অবশেষে যখন মৌসুমী বায়ুর আগমনে গ্ৰীষ্মের দাবদাহ থেকে পাওয়া যায় তখন কত তৃপ্তি আসে মনে । বৃষ্টি মানেই মনের মধ্যে এক আলাদা অনুভূতি ,সে আষাড়ের মুষলধারা হোক কিংবা শ্রাবনের ইলশে গুঁড়ি ।
বৃষ্টিতে প্রকৃতি কেবল স্নান করে না, বষ্টিতে ধুয়ে যায় মনের ক্ষত দাগ আর উষ্ণ আবেগগুলো ভিজে যায় । যাই হোক ছোটোবেলার কাগজের নৌকো আর মাঠের কাদায় ফুটবল ছেড়ে পরিনত জীবনের এক মহাসংগ্ৰামে আবার পেলাম বৃষ্টিকে। তবে তৃপ্তি নয় হয়তো বেদনা কিংবা অন্যকিছু ।
এমনই একটি দিন ছিল আষাঢ়ের , সারা দিন-রাত অঝোরে বৃষ্টি ঝরছে । বিপাশা তখন জানলার ধারে আপনমনে বাইরের প্রকৃতিকে লক্ষ্য করছে । ঝাপটা কেটে হয়তো ভিজেই যাচ্ছে, সেদিকে তার খেয়াল নেই । জানলার কাচে জলের বিন্দুগুলোর গড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে সে ও আঙ্গুল দিয়ে উপর থেকে নীচে হাত ঘষছে । তার লুকোনো তখন কি চলছে তা জানি না, তবে যা বুঝলাম তাতে মনে হয় এই বৃষ্টি এক দমকল তার কাছে ।মনের দগ্ধ আগুন নেভাতে চাইছে কিন্তু পারছে কই !
পারবে কি করে চিতার জ্বলন্ত কাঠগুলোতো এখনো বৃষ্টির কনায় সোঁ সোঁ আওয়াজ করছে । বিয়ের একটি বছর গড়ালো না, সাদা শাড়ি হলো তার ভূষন । রূদ্ধশ্বাষ এ নগরীর বোবা মনের আর্তনাদ আর আকুল মিনতি কেউ বোঝেনি , ঈশ্বর তো ’নয় । বৃষ্টি সে রাতে থামেনি । বিপাশা তখন একাকি রাতে ল্যম্পের দপদপে আলোয় স্বামীর স্মৃতিগুলো হাতরাচ্ছে আর চোখ দুটি দিয়ে বান ভাঙা অশ্রুর ধারা গড়াতেই আছে ।
হঠাৎ ঝড়টা বেড়ে গেল , বৃষ্টি বেড়ে প্রায় দ্বিগুন । হঠাৎ তার মনে হলো দরজায় কেউ ধাক্কা দিচ্ছে। চাপা বেদনা নিয়ে সেই কন্ঠে বিপাশা বলে উঠল, “কে “? উত্তর এলো না । মনের ভুল ভেবে চুপ করে গেল কিন্তু আবার সেই পুনরাবৃত্তি ।
অবশেষে এলোচুলে, সাদা শাড়ির আঁচল মাটিতে টেনে টেনে এগিয়ে । দরজার ফাঁক দিয়ে ঝলসানো বিদ্যুতের আভায় সে যা দেখলো তাতে সে হতভম্ব । এ ছায়ামূর্তি তার অপরিচিত নয়, এ যে তারই আষ্ঠে পৃষ্ঠে জড়ানো চাদর ছর মতো , এ যে তার বসন্ত ……
এ— কি– তু তু তু মি, কখন এলে ? এক উল্লসিত মনে তারে ছুটে জড়িয়ে ধরতে গেল কিন্তু পারল কই, সে তো বহু আগেই মৃত । মুখ থুবড়ে পড়লো উঠোনে আর সাথে সাথেই বিকট শব্দে এক আলোর তীব্রতা মিশে যাওয়া আর্তনাদের ক্ষীন শব্দ…………..
যে দিন বিপাশার স্বামী মারা যায় সেদিন তাকে শশ্মানে নিয়ে গিয়েও পোড়ানো যায়নি ঝড় বৃষ্টির কারনে । পরদিন দুজনের চিতা জ্বলল একসাথে ।
ভালোবাসা এভাবেই কেড়ে নিল বিপাশাকে, হয়তো বা ঈশ্বর তাই বিধান দিয়েছিলেন । অবশেষে দিনান্তে মেঘের ফাঁকে সূর্যের লাল রক্তিম আভাটা বেরলো কিন্তু বিরহের এ যাত্রায় ধূসর কালো ধোঁয়াতে তা ফ্যাকাসে হয়ে গেল ।
বৃষ্টি এবার এলো, তবে হালকা তার রোষ । তবু ধুয়ে দিল সব ছাইয়ের টুকরো । ঘটনা অনেক ঘটে কিন্তু তার সবকটির সঠিক ব্যাখা আজও বিলুপ্ত । সেখানে একটাই শুধু শব্দ……….দীর্ঘশ্বাস ।