রণেশ রায়
বাহুর শৃঙ্খল বন্ধনে তোমায় না চাই
চেতনার আলিঙ্গনে যেন তোমায় পাই
হিয়ার মাঝারে নিশ্চিত তোমার ঠাঁই
তোমার প্রেমের খেয়ায় আমি বৈঠা বাই।
.
সুখের ঘোরে দুঃখের ডোরে
বিশ্বনাথ পাল
কেন কাঁদলি না রে মন
কেন কাঁদলি নারে মন।
হৃদয় জুড়ে প্রেমের নীড়ে
চির দুঃখের আবাহন ।
কেন কাঁদলি নারে মন।।
সুখের ঘোরে দুঃখের ডোরে
বাঁধা রইলি অনুক্ষণ ।
কেন কাঁদলি নারে মন।
আমার আমার করি মিছে
রইলি পরে সবার পিছে
সুখের শোকে দুঃখের দহে
রইলি যে মগন ।
কেন কাঁদলি নারে মন।
হল না বাসা ভালবাসা
ব্যর্থহল ভবে আসা।
সুখ পেতে তুই সখের হাটে
আগুন দিলি ভিজা কাঠে
সুখের শোকে দুঃখের দহে
রইলি যে মগন ।
কেন কাঁদলি নারে মন।
.
শরতের বাতাসে // সাবিহা শুচি
শরতের বাতাসে ভর করে ডানা মেলে থাকা
নিঃসঙ্গ গাঙচিল!
চোখে তার সূদুরের নীলে ভেঁসে থাকা সাদা
মেঘের প্রতিচ্ছবি।
আমি ও দাঁড়িয়ে, মিষ্টি- রোদলা,ঠাণ্ডা হাওয়ায়
হলদে নদীর পাঁড়ে।
চিকিচিকি জলে আল্পনার তুলিতে; মনে কবিতা খুঁজি; করছি সময় পার।
এসো তবে কথোপকথন হোক! কিছু মনে মনে,
মনের গহীন কোণে লুকিয়ে থাকা কথামালা
নিলাম গুছিয়ে;
লিখে নিলাম আবার মনেরই খাতায়;সম্মুখের
জলতরঙ্গ চোখে রেখে।
শুষ্ক -রুক্ষ -তৃষিত- ঠোঁটে;ভালোবাসাকে বাঁচিয়ে রাখার মানে বুঝে নিলাম।
জীবনের চড়াই উতরাঁই পেঁরিয়ে চাওয়া না পাওয়া যত !
ভালোবেসে, কাছে ডেঁকে রাখি ধরে; চাইব যদি
বাঁচতে, আমারই মতো!
গদ্যের আঙিনায় / / রণেশ রায়
গদ্যের আঙিনায়
কাব্যের ছন্দ খেলা করে,
কে যেন মরমে মরে
কেঁদে ওঠে অব্যক্ত যন্ত্রনায়,
দাবানল জ্বলে ওঠে সাহারায়
হৃদয়ের নীরব বেদনায়,
প্রেম মুখ লুকায় গোপনে
জঙ্গল কাছে ডাকে
নির্জন সোহাগে,
আকাশে নক্ষত্র
মূক হয়ে বার্তা হারায়,
পূর্ণিমার রাতে ঘোর তমসা
বাতাসে তুফান বয়ে যায় ।
সমুদ্র গর্জে ওঠে সহসা,
মেঘের ঘনঘটা আকাশে,
বর্ষা নন্দিনী এলোচুলে
নেমে আসে এ জীবনে,
পাহাড়ের ঝর্ণা কলকল রবে
মেলে এসে নদীতে
একান্ত নীরব আলিঙ্গনে,
কলি ফোটে বাগানে
শিশু মেঘ ওড়ে
পাখির ডানা বেয়ে ,
বুড়ো মেঘ ভয়ে পালায়
জীবন তরী ভেসে চলে
মানুষের কোলাহলে ,
কাব্যের করবী শোভা পায়
গদ্যের কবরী গুচ্ছে,
দুজনে মেলে এসে বাসরে
সুখদুঃখের মজলিস আসরে ।
মধুসূদন দত্তের লেখা অনুসরণে
সুখের সন্ধানে
[ ১৩ ] পৃ :৪২০-৪২১(১ ,২, ৩ সবকটি থেকে নিয়ে লেখা)
ভ্রমি সুখের সন্ধানে
তব সান্নিধ্যে আমি,
সুখের সুরাপাত্র হাতে
সুখ লোভী সানন্দে,
বিমুখ করিলে মোরে
নিরাশ যে আমি;
হতাশ কন্ঠে বলি,
কোথা সুখ
সুখ কোথা গেলি ?
কোথা হতে ! কোন সে সুদূর !
ভেসে আসে কন্ঠস্বর
`এ ভুবনে আনন্দ লুকায়ে,
তাহারি মাঝে সুখ বিরাজে
সুখ লভিবে আনন্দে
যদি সে সুখ থাকে ত্রিভুবনে`।
.
যদি পাওয়া যায়
আমি যাহা খুঁজি, ভ্রমি যাহা
তুমি কি দিতে পারিবে তাহা !
ফিরাওনা মোরে সই
লভিতে দাও যাহা পেতে চাই,
পেয়েছি যে সুখের সন্ধান
জেনেছি তোমায়,
তোমাতেই সুখ
সুখ বিরাজে হেথায়
`যদি ত্রিভুবনে
কোথাও তারে পাওযা যায়`।
আমি লোভী সুখ
আমি আনন্দ পিপাসী
আমি সুখের সন্ধানী
আমি লভি সুখ
তব আলিঙ্গনে, তব চুম্বনে,
ইহা হতে সুখ নাহি এখানে
`যদি আনন্দ সুখ থাকে এ ভুবনে`।
.
গদ্যকবিতা – বিশ্বাসঘাতক মানব
বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে অসংখ্য সৌরজগত আছে বলে বিজ্ঞানীদের দাবী কিন্তু এখনও পর্যন্ত আমাদের পৃথিবীতেই প্রাণের অস্তিত্ব আছে।এই সুন্দর পৃথিবী যেন সৃষ্টিকর্তা পরম মায়া মমতা ও ভালোবাসা দিয়ে স্বর্গের মতো সুন্দর করে গড়েছেন । মানুষের বসবাসের উপযুক্ত পরিবেশ করে দিয়েছেন। কিন্তু মানুষ আপন সুখের তরে এর ওপর অত্যাচার করে চলেছে। বেড়েছে দূষণ। পৃথিবী আজ ধ্বংসের পথে। এই নিয়ে আমার লেখা “বিশ্বাসঘাতক মানব”।
– মলয় চন্দন মুখার্জ্জী
ব্রহ্মাণ্ডের একমাত্র স্বপ্নের গ্রহ এ বসুন্ধরা।
এ ধরণী স্বর্গসম করে গড়েছেন সৃষ্টি কর্তা—-
শ্যামল বনানী,নদী, ঝরণা,ভূধর,প্রান্তরে।
সুধানদী বইছে হেথা আপনমনে—
গাছেতে ফুল রঙবাহারী,মৃদুমন্দ বইছে সমীরণ,পাখির কলকাকলিতে মুখরিত —
এ হেন স্বপ্নের মায়াবন পরম মায়া মমতায়, ভালোবাসা দিয়ে রচেন সৃষ্টিকর্তা—— জীববৈচিত্রের অপূর্ব সমাহারে।
প্রভাতে নিয়মমতো ওঠে নবারুণ——
মিষ্টি আলোয় ভরিয়ে তোলে দিকদিগন্ত—
জীবকূলেও আশার আলো সঞ্চারিত হয়।
কখনও মেঘ,কখনও বৃষ্টি—-
সৃষ্টি বাঁচাতে অনলস প্রচেষ্টা নিরন্তর।
দিবসের শেষে ধীরে ধীরে সন্ধ্যার আঁচল ছড়িয়ে আসে মায়াবিনী রাত——-
পরমাদরে মায়ার যাদুতে সকলকে সোনার কাঠি ছুঁইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেয়—-
দিবসের ক্লান্তি দূরীভূত করে নবশক্তি সঞ্চার করে।
এ সব আয়োজন ছিল হে শ্রেষ্ঠ জীব মানুষ তোমাদেরই জন্য।
তোমাদের বিশ্বাস করে—
বুদ্ধিমান জীব করে—-
তোমাদেরই সুখের তরে এ বসুমতী সুন্দর করে সাজিয়ে তোমাদের হাতে তুলে দিয়েছিলেন।
আর আজ?
নির্মল সমীরণ বিষময় করে তুলেছো—-
চপলা তটিনী আজ আবর্জনা, বিষে ক্লেদাক্ত।
শ্যামল বনানী ধ্বংস করে তোমরা নিরীহ বন্যপ্রাণীর জীবনও সংকটে ফেলেছো—-
হে মূঢ়মতি মানব আপন সুখের তরে দিবারাত্র তারে করছো অত্যাচারিতা, লাঞ্ছিতা—-
বাতাসে ছাড়ছো বিষ,সুন্দর বৃক্ষরাজি ছেদন করে গড়ে তুলছো সুরম্য প্রাসাদ।
এ বসুমতী আজ দূষণ জ্বালায় জ্বলছে–
সে অত্যাচারিতা,লাঞ্ছিতা!
কান পেতে শোনো তার হাহাকার!
বাস্তুতন্ত্র আজ ভারসাম্য হারাচ্ছে,হারিয়েছে ঋতুবৈচিত্র।
নিদারুণ উষ্ণায়ণে মাতা বসুমতী ক্রন্দনরতা।
সৃষ্টিকর্তার পরমাদৃতা কন্যার এ লাঞ্ছনা সহ্য করতে না পেরে একদিন তার কাছে তোমাদের জবাবদিহি করতে হবে,হে মানব!
তখন কি জবাব দেবে, হে বিশ্বাসঘাতক মানুষ ?
.
সৃষ্টির পথে-পথে – কিশলয় মিত্র
এই সৃষ্টির পথে তোমার
অসীম কৃপা
তুমি দিয়েছো ভরে রিক্তকলশ
হে বিধাতা।
(তোমার)বিচিত্র মানুষের মাঝে
আজও কিছু দুঃসাহসী প্রাণ,
অকপটে বিলিয়েছ
নিজেকে।
আজও কেন তাদের সামনে
আসেনি শিক্ষার আলো
প্রস্ফুটিত দুটি তারার মতো
জ্বলজ্বলে চোখগুলো
সামান্য দাবি তার,
কেবল দু’বেলা পেট চালাবার।
এই সৃষ্টির পথে তোমার
অসীম কৃপা
দিও পূর্ণ করি রিক্ত কলশ
হে বিধাতা,
তোমা আশীষে ধন্য হউক
তাদের হৃদয়বীণা
আলোকরোশনাই ভরে উঠুক
সুকুমার প্রাণহিয়া।
.
তুমি – মাধব মন্ডল
অনেক দিন
অনেক দিন থেকে
রাতে তোমার এলোমেলো ঘুম
আগডুম বাগডুম কথাঝুরি নামে
কালও তুমি ছুরিতে হাত রাখলে
আমাকে অকথা হুমকি কথার পর
কি বলব
তোমার চোখে অন্য আলো!
হে আলো
তুমি আগুন হও
আমাকে পোড়াও
আমার হাড় রক্তের স্ক্যানে মুখ রাখ
দেখবে
দেখবে ভিখিরি আমি
শুধু আশ্রয় খুঁজি !!
.
রণেশ রায় // চিনে নিই
তুমি কাছে থেকেও কত দূরে,
ঘরের দরজা অবাধ
যাতায়াত দুবেলা
কোন বাধা নেই প্রবেশে
তাও কোথায় যেন বাধা,
ঘরেতে ঢুকেও ঢোক নি
প্রবেশ নিষেধ সে দুয়ারে,
মনের দরজাটা আজও খোলে নি
ধর্মান্ধতার প্রাচীরে রুদ্ধ
অবিশ্বাসের তালায় বন্ধ,
কেউ কাউকে আজও চিনি নি।
এবার সময়তো হলো
মনের দরজা খোল,
দুজনে দুজনকে চিনে নিই এসো,
তুমি আমি দুজনেই বিভ্রান্ত
মানবতা আজ আক্রান্ত।
হানাদার হানা দেয় দুয়ারে
এসো আর বিভ্রান্তি নয়
রুখতে তাকে জোটবাঁধি দুজনে
বিশ্বাসের উল্কিতে
চিনে নিই পরস্পরকে।
.
নির্বিবাদী বিবাদী আলাপচারিতা
হে বন্ধু নির্বিকার নির্বিবাদী
তুমি কেমন আছো?
ভালো নিশ্চয়,
অজাতশত্রু তুমি,
ভাতের অভাব নেই,
বিবাদে যাও না কারো সাথে
ছেলেটাও মানুষের মত মানুষ হয়েছে,
খারাপ থাকার কারণ থাকে না।
আরে বোলো না আর !
ভালো আর কোথায়?
চাকুরিটা ঝুলে আছে বোঁটায়
বৈশাখী ঝড় আসবে শুনছি
রোজই উপদ্রপ লেগে আছে,
কেমন যেন সবসময় আশঙ্কা
কি হয়, কি হয়!
রাত বেরাতে বোমার শব্দ
কখন যে ঘাড়ে এসে পড়ে!
বাড়িতে দুজনে একা
ছেলে মেয়ে কেউ থাকে না কাছে,
অফিস বাজার ডাক্তার
সবই এক হাতে সারি,
স্ত্রী অসুস্থ, যায় যায় আর কি!
বলতো কেমন করে ভালো থাকি।
হে বন্ধু বিবাদী ব্যাউন্ডুলে,
তা, তুমি কেমন আছো শুনি?
আমার আর থাকা দাদা !
আমি যে বিবাদী,
সবার সঙ্গে বনে না আমার,
এটা ওটা নিয়ে কুরুক্ষেত্র;
এরই মধ্যে বন্ধুবান্ধব আড্ডা,
তোমরা তো বলতে বাউন্ডুলে;
তবে হ্যাঁ বন্ধুর বন্ধুত্বে শত্রুর শত্রুত্বে
মন্দ নয় ভালোই আছি,
আর জীবনের ঝামেলাটা তো
সইয়ে নিয়েছি, সয়ে গেছে,
সে তো আমার জীবন সঙ্গিনী ।
ছেলেটা সেরকম মানুষ হয়নি,
ওতে অবশ্য তেমন দুঃখ নেই,
একটা ছোট চাকরি করে
ওতেই সংসার চলে কোন মতে,
যেমন চলতো তেমনি আর কি।
.
সার্কাস – সুদীপ ঘোষাল
পড়তে পড়তে বইয়ের পাতা ঝাপসা
কিশোরীর মনে ভয়ের শিকল
পরীক্ষা,পরীক্ষক আর চার দেওয়াল
এদিকে সার্কাস চলছে রমরমিয়ে
কত মানুষের ভিড়
শুঁড় দোলানো হাতির ডাক
,ওদের বই নেই,পড়া নেই
তবু ওরা আলোর ফেরিওয়ালা
ভয়ের কান্ডারী যারা
তারা কি সার্কাস দেখেছে
শান্তিনিকেতনের ভাষা পড়েছে
কিশোরী ভাবুক হয়ে যায়
শিক্ষার পদ্ধতি সার্কাসের কাছে হেরে যায়
বইয়ের পাতা জুড়ে বারের খেলা…