পিতা // সুদীপ ঘোষাল
পিতা উঠে আসছেন কবর থেকে
বিশ্ব মায়ের অপমানিত কান্না শুনে
কোন কাননে কুঁড়ি ফুটে আছে
কোন কাননে ফুল নজরে রাখে
ছাগলের দল,ছিঁড়ে ফেলে সুযোগ পেলেই
সমাজ সভ্যতার রক্ত মাংস নাড়ি ভুঁড়ি
মাতৃ জাতির আর্তনাদে পিতা উঠে আসছেন কবর আর চিতা
থেকে….
হাজারে হাজারে উঠে আসছেন সমাধি থেকে
নতুন পৃথিবী গড়ার অঙ্গিকারে দৃপ্ত পদক্ষেপে
অপরাধীর সাজা দিচ্ছেন রক্তচক্ষে নিমেষে
পিতা এখন মানুষ নয় প্রেতও নয় সমস্ত কিছুর উর্ধ্বে এক অতিন্দ্রীয়
জগতের জীব
তিনি আসছেন অশুভ শক্তির বিনাশক,পৃথিবীর স্রষ্টা
আমাদের ভবিষ্যতের পিতা…
হৃদমাঝারে // সুদীপ ঘোষাল
.
প্রথা ভাঙ্গি
নতুন পথ গড়ি
একটা দুঃসাহসী
আত্মঘাতি জেদ
সিড়ি বেয়ে
মনে আঁকে ছবি
এসো হে
নব যৌবনের বনে
জাতি বজ্জাতি ভুলি
মানবে মানবে
সেতু
শাঁকো আঁকি
শুধু খুঁড়ে দাও হৃদি
দেখো ঠিক ভাসবে
ভাসবেই
পদ্মবনে
হৃদয় খনির
অধরা মাণিক…
.
স্বপ্ন //শ্যামল কুমার রায়
স্বপ্নগুলো সব মেলছিল ডানা আকাশ ছোঁয়ার নেশাতে ।
স্বপ্নের জাল বুনছিল যারা , মানুষ করেছিল তারা যে।
মধ্যবিত্তের স্বপ্ন মানে নিশ্চিন্তের জীবন যে –
মাস পয়লা মোটা বেতনের চাকুরিজীবী হবে সে ।
ক্যেরিয়ার নামের অচিন পাখির পিছনে যে ছোটে সে ।
চাকরি মানে মোক্ষ লাভ মধ্যবিত্তের কাছে যে ।
চাকরি করা রোজগেরে ছেলের মানে কি? –
মেয়ের বাবা ভালোই বোঝে, বুঝিয়ে বলার দরকার কি ?
কৈশোর আর যৌবনের ফ্যান্টাসি সব শেষ,
ক্যেরিয়ার পিছনে ছুটে প্রাণশক্তি নিঃশেষ ।
প্রেমে পরা ভালো নয় , বুঝেছিল আগে –
মোক্ষ লাভের স্বপ্ন তাহলে শেষ হয়ে যাবে ।
নিজের মতামত তুচ্ছ যে জীবনে –
তার ভালো কিসে হবে গুরুজনে জানে ।
চারহাত এক হল গুরুজনের কথাতেই ।
সদ্য ফোটা ফুল এক এল জীবনেতে ।
যৌবনের আকর্ষণ নতুন স্বপ্ন বোনে ,
শরীরী বিভঙ্গ ঢেউ তোলে জীবনে ।
যৌবনের শিখরে পিতৃত্ব লাভ –
স্বপ্ন পূরণে আর নেই কোনো অভাব ।
সন্তানের বাল্যলীলা অনির্বচনীয় সুখ ,
স্বপ্ন পূরণে নয় জীবন বিমুখ ।
সংসারের মারপ্যাঁচ বোঝেনা কপত কপতি,
সবেতেই অভিযুক্ত নবোঢ়া পত্নীটি ।
ঝগড়াঝাঁটি আর খুনসুটিতে স্বপ্নভঙ্গ শুরু –
নির্বোধ দম্পতি বোঝেনা কিছু গুরু !
বাঁচার তাগিদেই প্রতিবাদ শুরু –
মূক মেয়েটি তখন মুখোরা গৃহবধূ ।
আঘাতে আঘাতে আজ চেতনা জাগ্রত –
নিজভূমে পরবাসী ঐ অভিজ্ঞ দাম্পত্য ।
অসহায় , সম্বলহীন আজ ফের ঘুরে দাঁড়ায় ,
হাতে হাত রেখে ওরা তুফান দরিয়া পার হয় ,
কক্ষচ্যুত হলেও ওরা লক্ষ্যচ্যুত নয় ।
মেরুদন্ড সোজা করে আজও রাজপথে দাঁড়ায়,
বাঁচার তাগিদে আজও স্বপ্ন দেখে ওরা –
অন্তর্যামীর আশিসে নতুন ভোর আজি ওদেরই দোরগোরায় ।
.
পরমাণু গল্প
তৃপ্তি // সুদীপ ঘোষাল
পুজো আসার আগে থেকেই বাড়িতে মা ও বাবা নানারকম মিষ্টান্ন তৈরি করতে শুরু করতেন। গুড়ের নারকোল খন্ড, চিনি মিশ্রিত নারকোল খন্ড, সিড়ির নাড়ু, গাঠিয়া প্রভৃতি। গুড়ের মিষ্টির ব্যতিক্রমি গন্ধে সারা বাড়ি ম ম করতো।
আমরা স্বতঃস্ফুর্ত অনুভূতিতে বুঝে যেতাম পুজোর দেরি নেই। পুজোর কটা দিন শুধু খাওয়া আর খাওয়া। বাড়িতে যারা যাওয়া আসা করতেন তারাও পুঁটুলি বেঁধে নিয়ে যেতেন চিড়ি,মুড়কি, মিষ্টি মায়ের অনুরোধে ও ভালোবাসায়।
এখন গুড়ের মিষ্টি, ছানার মিষ্টির তুলনায় ব্রাত্য। কিনলে সবই পাওয়া যায়, ভালোবাসা মাখানো তৃপ্তি পাওয়া যায় কি?
তৃপ্তি খোঁজে অনন্ত আকাশতল…
.
বুদ্ধিভ্রংশ // প্রসাদ সিং
আমি যখন দেখি
চারপাশটা ঋতু পরিবর্তনকে
অবহেলা করে পাল্টে যাচ্ছে
আমি ঝরাপাতা , কচিপাতা
বিভেদ করতে পারিনা
শুধু লুকিয়ে নি-ই তাদের , বাক্সের মধ্যে ।
মৃত শিলালিপিরা জেগে ওঠে
তাদের সেই বিভৎস মুখের দিকে
তাকাতে খুব কষ্ট হয় ,
তবুও তো আয়না তে
নিজের চোখে চোখ মেলানো
থেকে অনেক ভালো ।
হঠাৎ নিঝুম মাঝ রাতে
বালিশের তলা কিংবা
ডায়েরির পাতা থেকে
যে জলজ্যান্ত জীবাশ্ম
ছুটে আসে আমার দিকে
তাকে দেখে বুদ্ধিভ্রংশ হয় আমার ।
.
হকার // KiশLয় Miত্র
.
দেখিনু সেদিন রেলে,
‘চাই লেবু’ বলে চিৎকার করিল সে।
মাথায় ছিল বাঁশের ঝাঁকা
দিতে চেয়েছিল বিশে সাতটা।
না পেয়ে কোনো খরিদ্দার
‘হালা’ কোন লোক নাই, কামরায়।
যদিও ঠাসা মানুষের ভিড়
তবুও হইল না বিক্রি ;–
আপসোসের ধিক্কার ,বাজিল বুকে।
হাহাকার করে এভাবে কাটে
শতধিক্কারের পাত্র সে হয়ে,
যুগে-যুগে চলেছে একা।
হাজার স্বপ্নের জাল ছিঁড়ে
নিয়ে এসেছে তাকে, নামিয়ে
রাস্তায় ;
করেছে পরিচয় ‘এই লেবু’ হরকরায়।
‘লেবু চাই,লেবু চাই’ চিৎকার
এখনও ভেসে আসে,
মনের কোণ থেকে
বাতাসে।
.
.
অনাবিল // সুদীপ ঘোষাল
কবি এ তোমার নদী অবকাশের বহিঃপ্রকাশ
সাদা ধুতি আর পাঞ্জাবি পড়ে পিতা ওপাড়ে
জীবনের দুঃখ বেদনা ভাগ করে নিচ্ছেন অনাবিল আনন্দে
কবিদের বলা বাণী ভেসে আসে শান্তি দূত হয়ে অভয় বাণীর সুরে
এত যে অশান্ত বলয় কঠিন সময় তার সমাধান লাইনে এসে
আমার পিতার সহজ ভাষে এক হয়ে যায় পৃথিবীর সমস্ত কবির হাসি…
.
একটাই অর্কিড // সুদীপ ঘোষাল
হিজল অশ্বত্থের পথ চেয়ে রূপসী বাংলা
মৃত্যু মুখে অমর চিন্হ ঝরা পালক
প্রাণের সুর উদাস বাউল তোমার একতারায়
বন্ধু আমার সখা আমার বনলতা সেন ঘ্রাণ
জীবন সুরে বাঁধা সবার জীবনানন্দ প্রাণ
মজ্জাকোষে আলোড়ন তোলে তোমার মন্ত্র
সকল দুঃখের অবসান একটাই অর্কিডে
“আবার আসিব ফিরে ধানসিঁড়িটির তীরে
এই বাংলায়”…
কল্পলোক
সুদীপ ঘোষাল
আমার আঙুলে পরশ খুঁজে নেয় তোমার গোপন অনুভব
হয়ত শম্বুক নিয়মে তোমার ঝিনুকে মুক্ত নেই
অতি ব্যবহারে ছিন্ন সাইকেলের টিউবের মতো অতি আধুনিকতা
একের পর এক বল্কল খুলে ফেলে ডানা মেলা স্থির প্রজাপতি
কল্পলোকের কন্ডোম ছেঁড়া মিলন…
তবু নিয়ে আসে আধুনিক আসমানি রঙের উত্তর প্রজাতি…
.
দারিদ্র্য // সুদীপ ঘোষাল
নোড়া ঠুঁকে পেরেক মারে জুতোর জ্বালা
নোড়ায় লেগে যায় ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া
মোবাইল কেটে নেয় ব্যালেন্স নেট জিরো
ছেলে আচম্বিতে চেয়ে বসে একশো টাকার ভোর ।
মননে রোগ // অভিজিৎ দাশগুপ্ত
মারণ রোগ বাসা বেঁধেছে আমাদের
গভীর মননে।
আমরা জুবুথুবু, নিস্তেজ, নিশ্চুপ।
দিনে দিনে ভাষাও, ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না।
ভাবনার সূর্যাস্তে সূর্য আর
পূর্ব গগনে উঁকি মারার সাহস দেখায় না।
নিথর পাথরও নিজের স্থান পরিবর্তনের
মানসিকতা রাখে;
বড়ো বড়ো অট্টালিকাও একে ওপরের
দিকে চিরকাল তাকিয়ে থাকার
বন্ধনে নিজেদের আবদ্ধ করে;
মরা গাছও শেষ চেষ্টা চালায়
নিজেকে সবুজে সবুজে রাঙিয়ে তুলতে;
অথচ আমরা পারি না,
আমাদের পারতে নেই,
আমাদের ভালোবাসা কম, মনে দ্বেষ বেশি।
আমরা রোগ লালনপালন করি,
রোগগুলো আমাদের নিয়ন্ত্রক।
চেতনার বিপ্লবে রোগমুক্তির ওষুধের বড়ি।।
আজ কেন জানি // অজ্ঞাত
অকারণে আজ কেন জানি–
ঐ শুভ্র কপালে ভোর সূর্য হলো
এই আঁধার মনে বাসন্তী চাঁদ এলো
কোথাও কোন ফুল ফোটার সুগন্ধ এলো
আজ কেন জানি—
আজ হেসে কেন জানি–
নিভৃত সুপ্ত অমলতাস ঝুমকো হলো
দোলনচাঁপা উদ্বিগ্ন হলো কোন চুর্ণী খুঁজে
জুঁই স্বেচ্ছায় সুগন্ধি মালা হলো কার ভাবনায়
আজ কেন জানি–
হঠাৎ কি হলো কে জানে–
ঝিকিমিকি চাঁদ গা ভাসালো নদী বুকে
ইকিরমিকির খেলা দুই যুযুধান মনে
প্রেম গাঁথার খেলা এ মনে ও মনে
জিতলে পাওয়া হারলেও পাওয়া–
চাঁদগুলো থাক মালাগুলো থাক
ঠোঁট দুটো ক্ষণিক মিষ্টি হাসি থাক
ক্ষণিক প্রান পাক তৃষ্ণার্ত রাত
স্বপ্নগুলো স্বপ্ন দেখে অকস্মাত
সময় থেমে আজ আজ’ই থাক না–
আজ উন্মনা বেখেয়ালি কেন জানি—