচ্ছে না কখনও কখনও ব্যথা কমলেও অত্যাধিক ব্যথার পরিমাণ বাড়তে থাকে, এভাবে কদিন যেতে না যেতেই ওর ব্যথা ক্রমশঃ থেকে বড় হয়ে ওঠে।
তাই ওকে গ্রাম থেকে শহরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে আর নানান পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ডাক্তারবাবু জানিয়েছেন ওর কিডনির বড় ধরনের সমস্যা হয়েছে, যা কিনা অতিশীঘ্ই বদলাতে হবে না হলে হয়তো বড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।
কিন্তু সমস্যা দাঁড়ায় অন্য জায়গায় এই অবস্থা এত তাড়াতাড়ি কিডনিকে দেবে, নানান খোঁজখবর এমনকি টাকা দিয়েও এত তাড়াতাড়ি কিডনি জোগাড় করা সম্ভব হয় না, রতনের বাবা মা কিনে দিতে রাজি হলেও ওর বাবার রক্ত গ্রুপ মেলেনি, মায়ের সাথে রক্তের গ্রুপ মিললেও তার সুগার থাকার দরুন সে কিডনি দিতে পারবে না একথা ডাক্তারবাবু জানায়।
সেই সূত্রেই খুব বিচলিত হয়ে পড়ে দীনদয়াল বাবুর পরিবার এবং দিন্দয়াল বাবু। এবং হঠাৎই পরিবারের একজনের মনে পড়ে যায় রতনের স্কুলে মাথা ফেটে যাওয়ার সময় চন্দ্রকে রক্ত দিয়েছিল সেই ক্ষেত্রে রতন আর চন্দার রক্তের গ্রুপ এক। কিন্তু পরিবারের প্রত্যেকের মনে একটা অনিশ্চয়তা কাজ করতে শুরু করে ওকি রাজি হবে এখন রতনকে তোর কিডনি দিয়ে বাঁচিয়ে তুলতে। নানান নানান ভাবনাচিন্তার কারণে চন্দ্রা কে আর খবর দেওয়া হলো না। কিন্তু এদিকে দিন কেটে গেল বেশ কিছু ডাক্তার বাবু।
রতনের শরীর আগের থেকে আরো খারাপ হতে থাকলো। দীনদয়াল বাবু ভাবলেন একবার শেষ চেষ্টা করে দেখি কারণ, উনি জানতেন এই শহরেই থাকে চন্দ্রা। তাই তার বাড়ির ঠিকানা নিয়ে হাজির হলেন দিন্দয়াল বাবু, তিনি চন্দ্রকে সমস্ত ঘটনা খুলে জানালেন, ছন্দের ভালোবাসা ভাইয়ের জন্য ঠিক আগের মতনই আছে সে এক কথায় রাজি হল কিন্তু দেওয়ার জন্য এবং তার ভাবমূর্তিতে পরিষ্কার স্বচ্ছভাবে ধরা পরল যে ভাইয়ের জীবন বাঁচাতে সে একটু কিছুর জন্য দ্বিধাবোধ করবে না। কিন্তু চন্দ্রা।
কিন্তু চন্দ্রের স্বামী এবং তার পরিবারের লোকজন কোনোভাবেই এই বিষয়ে রাজি হলেন না। তাই শেষমেষ দিন্দয়াল বাবুকে নিরাশ হয়ে ফিরে আসতে হলো হসপিটালে। ওদিকে চন্দ্রা তার ভাইকে বাঁচাতে ব্যাকুল হয়ে উঠেছে, সে যে তার ভাইয়ের জন্য জীবনটা দিতে একবিন্দুও ভাববে না, তাই তার স্বামী এবং শ্বশুরবাড়ির লোকজন কে অনেক বোঝাতে চেষ্টা করে কিন্তু, কেউই তার কথায় রাজি হয়না, সর্বশেষ সে তার স্বামীকে জানায়, যদি তার ভাইয়ের প্রাণ সে না
বাঁচাতে পারে তাহলে সে নিজেই নিজেকে শেষ করে দেবে সে আত্মঘাতী হবে। আর কোন উপায় না পেয়ে সে রাজি হয়ে যায় চন্দ্রার কথাতে। কিন্তু চন্দ্রার স্বামী এবং চন্দ্রা দুজন মিলে ঠিক করে এ বিষয়ে তারা দুজন ছাড়া আর কেউ জানবে না, এবং ঠিক তার পরের দিনই তারা পৌঁছে যায় হসপিটালে ভাইয়ের প্রাণ রক্ষা করার জন্য।
চন্দ্রা এবং রতনের দুজনের রক্ত পরীক্ষা করে জানা যায় দুজনেরই রক্ত এক গ্রুপের। সুতরাং চন্দ্রা তার ভাইকে কিডনি দিয়ে নতুন জীবন ফিরিয়ে দিতে পারবে। তাই পরের দিন সকালবেলা অপারেশন হওয়ার জন্য কি সবকিছু প্রস্তুত হয়। অপারেশন টেবিলে তাদের দুজনকে তোলা হয় এক টেবিলে রতন এবং অন্যটি সমতুল্য চন্দ্রা। কিন্তু ভাগ্যের চক্করে চন্দ্রাকে আত্মার কিডনি দেয়ার প্রয়োজন হয়নি।
কারণ অপারেশন টেবিলে উঠে রতন তার দিদি তার পরিবার আর এই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে গেছে অনেক দূরে। দিন্দয়াল বাবুর পরিবারে নেমে এলো গভীর শোকের ছায়া আর তার দিদি চন্দ্রা গভীর ভারাক্রান্ত শোকে শোকাহত হয়ে আজ দিশেহারা হয়ে পড়েছে।
অনেক কটা দিন কেটে গেছে কেটে গেছে বেশ ক’টা বছর তবুও তার ভাইকে কিছুতেই ভুলতে চন্দ্রা পারেনি তার প্রমাণ স্বরূপ, ও যে আজ মা হয়েছে আর ওর ছেলের নাম রেখেছে রতন।