পুকুর পাড়ে অলস বিকেলে একা বসে আছে তোতন। ক্লান্ত চাহুনিতে দেখছে ছেলেবেলার সেই পুকুর, সেই জল, সেই পাকুড়-বটের সারি। এখনও জলে ঢিল পড়লে আগের মতই জলের তরঙ্গ ছড়িয়ে পড়ে সারা পুকুর জুড়ে। কোনও কিছুই পাল্টায়নি , শুধু পাল্টে গেছে বছর পঁচিশের তোতনের জীবন। কিছুই হল না। না পড়াশোনা, না খেলাধুলা। একটা প্রিন্টিং প্রেসে কাজ করে বটে, সেও তেমন জুতসই নয় । তিন ভাই বোনের মধ্যে সবচেয়ে ছোট তোতন। কিন্তু বাড়িতেও তেমন পাত্তা পায় না। চেষ্টা করে অনেক, কিন্তু ফলাফল হয় বিরাট শূন্য।
” কী রে জলে ডুবে মরবি নাকি! একমাস পরে মর, পুজোটা পার করে ।” তোতনের ছোটবেলার বন্ধু বিকাশ ওর পাশে বসে কাঁধে হাত রেখে বলল।
” ধ্যাৎ যা তো , বিরক্ত করিস না ।” বিকাশকে বলল তোতন।
” কী হয়েছে এত আপসেট কেন? আমায় দেখ কোনও কাজকাম নেই তবু দাঁত কেলিয়ে থাকি।” হাসির ভঙ্গি করে বলল বিকাশ।
” জীবনে কিছু হল না রে। না পারলাম বাড়ির লোকের কাছে ভালো হতে, না আত্মীয়দের কাছে , না অফিসে। একজনকে ভালবাসি ,সেও সিগন্যাল রেড করে রেখেছে! কাউকেই খুশি করতে পারলাম না !” হতাশ গলায় বলল তোতন।
” নিজেকে কখনও খুশি করার চেষ্টা করেছিস?” বিজ্ঞের মতো প্রশ্ন করল বিকাশ।
“কী বলতে চাইছিস !” অবাক হয়ে জানতে চাইল তোতন।
” নিজেকে খুশি কর , কারুর ক্ষতি না করে আর তোর ঘুমন্ত মনের বোধন কর । দেখবি বাকি সব ঠিক হয়ে গেছে। নাহলে নিজের রক্তও যদি তুই কাউকে খেতে দিস দেখবি সেখানেও কিছু লোকে বলবে নুনটা একটু কম ছিল।” দার্শনিকের মত বলল বিকাশ।