যে গ্রামের সবাই অন্ধ, এমনকী গৃহপালিত পশুরাও – সিদ্ধার্থ সিংহ

মধ্য আমেরিকার দেশ মেক্সিকোর একটি গ্রামের নাম— টিলটেপেক। সেখানে সাকুল্যে ৭০টির মতো কুঁড়েঘরে আছে। সেই কুঁড়েঘরে জাপোটেক নামের একটি উপজাতি গোষ্ঠীর প্রায় তিনশোর ওপর মানুষ বসবাস করেন। যাঁর প্রত্যেকেই অন্ধ। শুধু মানুষই নয়, ওই গ্রামের সমস্ত গৃহপালিত পশুগুলোও দৃষ্টিশক্তিহীন।

না, ওই গ্রামের অধিবাসীরা সবাই জন্মসূত্রে অন্ধ নন। ওই গ্রামে জন্ম নেওয়া নবজাতকেরা আর পাঁচটা নবজাতকের মতোই সুস্থ-সবল অবস্থাতেই জন্মায়। কিন্তু এক সপ্তাহ পর থেকেই তারা দৃষ্টিশক্তি হারাতে শুরু করে। তার পর এক সময় পুরোপুরি অন্ধ হয়ে যায়।

ওখানকার গ্রামবাসীদের বদ্ধমূল ধারণা, ওই গ্রামে  লাবজুয়েলা নামে যে গাছটি আছে, ওই গাছটাই তাঁদের অন্ধত্বের জন্য দায়ী।‌ তাঁরা মনে করেন, ওটা একটি অভিশপ্ত গাছ। হাজার বার কেটেও ওটাকে নির্মূল করা যায়নি। কাটার পর দিনই দেখা যায়, আবার যে কে সেই। তরতাজা ডালপালা ছড়িয়ে বহাল তবিয়তে দাঁড়িয়ে আছে। তাঁদের বিশ্বাস, ওই গাছই তাঁদের দৃষ্টিশক্তি কেড়ে নেয়।

এ খবর গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পর নড়েচড়ে বসে মেক্সিকোর প্রশাসন ও বিজ্ঞানীরা। কারণ অনুসন্ধান করার জন্য গঠন করা হয় তদন্ত কমিটি।

সেই তদন্ত কমিটি ওই গাছের ডাল, পাতা, ছাল, শিকড়, এমনকী তার আশপাশের আবহাওয়ার ওপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়েও দেখেছে, লাবজুয়েলা গাছের সঙ্গে ওই গ্রামের মানুষদের দৃষ্টিশক্তি হারানোর কোনও সম্পর্ক নেই!

পরে অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে একটি চাঞ্চল্যকর তথ্য। গবেষকেরা বলেন, যে ঘন অরণ্য গ্রামটিকে ঘিরে রেখেছে, সেখানে রয়েছে ‘ব্ল্যাক ফ্লাই’ নামের এক প্রজাতির বিষাক্ত মাছি।

টিলটেপেক গ্রামে এই মাছির প্রকোপ প্রচণ্ড বেশি। সেগুলো ওখানে অবাধে ঘুরে বেড়ায়। ঘুরতে ঘুরতে এর ওর গায়ে বসে। কামড়ায়। আর সেই কামড়েই ওখানকার গ্রামবাসীদের শরীরে জীবাণু ছড়িয়ে পড়ে। যার ফলে শিশু থেকে বুড়ো, এমনকী পশুরাও ধীরে ধীরে অন্ধ হয়ে যায়।

বিজ্ঞানীদের এমন বক্তব্যে অত্যন্ত বিচলিত হয়ে পড়ে মেক্সিকো সরকার। সঙ্গে সঙ্গে তারা ওই অঞ্চলটিকে মানুষের বসবাসের অযোগ্য বলে ঘোষণা করে এবং ওই গ্রামের বাসিন্দাদের অন্য জায়গায় সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে।‌

কিন্তু ওখানকার লোকেরা অন্ধ হতে রাজি আছে, কিন্তু গ্রাম ছাড়তে রাজি নয়। তাই বারবার ওখান থেকে ওদের সরিয়ে দিলেও, ফের প্রশাসনের চোখকে ধুলো দিয়ে ওঁরা আবার সেই গ্রামে গিয়ে বসবাস শুরু করেন।

এই লুকোচুরি খেলা আজও চলছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *