“ভালো করে চেপে ধর পা দুটো”, শ্রীমতির হাতদুটো শক্ত করে চেপে ধরে শ্বাশুড়ি দেওর অমরকে নির্দেশ দেন। অমর শক্ত করে খাটের সঙ্গে পা দুটো চেপে ধরে শ্রীমতির।দেড় মাসের মেয়েটা দোলনায় ঘুমোচ্ছিলো, এই সব চেঁচামেচিতে ঘুম ভেঙে কাঁদতে শুরু করলো, কিন্তু কারো সেদিকে হুঁশ নেই। সৌম্য, শ্রীমতির বর, দুই আঙুলে বাঁ হাতে চেপে ধরে গালটা, তারপর শ্রীমতির মুখটা হাঁ করে ঢেলে দেয় ঘুমের ওষুধের শিশির সব কটা ওষুধ, তা গোটা পঁয়তাল্লিশেক তো হবেই। বাবার ঘুম হয় না, তাই সৌম্য ই এনে দেয় ওষুধ টা, আজ বেশ কাজে লেগে গেলো। আর ননদ, শ্বশুর দুদিক থেকে চেপে ধরে হাত দুটো। ট্যাবলেট গুলো মুখে পুড়ে সৌম্য হাতের পাতা দিয়ে চেপে ধরে শ্রীমতির মুখটা, শ্রীমতির চোখ ঠেলে বেরিয়ে আসে, দম আটকে আসতে চায়, হাঁসফাঁস করতে থাকে ও, বেশ ভালো বুঝতে পারে, শেষ নিঃশ্বাসটা না বের হওয়া পর্যন্ত ওরা, ওকে ছাড়বে না, ওর প্রিয়জনেরা, ওর স্বামী, দেওর, ননদ, শ্বশুর, শ্বাশুড়ি।
শেষবার ঘাড় ঘুরিয়ে মেয়েটাকে একবার দেখতে চেষ্টা করে, কিন্তু সৌম্য এত জোড়ে মুখটা চেপে ধরে আছে যে ঘাড়টাও ঘোরাতে পারলোনা শ্রীমতি। ওর চোখের কোল গড়িয়ে বেরিয়ে এলো দু ফোঁটা জল, ঘুমের ঘোরে তলিয়ে যেতে যেতে ওর মনে হলো, ইস্, ওরা যদি মেয়েটাকে আগে শেষ করতো, তবু শান্তি পেতাম, মেয়েটার একটা হিল্লে হলো। মেয়েটার যে কি হবে? হে ভগবান তুমি মেয়েটাকে দেখো।
লোকে লোকারণ্য “সেন বাড়ির বড় বউ এমনিতেই ডিপ্রেশনে ভুগতো, আরে মাথার গন্ডগোল ছিলো! আজ শ্বশুরের ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যা করেছে আর এমন নিষ্ঠুর মেয়েছেলে, বাচ্চাটাকেও দুধের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে মেরেছে। ছিঃ, ও মা না ডাইনি! ঝাঁটা মারো ওরকম মায়ের মুখে, তুই মরবি মর,তা বলে ঐটুকু দুধের শিশুকে ?ছিঃ ছিঃ।জানো বরটাতো প্রায় আধপাগল হয়ে গেছে! “