ভ্যানিশ – অভিষেক সাহা

প্রায় দৌড়ে এসে প্রাইভেট বাসটায় উঠে পড়ল সোম। এটা মিস করলে অফিস যেতে দেরি হত।  খুব দরকারি মিটিং আছে আজ। এমনিতেই করোনা আতঙ্ক , লকডাউন সব মিলিয়ে বাস সংখ্যায় বেশ কম। তাই পরেরটার অপেক্ষা করা যাবে না। দুপুর একটার সময় বাস প্রায় ফাঁকাই থাকে। বসার সিট পাওয়া যায়। আজও আছে। তবে সেটা সিনিয়র সিটিজেন। বাকি সব ভর্তি। ওটাতেই কিন্তু কিন্তু করে বসে পড়ল সোম। যেমন ভাবা তেমন কাজ। দু’টো স্টপেজ যেতে না যেতেই একজন বয়স্ক লোক বাসে উঠলেন।উঠেই তাঁর চোখ ফেভিকলের মত  আটকে গেল সোমের গায়ে । কথা না বাড়িয়ে এক আকাশ অনিচ্ছা নিয়ে  হাসি মুখে উঠে দাঁড়িয়ে বয়স্ক লোকটাকে সিটটা ছেড়ে দিল ও।

” কিছু মনে কোরো না বাবা তুমি, বয়স হয়েছে তো দাঁড়াতে কষ্ট হয় ।” বয়স্ক মানুষটা সিটে বসে আফসোস করে বললেন।

” না, না, ঠিক আছে। এটা তো আপনার লিগ্যাল রাইট। ” সোম উত্তর দিল। তারপর পকেট থেকে স্যানিটাইজারের শিশিটা  বের  করে লোকটাকে বলল ” জ্যেঠু নিন, হাত  স্যানিটাইজ করুন। ” এই বলে  কয়েক ফোঁটা স্যানিটাইজার লোকটার বাড়ানো দু’ হাতের তালুর উপর দিয়ে দিল। সোম খেয়াল করেছে করোনাকালে মাস্কের ব্যবহার যতটা সর্বজনীন হয়েছে , স্যানিটাইজার ব্যবহার ততটা হয়নি।

বয়স্ক লোকটা দু’হাতের তালুতে ভালো করে স্যানিটাইজার মেখে নিতে নিতে বলল” থ্যাঙ্কু বাবা থ্যাঙ্কু।সব জীবাণু ভ্যানিশ। তা বাবা কোন অফিসে কাজ করা হয়?”

” একটা ওষুধের কোম্পানিতে।” কাঁধের ব্যাগটা ঠিক করতে করতে সোম জানাল।

” বাহ্!বেশ বেশ, খুব ভালো। ওষুধই তো এখন মানুষের পরম বন্ধু । তা বাবা তোমাকে একটা কথা বলব যদি কিছু মনে না কর !” বয়স্ক লোকটা সোমের কাছে জানতে চাইলেন।

“হ্যাঁ, বলুন না ।কোনও অসুবিধা নেই।” সোম আশ্বস্ত করল।

বয়স্ক লোকটা বললেন ” বাবা, তোমাদের ওষুধ অফিসের মাথাদের একবার বলো না এমন একটা  স্যানিটাইজার বের করতে যা দিয়ে মানুষের সব দুষ্টু বুদ্ধিগুলোকে ভ্যানিশ করা যায়!”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *