মেঘ আর ছায়ার গল্প

#অণুগল্প
মেঘ আর ছায়ার গল্প

মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ

ফোনটা কেটে যাচ্ছে বারবার ।নেটের সমস্যাও মনে হচ্ছে মরার ওপর খাঁড়ার ঘা’।
চুলার আগুন আজও জ্বলবে না ।ছোটো ছেলেটি মানিক গঞ্জের একটি বাড়িতে লজিং থাকে ।ওখানেই থেকে মাদ্রাসায় পড়ে ।তিন বেলা খাবার, বই, পোশাকের রফা হয়েছে।কয়েকটা বাড়িতে নিজেও কায়দা সিপারা পড়ায়।হাতখরচটা হয়ে যায়।
শুক্কুরের ফোনটা বেজে উঠল ।কিন্তু ওপাশের এগারো বছরের আইনুল ফোনটা রিসিভ করতে পারছেনা ।তালিমের সময় ফোনটোন নিষেধ ।তাছাড়া ইকবাল হুজুরের বেতের মর্ম সবাই জানে ।গেলো মাসে তো রাইসু লকে বাঁচানোই গেলোনা।
প্রশ্রাবের কথা বলে আইনুল বেরিয়ে গিয়ে একটু আড়ালে লুকিয়ে ফোনটা ধরে —
কী কইবা,তাড়াতাড়ি কও।টাইম শট।হুজুরে দেকলে মাইরা ফালাইব।পেশাবের কথা বইলা বাইরে আইছি ।

একচোট কেঁদে নিল আয়মন।
এবার আইনুল নিজেই মাকে ধমকে দিয়ে বলল–তুমি কি আমারে পিটনা খাওয়াইতে চাও?
আয়মন নিজেকে একটু সামলে নিয়ে বলতে শুরু করে –তোর ভাইজান আমাগোরে আর টেহাপয়সা দেয়না।পাঁচদিন ধইরা তোর বাপের জ্বর ।কামে যাইতে পারেনা ।হেই ঘরের চাচাজি কয়ডা টেহা দিছিন।ডাক্তারের ভিজিট, পরীক্ষা নীরিক্ষায় সব শ্যাষ ।ওষুদের ট্যাহাডা হাতে নাই ।সহালে নাইল্লা হাগ আর চিনি খালার এক কৌট্টা চাইল দিয়া ভাত রানছি। ,,,গেছে একটা শবে বরাতের রাইত গেছে। দুইডা ফকির খাওয়াইতে চাইছিলাম।ক্যামনে কী করি–নিজেগোর বরাতটাই মন্দ ।তোর ভাইজানের ঘরে পায়েশ রানছে ।গুস্তুর গেরান পাইছি ।একটুও তর অসুইক্কা বাপের কপালে জুটলো না।—
ফোনটা কেটে গেল।
কেউ একজন খবর দিয়ে গেছে—হুজুরে তোরে নিয়া যাইতে কইছে।কেন জানি বেত থেরাপি’টা দিলেন না।

দুইদিন পর ফোনটা আবার বাজলো।
ইকবাল হুজুর এবার রিসিভ করলেন—ওপাশের মহিলার কান্নার আওয়াজ শুনে বুঝতে বাকি নাই —আইনুলের বাবা চলে গেছেন পরপারে ।
হুজুরের চোখের জল পাছে আইনুল টের পেয়ে যায় ,কোনমতে ওকে ডেকে নিয়ে বললেন, আজকে তোমার সাথে তোমাদের বাড়ি যাব,তৈরি হয়ে নাও।
আইনুলের সপ্রতিভ শৈশব যেন ধেই ধেই করে নাচতে শুরু করেছে ।মনের আনন্দে মাদ্রাসার মাঠে একটা ভোঁ–কাট্টা ঘুড্ডিটার মতো চক্কর দেয়।

মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *