বিনা টিকিটের পুরস্কার

গল্প #
বিনা টিকিটের পুরস্কার
—————————
অমিতাভ মুখোপাধ্যায়

গগন বাবু বৈকালিক আড্ডায় স্টেশনে বসে আছেন. এখনও অন্য সঙ্গী -সাথীরা আসে নি.
ইদানীং রেলে প্লাটফর্ম টিকিট চালু হয়েছে. আর পি এফ ও রেল পুলিশ বিনা টিকিটে কাউকে বসতে দিচ্ছে না. গগন বাবুদের সঙ্গীরা সকলেই সিনিয়র সিটিজেন. তাই ওরা কিছু বলে না. গগনবাবু আজ এখনও একা. আপ ডাউন ট্রেন আসছে, যাচ্ছে. নিত্য যাত্রীরা যে যার মত করে উঠছে, নামছে, স্টেশনে ট্রেন আসার আগে একদফা হৈ চৈ, বেরিয়ে যাবার সময় আর এক দফা ঘরে ফেরার ব্যস্ততা. একটু পরেই গগন বাবু লক্ষ করলেন আজ আবার সাদা পোশাকে চেকারও রয়েছে. পাঁচটা কুড়ির ডাউন ট্রেনটাও বেরিয়ে গেল. আজ মনে হয় কেউ আসবে না.
হঠাৎ গগন বাবু দেখলেন, কালো কোট পরে চেকারের দল তার দিকেই এগিয়ে আসছে.
-আপনি কী কোথাও যাবেন?
গগন বাবু -না. আমরা স্থানীয় মানুষ প্রতিদিনই বসি. সবাই অবসর নিয়েছি. কয়েক ঘন্টার জন্য এই চার নম্বরে বসি.গল্প করি.
-আপনি এই বয়সেও জানেন না বৈধ যাত্রী ছাড়া স্টেশনে বসা বেআইনি.
গগন বাবু -হ্যাঁ জানি.
একজন ছেলের বয়সী চেকার বলে উঠলো,
ফাইন দিন.
ফাইন?
গগন বাবু -কিসের ফাইন?
বিনা টিকিটে বসার জন্য.
গগন বাবু -এযে লঘু পাপে গুরু দণ্ড.
-ওসব আমরা বুঝি না.
ধীরে ধীরে মজা দেখার লোক জুটে গেল.
গগন বাবু -এই এলাকার সকলেই আমাকে চেনেন. স্টেশন মাস্টার পরিচিত , বুকিং স্টাফও মুখ চেনা.
এটা স্টেশন স্টাফদের বিষয় নয়.
হয় ফাইন দিন, নয়তো আপনাকে পুলিশের হাতে তুলে দিতে আমরা বাধ্য হবো.
গগন বাবুর ধৈর্যের বাঁধ এবার ভেঙে গেল.
আমাকে পুলিশ দেখাবেন না.
চলুন কোথায় নিয়ে যাবেন, কী কেস দেবেন, দেখি—-
গগন বাবু পকেট থেকে মোবাইলটা বার করে স্টেশন মাস্টার দাস বাবুকে ফোন করলেন.
পরের ফোনটি গেল তাঁর ছাত্র বান্ডেল জি আর পির ইন্সপেক্টর তরুণ বসুর এর কাছে.
কিছুক্ষণ পরেই দেখা গেল স্টেশন মাস্টার অমল দাস ছুটে আসছেন.
টিকিট চেকার ইন চার্জ কে?
-আমি মাস্টার মশাই.
অমল বাবু -আপনারা কাকে ধরেছেন?
কেন একজন বিনাটিকিটের —
-উনাকে ছেড়ে দিন,
উনি একজন অবসর প্রাপ্ত শিক্ষক. উনারা প্রতিদিনই বসেন.ওঁদের মধ্যে আমাদের প্রাক্তন রেল কর্মীও আছেন.
শিক্ষক বলেই কী সাত খুন মাপ?
অমল বাবু -এই স্টেশনএর দায়িত্বে আমি.
আমি বলছি, উনাকে ছেড়ে দিন. আর যদি অপ্রয়োজনীয় কোন কথা বলে থাকেন -ক্ষমা চেয়ে নিন.
পেছন থেকে অনেকেই বলে উঠলো, উনারা
স্যারকে ফাইন দিতে নয়তো পুলিশএ দেবে বলছিলো.
অমল বাবু, ছিঃ ছিঃ
একটা সিনিয়র সিটিজেনকে না জেনে শুনে আপনারা এতো কথা বলে ফেললেন?
উনি তো আমার কথা বলে ছিলেন.
চেকার ইনচার্জ-আমরা আইন সম্মত কাজই করেছি.
অমল বাবু, আপনারা মানুষ চিনতে ভুল করেছেন, সব সময় সব জায়গায় আইন চলে না. স্টেশনে যারা ত্রিপল খাটিয়ে হকারি করছে, তারাও তো বেআইনি.
যান দেখি -কত সাহস আপনাদের.
এবার চেকার বাবুরা প্রমাদ গুণলেন. দাবী উঠলো, এখনই হকারদের তুলে দিতে হবে.
চেকার বাবুরা কালো কোর্ট গুলো যে যার ব্যাগে ঢুকিয়ে নিলেন.
ঠিক এই সময়ই গগন বাবুর মোবাইলটা বেজে উঠলো, আমি তরুণ বলছি স্যার, চেকার ইনচার্জকে ফোনটা দিন.
বিপর্য্যস্ত গগন বাবু মোবাইলটা এগিয়ে দিলেন.
কী কথা হলো শোনা গেল না.
চেকার ইনচার্জ গগন বাবুকে মোবাইলটা ফিরিয়ে দিয়ে বিনয়ের সঙ্গে জানালেন –
আমাদের বড় ভুল হয়ে গেছে স্যার, মার্জনা করবেন.
গগন বাবু- আপনারাও কিছু মনে করবেন না. আজ থেকে আমাদের আড্ডাও উঠে গেল.
বিনা টিকিটে আর স্টেশনের ছায়াও মাড়াবো না.

.

AMITAVA MUKHOPADHYAY

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *