মুক্তি

মুক্তি
— ছন্নছাড়া।

ঋজু একজন অল্পবয়সী কিশোর। কলকাতার এক ফ্লাটে সে সারাদিন একাকী থাকে। তার বাবা -মা দুজনেই চাকরী করে। তাই তার জগতটাও যেন বড্ড নিঃসঙ্গ। এইভাবে একরকম ঘরে বন্দী হয়েই তার দিন কাটত। হঠাৎ একদিন কোথা থেকে যেন একটি টিয়া পাখির ছানা তাদের ফ্লাটে ঢুকে পড়ল। কিন্তু ছানাটা আর উড়তে পারছিল না। ঋজু তাকে ধরে দেখল তার ডানা কাটা।

সন্ধ্যা বেলা বাবা-মা বাড়ি ফিরতেই তাদেরকে সব বলল ঋজু। সব শুনে তার বাবা একটি খাঁচা কিনে আনলেন। সেই খাঁচায় টিয়া পাখিটাকে রেখে ঋজু তাকে পুষেছিল। ক্রমেই ঋজুর একাকীত্ব কেটে পাখিটাই হয়ে উঠল তার সর্বক্ষণের সাথী। পাখিটার সাথে ঋজুর হৃদ্যতা সকলের কাছে সমাদৃত হল। সবাই বলত পাখিটা ঋজুকে পেয়ে খুশি। ঋজুও পাখিটাকে পেয়ে খুশি। পাখিটিকে ঋজু খুব যত্ন করত। তার সব মুহূর্ত জুড়ে থাকত সেই পাখিটি। ক্রমে সেই পাখিই হয়ে উঠল তার জগতের একমাত্র পরিচিত জন। তাকে ঘিরেই তার আনন্দ, খুশি, ভাল থাকা। সে তাকে কথা বলতে শেখালো আস্তে আস্তে।

কিন্তু একটা সময় পরে পাখিটির কাছে ঋজু হয়ে গেল অপরাধী। খোলা আকাশ দিকে তাকিয়ে তার মনে হত ঋজুর জন্যই সে আজ খাঁচায় বন্দী। পাখিটি খোলা আকাশে উড়তে চাইত। খাঁচার জীবন তার কাছে ক্রমশঃ অসহ্য হয়ে উঠল। তাই ঋজুও তার কাছে বিরক্তির কারণ হয়ে উঠতে লাগল। ঋজুও বুঝতে পারছিল যে পাখিটা তার খাঁচায় আর থাকতে চাইছে না। তাই একদিন সে খাঁচা খুলে পাখিটাকে মুক্তি দিল। ঋজুর কাছে পাখির আনন্দটাই ছিল তার নিজের আনন্দ। কিন্তু পাখিটার কাছে খোলা আকাশের বুকে উড়ে বেড়ানোটা ছিল আনন্দের। মুক্তি পেয়ে সে আনন্দে আকাশে উড়তে লাগল।

একটা সময় পরে উড়তে উড়তে পাখিটা ক্লান্ত হয়ে গেল। সে আবার সেই খাঁচায় ফিরে এল। কিন্তু সারাদিনে সে আর ঋজুর দেখা পেল না। কিছুসময় পর পাখিটা দেখল ঋজু খাঁচার সামনে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। কিন্তু খাঁচার দিকে তার কোন আগ্রহ নেই। পাখিটা তখন ঋজুর নাম ধরে ডাকল। কিন্তু ঋজু যেন আজ বড্ড উদাসীন। পাখির ডাক যেন তার কানে পৌঁছাচ্ছে না। তখন পাখিটা খাঁচা থেকে বের হয়ে ঋজুর কাঁধে এসে বলল।

ঋজুও চমকে উঠল। সে দেখল তার সেই টিয়া পাখিটি ফিরে এসেছে। কিন্তু সে আর আগের মত মনের আনন্দ ফিরে পাচ্ছে না। সে পাখিটাকে কাঁধের থেকে নামিয়ে একটু আদর করল। তার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল, “আমি তোর দুঃখের কারণ হতে চাইনি কখনও। সবসময় চেয়েছি তোর ভাল হোক। কিন্তু তুই আমায় বুঝিয়ে দিয়েছিলি যে, আমি ভুল করেছিলাম। চাইলেই জোর করে কাউকে ভালোবাসার বাঁধনে বাঁধা যায় না। তাই তো তোকে মুক্ত করে দিয়েছি।” তারপর তাকে উড়িয়ে দিল তার পছন্দের আকাশের দিকে আর গাইতে লাগল, “যা, যা পাখি উড়তে দিলাম তোকে, খুঁজে নে অন্য কোন বাসা। …………..”।

——@@@@@@@@@——

ছন্নছাড়া

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *