শিরোনাম : #মেয়েরাই_পারে_মেকআপ_করতে
কলমে : #কেয়া_চক্রবর্তী
মাঝে মাঝেই একটা কথা ভীষণভাবে শোনা যায়, যে মেয়েরা ভীষণ “মেকআপ” করে। সবসময়ই তাদের “অভিনয়” করতে দেখা যায়। একটু ভালো করে ভেবে নিয়ে বলুন তো, যদি তারা তা না করতো, তাহলে আপনারা কি এই সুখের মুখ দেখতে পেতেন?
হ্যাঁ, জন্ম থেকেই মেয়েরা শত অভাব অনটনকে কিভাবে তাদের সুনিপুণ অভিনয় ও মেকআপ এর আড়ালে ঢেকে নিতে সক্ষম তা বোধকরি একজন মেয়েই ভালো বুঝতে পারেন। বাড়িতে শত অভাব, হয়তো স্বামী ও সন্তানকে দুমুঠো খাবার দেয়ার পর, তার জন্য একদানা খাবার অবশিষ্ট নেই, সারাদিনের হাড়ভাঙা পরিশ্রমের পর, এক গ্লাস জল পান করে হাসিমুখে তারাই বলতে পারে, আজ শরীরটা ভালো নেই, তাই আর খেতে মন চাইলো না। স্বামীর সামান্য আয়ে কোনোরকমে টেনেটুনে সংসার চলে, অথচ লোক লৌকিকতাও করতে হবে, নিজের বালা, বা কানের দুল বন্ধক দিয়ে সেই অভাব মেকআপ করার কথা একমাত্র মেয়েরাই ভাবতে পারে।
নিজের পরনে শতছিন্ন বস্ত্র, হাজার জোড়াতালি দিয়ে কোনোরকমে চলেছে, কিন্তু সন্তানের যাতে কোনো অভাব না হয় সেদিকে নজর একমাত্র মেয়েরাই দিতে পারে।
হ্যাঁ জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে তারা এই মেকআপই তো করে চলেছেন। স্বামীর নিন্দা আজ ও বহু নারী ই সহ্য করতে পারেন না, দাঁতে, দাঁত চিপে জীবনযুদ্ধে অভিনয় করে চলেছেন। মেকআপ করে চলেছেন তার মা বাবার কাছে, সুখী দাম্পত্য জীবনের। বাবা অসুস্থ তাই মেয়ের সর্বনাশের খবর যেন তাঁর কানে না পৌঁছে যায়, মেকআপ করে চলেছেন যাতে কোনোভাবেই প্রকাশ্যে না আসে তার যন্ত্রণার কথা।
মদ্যপ স্বামীর হাতে নিগৃহীত হওয়ার পরও সন্তানের কাছে নিজের লাঞ্ছিত হওয়ার কথা গোপন করে রাখতে পারেন, যাতে বাবার সম্মান ভুলুন্ঠিত না হয়ে যায়। হ্যাঁ এই মেকআপ করে আসছেন তারা যুগ যুগ ধরে।
মুখে চড়া মেকআপ করে হাতে কুপি নিয়ে অন্ধকার চোরাগলিতে নিজের ক্ষুধা নিবারণ করতে দাঁড়িয়ে আছে আজ কত নারী, যারা হয়তো একদিন তাদের বাবা মা র অমতে ঘর ছেড়েছিল তার ভালোবাসার মানুষের হাত ধরে, বোঝেনি, যে তার পরিণতি এই। বোঝেনি যে ভালোবাসার টানে সে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এসেছে, আজ এইভাবেই তাকে মেকআপ দিতে হবে জীবনের বাকিদিনগুলো।
মেকআপ কি কেবলই স্নো, কসমেটিক্স লাগালেই হয়, জীবনের প্রতিটি মুহূর্তেই মেকআপ দিয়ে চলতে হয়। কখনও বুদ্ধি দিয়ে, কখনও অভিনয় দিয়ে কখনও হাসির মাধ্যমে আবার কখনো স্বার্থত্যাগের মাধ্যমে।
ভগবান এই মেকআপ করার ক্ষমতা একমাত্র স্ত্রীজাতিকেই দিয়ে পাঠিয়েছেন, তাই তো তারা ইট, কাঠ, পাথরের ঘরকে তাদের ভালোবাসা দিয়ে মেকআপ করে ভালো বাসায় পরিণত করতে পারে। স্বামীর আয়ের টাকায় সব খরচ চালিয়েও ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় করতে জানে। ভাইকে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলার জন্য নিজের সাধ আহ্লাদকে মাঝপথে অপূর্ণ রেখে সংসারের জোয়াল নিজের কাঁধে বয়ে বেড়াতে পারে হাসিমুখে, নির্দিদ্ধায়। মেকআপ করা এক কলা আর মেয়েরা তাতে সিদ্ধহস্ত। জীবনের প্রতিটি পরীক্ষায় তারা সবচেয়ে বেশি নম্বর পেয়ে এগিয়ে চলেছে।
#মেয়েরাই_পারে_মেকআপ_করতে
©কেয়া চক্রবর্তী®