ব্যাথার নেশা – কৌশিক গাঙ্গুলী

আজ ২০ মার্চ, ২০২০। আমি গিয়েছিলাম কোন এক অখ্যাত স্কুলে এক অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে। প্রথম দিকে যেমন ঘটার তেমনি ঘটছিল। যেহেতু “করােনা রােগ’- এর প্রাদুর্ভাব দেখা গেছে তাই সবার কথাতেই একটা সাধারন নির্দেশবাণী থাকছেই। এ ধরনের কথা।

আমি আগে অনেক বার শুনেছি। সত্যি বলতে কি, আমার মন আর চাই ছিল না ঐ প্লাস্টিকের চেয়ারটায় এক জায়গায় বসে থাকতে। তবু দেখে যাচ্ছি ছােটো – বড়াে, প্রাক্তন – বর্তমান ছাত্র ছাত্রীরা স্টেজে উঠে তাদের প্রতিভার প্রকাশ করছে গান, নাচ, আবৃত্তির মধ্যে দিয়ে। একটা CALL আসার জন্য আমার ফোনের দিকে নজর দিতে শুনতে পেলাম-

“নমস্কার, আমি মানুষি, একাদশ শ্রেণির ছাত্রী৷আমি আপনাদের সকলের সম্মতি নিয়ে একটি স্বরচিত কবিতা পাঠ করে শোনাতে চাই।”

আমি সব ভুলে মন্ত্র মুগ্ধের মত তার দিকে তাকালাম। মনে হল মেয়েটার গলায় একটা যন্ত্রনা  আছে। তার লাল চোখ দুটো সারা রাত গুমরে কাঁদার ইঙ্গিত দিচ্ছে। আমার সমস্ত বিতৃষ্ণা মিলিয়ে গেল নিমেষে।আমি একদৃষ্টে শুনে যাচ্ছি- 

“ কবিতাটির কোনাে নাম দিই নি আমি, ওটা আপনারাই বেছে নেবেন।”

ঠিক যেন বিদ্রুপাত্মক হাসির ছটা দেখা গেল মেয়েটার খয়েরি ঠোটে। মেয়েটা শুরু করল তার কবিতা

“তুমি কে? আমি জানি না তবে বােধ করি,
যে তুমি সেদিন ছিলে অবলা, সরলা 
সেই তুমি আজ ফিরে এসেছে অন্য রূপে, অন্য নামে আজ তুমি দানবী করোনা।

আজ তুমি বধিছ সেই সকল মানুষকে 
মানুষ হয়েও মানুষ ছিলে না যারা 
আজ তুমি বধিছ সেই সব্বাই কেই 
তােমাকে মেরেছিল বা মরতে দেখেছিল যারা।

আমি চাইনা তুমি থেমে যাও
শুধু শিক্ষা টুকু দিয়ে যাও 
এই করি প্রার্থনা, 
যদি পারো এ ধরা শেষ করে যাও 
যদি পারে সকল মানবীরে নিয়ে যাও 
অনেক কম তাই এই যন্ত্রনা।।”

কবিতা পাঠ করেই হাত দুটো বুকের কাছে জড়াে করে নেমে গেল মেয়েটা। কেউ যেন টানছে তাকে। কোনাে ভয় যেনাে তাড়া করছে। যেন আর এক মুহুর্ত দাড়িয়ে থাকলেই কোনাে অনর্থ ঘটে যাবে। এরপর স্টেজে কি কি হল তার একটা কথাও আমার কানে ঢোকেনি। আমার চোখ শুধু খুজে গেছে ঐ মেয়েটাকে, আর কান বারবার শুনেছে ঐ কান্না জড়ানাে  কবিতার শব্দ গুলো। আমি যেন একটা নেশা ডুবে রইলাম, ব্যাথার নেশা।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *