ছােট্ট একটি ফোন রেকডিং এর কথকথন। (ঘটনাটি একটু কল্পনা মুখর… আপনাকে একটু ভেবে নিতে হবে যে বেশ অনেকদিন পরে ফোনে দু জনে কথা বলছে, আর যে কথা বলা হচ্ছে সেটি মাঝ খানথেকে রেকডিং করা হয়েছে, ফোনে দুজনে কথা বলছে…)
হ্যালাে.. হুম শােন যেটা বলতে যাচ্ছিলাম.. দেখতে দেখতে লকডাউন আজ দেড় মাস হতে গেল, ভয়াবহ পরিস্থিতি চরিপাশে, মনে হচ্ছে যে এক মৃত্যুঞ্জয়ি হয়ে বেঁচে আছি কোনরকম।
ময়নার বাপ টাও ঘরে বসে আছে আজ দেড় মাস ধরে, ঘরে যে কটা টাকা ছিল সে গুলােও শেষে, এই সেদিনও ধারে চাল, ডাল কিনে আনলাে মুদি দোকান থেকে। তাও ভাললা, যে গত সপ্তাহে পাড়ার ক্লাব থেকে ৫কেজি চাল ২কেজি ডাল দিয়ে ছিল সেই গুলাে প্রায় শেষ। ও দিকে ছােট মেয়ে টারও দুধের টাকা নেই যে মেয়ে টাকে একটু দুধ খাওয়াবে। | ময়না আমাদের পাশে বাড়িতে থাকে, ছােট একটা মেয়ে পড়াশােনায় বেশ ভালই এবছর ক্লাস ফোর-এ থার্ড হয়েছে। গত সপ্তাহে ময়না কে আমি দুশাে টাকা দিয়ে ছিলাম ও ঐ টাকা দিয়ে ঘরের জন্য চাল ডাল কিনে নিয়ে
গেছিল। (একটু দারা আমি আসছি, এসে ফোন করে বাকিটা বলছি..)
(আবার ফোন করে)
| যে টা বলছিলাম… ময়নার কথা মেয়ে টা বেশ ভালাে খুবই চনমনে আর বেশ দুষ্টু, এই যা এখােননা তে বলাই হয়নি আমি এখন
শ্মশানে আছি ময়নার বাবা আর মাকে দাহ করতে এসেছি, হা গতকাল ওরা দু জনেই সুই সাইড করেছে, আজ পুলিশ বডি গুলাে আমাদের দিয়েছে।
এই যে তখন ফোন রেখে গেলাম না সমির দা ডাকছিল ঐ শ্মশানের ফর্ম ফিলাপ করার জন্য। সে যাই হােক, সে ময়না চাল আর আলু নিয়ে যাওয়াতে
ওরা বেশ খুশি হয়েছিল। ময়নার বােনটাকে ঐ দিনই মাস্টার দা দুধ কিনে দিয়েছিল, ময়নার বাবা হারান আমাকে বলল জানাে দাদা আজ বেশ ভালােই লাগছে, অনেক দিন পর ছােট মেয়েটা একটু দুধ খাবে আর আমরা ও ভাল ভাবে ভাত খাবে। কথাটা শুনে আমার কেমন যেনাে বুকের ভিতরটা একটা হালকা হয়ে এলাে। (কিরে শুনছিস…হ্যালাে..)। (অপর দিক থেকে হ্যা বল)।
একটু আগে এতাে খারাপ লাগছিল… ময়নাকে দেখে এক দিকে ওর মা আর এক দিকে ওর বাবা, খুবই প্যাথেটিক… কিন্তু এটাই বাস্তব। ঐ টুকু বাচ্ছা মেয়ে দু জনের এক সাথে মুখাগ্নি করছে, আর ওর ছােট বােনটা সমির দার বৌ-এর কোলে কখনাে হাসছে বা কখনাে কাছে। (অপরদিক থেকে….কিরে … বল তারপর কি হল….)
| হুম বলছি জানিস তাে সে দিন ময়নার বাবার সাথে কথা বলে ঘরে বসে টিভি দেখছিলাম ঘন্টা দুয়েক হবে..হটাৎ দেখি ময়নাদের বাড়ি ঝামেলা হচ্ছে, আমি আর সে দিকে বেশি কান দিইনি, ভাবলাম ওদের নিজেদের মধ্যে সাংসারিক অশান্তি, কিন্তু পরের দিন মা যখন ময়নাকে টিফিন খাওয়ার জন্য ডাকলাে তখন শুনি ও বলছে “কাল বাবা মাকে হেব্বি পিটিয়েছে”… আমি আর ঐ বিষয় কিছু ওকে বল্লাম না ও বাচ্চা মানুষ কি বলতে কি বলবে, বিকালের দিকে ওর বাবাকে বল্লাম কি ব্যাপার হারান দা তুমিতাে কোনদিন ময়নার মার সাথে ঝামেলা বা মারামারি করনা, তাহলে কাল কি এমন হল যে বৌদির গায়ে হাত তুললে, খানিকটা কষ্ট আর লজ্জার সাথেই বললাে জানাে দাদা ময়নার মার সাথে ঐ পাড়ার বাবুদার ভাইপাের নাকি নােংরা সম্পর্ক আছে, আমি কিছুটা অবাক হলাম আর বললাম তুমি কি দেখেছাে?কারন ময়নার মাকে আমি অনেক দিন ধরেই চিনি, কারুর কথায় নিজের বৌকে
অবিশ্বাস করােনা। ও সব শুনে চুপ করে চলে গেল।
পরের দিন রাত্রে আবার ঝামেলা, বেশ স্পষ্ট কথা গুলাে শুনছিলাম ময়নার বাবা আর মায়ের মধ্যে (হ্যালাে শুনছিস নাকি কেটে গেল)।
(অপর দিক থেকে – নানা আছি বল বল)।
আমি ভাল মতােই বুঝতে পারছিলাম সেই একই ঘটনা নিয়েই ওদের মধ্যে ঝামেলা লেগেছে আর তারই মধ্যে ঐ বাবুদার ভাইপাে ময়নার মাকে পাঁচশাে টাকা দিয়েছে সেটা হারান দা জানতে পেরেছে, তাই সেই রাগে। ঝামেলা চরম পর্যায় ময়নার মাকে পেটাচ্ছে, আর হারান বলছে ‘আজ আমি ঘরে বসে হাতে পয়সা নেই বলে তুই এই নােংরামাে করে টাকা আনবি? এর থেকে তাে শালি তুই মরে আমাকে শান্তি দে না হলে আমাকে মেরে ফেল” সে সময় ময়নার মা একটা কথা বার বার বলছিল সত্যি যখন যানবে তখন তুমি বুঝবে তুমি সত্যি ভুল আমি ঠিক’ এর পর আসতে আসতে ঝামেলা থেমে গেল।
গত কাল খুব ভােরের দিকেই ময়না আমার জানলা ঠকঠক করে ডাকছে আর কঁদছে ….
আমি হুরমুরিয়ে উঠে গেলাম ময়না আমাকে জরিয়ে ধরে কাঁদতে কাদতে বলছে কাকা তারাতারি চল মা আম গাছে ঝুলছে আর বাবা বাথরুমে পরে আছে, আমি গিয়ে দেখলাম ওর বাবা আর মা সুইসাইড করেছে, কিছুক্ষন পরে পুলিশ এসে নিথর দেহ গুলাে নিয়ে গেলাে, আর আজ সকালে বডি গুলাে পেলাম আমরা
আচ্ছা শােন এখন রাখছি দাহ করা হয়েগেছে ময়না কে নিয়ে গঙ্গায় অস্থি ভাসিয়ে বাড়ির দিকে রওনা দেবাে, ওকে টাটা।
তবে সত্যিটা কি? আজও অজানাই থেকে গেল
শুধু দুটো প্রাণ নিরবে চলেগেল আর দুটো প্রান অনাথ হয়ে রয়েগেল…..।।
- রাজীব দত্ত