চেনা- অচেনার কোলাহলে ,প্রচন্ড ভিড়ে ঠাসা কামরা নিয়ে অফিস টাইমে ব্যস্ততায়, দ্রুত গতিতে ছুটে চলেছে একটি ট্রেন।।
আর সেই ভীর কোলাহল ভেদ করে বিভূতি বাবুর কানে এলো একটি অচেনা কণ্ঠস্বর,
“দুলু কাকা ভালো আছেন তো?”
বিভূতিবাবু অবাক হয়ে পেছনে ঘুরে তাকালেন ,তার ডাক নাম ধরে কে ডাকল, নাকি অন্য কাউকে? একটু পরেই নজরে পড়লো হাতদূয়েক দূরেই একজন ,বয়স আনুমানিক চল্লিশ কি পঁয়তাল্লিশ হবে,
তার দিকে তাকিয়ে আছে। লোকটির চোখে চোখ পড়তেই আবার জিজ্ঞেস করল কি চিনতে পারছেন না কাকা?
বিভূতি বাবু একটু ইতস্তত হয়ে উত্তর করলেন, না সত্যিই চিনতে পারছি না ,কে আপনি আমার ডাকনামটা ই বা জানলেন কি করে?
কাকা,আমি দীপক। আপনাদের কারখানায় যে দারোয়ান ছিল প্রফুল্ল বাবু, আমি ওনার ছেলে , আমার মা এর নাম ছায়া, আমি দীপু। তুমি করেই বলুন আমাকে।
আপনাদের পাশের পাড়াতে থাকতাম ।
বিভূতি বাবু বললেন, হ্যাঁ নামটা চেনা চেনা লাগছে তবে ঠিক মনে করতে পারছিনা, আসলে কতজনই তো কারখানায় কাজ করতো আর তাছাড়া বয়স হয়েছে আমার, অত কি আর মনে থাকে বল? পরক্ষনেই বিভূতিবাবুর নিজের মনে বলে উঠলেন, আচ্ছা এই তাহলে প্রফুল্লর ছেলে ,যে ছেলেকে একদিন আমি……
সম্বিত ফিরল দীপকের ডাকে।কি কাকা চুপ করে আছেন কেন, চেনার চেষ্টা করছেন বুঝি ?
বিভূতি বাবু বললেন, হ্যাঁ ওই আর কি ।
তা তুমি থাকো কোথায়, যাচ্ছোই বা কোথায়?
দীপক উত্তর দেয়,থাকি দমদমে ,যাচ্ছি একটু সেন্ট্রাল এর দিকে।
কাকা আপনাকে যদি একটা ঘটনা মনে করিয়ে দেই, তাহলে হয়তো আমাকে মনে পড়বে আপনার। বিভূতি বাবু আমতা আমতা করে বললেন না না এখন থাক ,একদিন বাড়িতে এসো তখন সব শুনবো এখন এই কোলাহলের মধ্যে থাক ওসব কথা।
বিভূতিবাবু আবারো মনে মনে বললেন তুমি কোন ঘটনার কথা বলে মনে করাতে চাইছ আমি বুঝতে পারছি।
এদিকে দীপক বিভূতিবাবুর কথা শুনে হা হা করে হাসতে হাসতে বলল ,কি যে বলেন কাকা ,বাড়িতে? ঠিক আছে, বলছেন যখন একদিন চলে যাব ।
বিভূতিবাবু অপেক্ষা করতে লাগলেন কখন সেন্ট্রাল আসবে ।
একটু পরেই সেন্ট্রাল আসতে, দীপক গেটের কাছে এগিয়ে যেতে যেতে বলল ,”কাকা নিশ্চয়ই যাবো, আপনাদের মিষ্টি খাওয়ানো বাকি আছে যে। আর কাকিমা কে বলবেন কিন্তু আমার সাথে দেখা হওয়ার কথাটা।
বিভূতি বাবু হাফ ছেড়ে বাচলেন, ছেলেটা যে কি বলে গেল তার অর্ধেক কথাই কানে গেল না
সপ্তাহ দুয়েক পরে দীপক সত্যি সত্যি একদিন উপস্থিত হল বিভূতিবাবুর বাড়ি ।যদিও মন থেকে তার আর কোনদিনই এ বাড়িতে আসার ইচ্ছে ছিল না ।কেননা, তার পক্ষে ভোলা সম্ভব না অপমানের দিনগুলির কথা। দুলু কাকা ভালোই জানত তার ছেলে লালটু কেমন কিন্তু তাও দীপককে মারধোর করতো দোষী ভেবে ।মা কে যাতা বলত কাকিমা।
দীপক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে নিজের মনেই বলল ,গরীব ছিলাম যে।
এসব মনে করতে করতেই, কলিংবেলটয় চাপ দিল সে। একটু পরেই একটা বাচ্চা ছেলে এসে দরজা খুলে দিয়ে জিজ্ঞেস করলো কাকে চাই, কে আপনি ?
দীপক বলল,বিভূতি বাবুআছেন বাড়িতে?
বল দীপক এসেছে।
বাচ্চাটি ছুটে গিয়ে ভিতরে বলল ,দাদু তোমাকে দীপক নামে কেউ একজন ডাকছে। বিভূতি বাবু ভাবতেও পারেননি দীপক সত্যি ই চলে আসবে তার বাড়িতে ।
তবুও মুখের ভাব প্রকাশ না করে দীপক কে সামনের ঘরটায় বসতে বলে ভেতরে চলে গেলেন ।
দীপক বসে বসে চারদিক দেখতে লাগলো । ঐতো সেই টেবিলটা, যে টেবিলটার উপর থেকে পড়ে গিয়েছিল সে। আগের অনেক জিনিস ই আছে কিন্তু আগের মত ঘরবাড়ির চাকচিক্য নেই , বোঝা যাচ্ছে অনেক বছর এই ঘর বাড়িতে রং করা হয়নি। মনে মনে হাসলো দীপক, সত্যিই কি অহংকারী ই না ছিলেন দুলু কাকিমা ।
মনে আছে ,মা একবার একটা ছাপা শাড়ি কাকিমাকে পুজোয় দিয়েছিল , কাকিমা নেয়নি,মাকে বলেছিল,” ছায়া তুমি তো জানো, আমি বাড়িতেই ওসব ছাপা টাপা বিশেষ পড়িনা।আর পুজোতে,? জানোই তো আমার পছন্দ । ওটা বরং তুমি ই রেখে দাও।
মা সেদিন খুব কষ্ট পেয়েছিল।
দীপক এসব পুরনো কথা ভাবছে, ইতিমধ্যেই প্লেটে মিষ্টি আর জল হাতে নিয়ে একজন মহিলা ঘরে ঢুকলেন।দীপক চমকে উঠল তাকে দেখে, এতো নীলা। কিন্তু ও দুলু কাকার বাড়িতে কেন,তাহলে কি??!!
নীলা ও অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে দীপকের দিকে।
দেখে মনে হচ্ছে, সেও অবাক দীপক কে দেখে ,যেন কিছু বলতে চাইছে দীপক কে। কিছুক্ষণের মধ্যেই দুলু কাকা ও চলে এলো ঘরে ,কাকিমা কে সাথে নিয়ে, আর সেই বাচ্চাটিও সাথে। কাকিমাকে দেখে বোঝা গেল খুব একটা খুশি হননি তার আসাতে,তবুও মুখে নকল হাসি নিয়ে বললেন দীপু তুই এসেছিস ,কি যে আনন্দ হচ্ছে আমার ,তোর কাকা সেদিন তোর কথা বলছিল ।
দীপক প্রণাম করলো না কাউকেই,যদিও তার মা তাকে এই শিক্ষা দেয় নি তবুও মন থেকে ইচ্ছা করল না ওদের প্রণাম করতে তাই মুখে হাসি নিয়ে বললো হ্যাঁ কাকিমা, তোমাদের মনে থাকবে না তা কি হয় ?মনে আছে বলেই না ঐদিন কাকাকে ট্রেনে দেখে চিনতে পারলাম ।
নীলা চলে যাওয়ার উপক্রম করলে, কাকিমা বললো দাড়াও বৌমা তোমার সাথে আলাপ করিয়ে দি। নীলা দাঁড়িয়ে গেল একপাশে।
কাকিমা বললো “এই আমাদের লাল্টুর বউ, তুই হয়তো চিনে থাকবি।
ওই যে , তোদের পাড়ার প্রতুলবাবুর মেয়ে রে।
প্রতুল বাবুই সম্বন্ধটা এনেছিলেন ,আমরা আর না করি নি।
নীলা হাতজোড় করে নমস্কার জানালে, দীপকও একজন অচেনার মতো হাত জোড় করে নমস্কার জানিয়ে সম্মান জানালো নীলাকে আর ভাবতে লাগলো , এই নীলাকেই মায়ের খুব ইচ্ছে ছিল ঘরের বউ করে আনার, নীলাদের বাড়ি থেকেও ওর আর নীলার সম্পর্কটা একটু হলেও মেনে নিয়েছিল। কিন্তু তারপর কি যে হলো, হঠাৎ করেই নীলা কথা বলা ,যোগাযোগ করা বন্ধ করে দিল ওর সাথে। প্রতুল কাকাও কেমন এড়িয়ে চলতে লাগলো। দমদমে চলে আসার পর আর যোগাযোগ ই রইল না। নীলা হয়তো সবকিছুই জানে কিন্তু নীলার থেকে কি সেসব আর জানা সম্ভব এখন।
দুলু কাকিমার ডাকে ভাবনায় ছেদ পড়ল দীপকের–
দীপু, আর এই যে আমার নাতি।
দীপক বাচ্চাটির গাল টিপে আদর করে জিজ্ঞেস করল নাম কি তোমার ,কোন ক্লাসে পড়ো??
বাচ্চাটি উত্তর দিল,”আমার নাম বিল্টু, ভালো নাম নিলয়, পড়ি ক্লাস থ্রি তে।
আচ্ছা আঙ্কেল তুমি কোন ক্লাসে পড়ো?
দীপক হেসে উঠে বলল,”আমি পড়াশোনা করিনা না কাকু।
দুলু কাকিমা বলল , দীপু মিষ্টিটা খেয়ে নে, এই পাড়ার দোকান থেকে আনা ।
দিপু বলল, ওহো কাকিমা কথায় কথায় ভুলেই গেছি, আমিও তো তোমাদের জন্য মিষ্টি এনেছি। এই বলে ব্যাগ থেকে হলদিরামের প্যাকেট দুটো কাকিমার হাতে দিয়ে বলল খেও তোমরা সবাই।
প্লেট থেকে একটা মিষ্টি মুখে দিয়ে দীপক বলল আর খাব না কাকিমা, আমি আর এখন এসব লোকাল দোকানের মিষ্টি টিষ্টি বিশেষ খাই না , খেলে ওই হলদিরাম বা বড় কোনো জায়গা থেকে কিনি, বুঝলে কাকিমা।
একথা শুনে বিভূতি বাবুর বউয়ের মুখ খানা একেবারে গম্ভীর হয়ে গেল।
দীপক মিষ্টির প্রসঙ্গ বাদ দিয়ে লালটুর কথা জিজ্ঞেস করল,” আচ্ছা কাকিমা, লালটু কোথায়, লাল্টুকে দেখছি না তো? অফিসে বুঝি??
দুলু কাকা উত্তর দিল ,অফিসে মানে, ওই বজ বজ এ একটা কারখানায় কাজ করে ও। তবে নতুন কাজও খুঁজছে, কারখানাটা বন্ধের মুখে প্রায়। এসে যাবে একটু পরেই।
ও অন্য জায়গায় কাজ করছে, কেন তোমাদের ব্যবসার কি হলো, তোমাদের কারখানা কি বন্ধ??
বিভূতি বাবু দুঃখ করে জানালেন, আমি খুব অসুখে পড়েছিলাম আর লালটুর তো কোনদিনই এসব দিকে মন ছিল না, তাই আর ব্যবসাটাকে চালাতে পারিনি, কারখানাটা বন্ধ হয়ে যায়।
*****
দীপক মানে ,কোন কাজ ই ছোট না, কারখানার কাজ করেই তার বাবা তাকে কষ্ট করে মানুষ করেছে ।তবুও মনে মনে ঠাকুরকে ,” ঠাকুর পাপ দিও না বলে দুলু কাকিমা কে বলল, সে নয় বুঝলাম কিন্তু কি বলছ কাকিমা তোমাদের বাড়ির ছেলে কারখানায় কাজ করছে?! কোন কাজকে আমি ছোট মনে করি না তবুও কারখানায় কাজ করে গরিব ঘরের লোকেরা, অশিক্ষিত লোকেরা।
আচ্ছা তুমি চিন্তা করোনা আমি দেখছি আমার অফিসে কিছু একটা ব্যবস্থা করতে পারি কিনা ওর। শত হলেও ছোটবেলার বন্ধু । এই গত মাসেই কয়েকজনকে নিয়েছি আগে জানলে ওকে নিতাম।
আচ্ছা কাকিমা উঠছি,আর এক জায়গায় যাওয়ার কথা আছে, সুযোগ হলে আবার আসব ।
লালটুর সঙ্গে তো দেখা হলো না ।আর হ্যাঁ আমাদের বাড়িতে তোমাদের আসার আমন্ত্রণ রইল ।এ কথা বলে দীপক পকেট থেকে একটা ভিজিটিং কার্ড বার করে বিভূতিবাবুর হাতে দিল। কাকা এতে আমার ফোন নাম্বার দেওয়া আছে, যেকোনো সময় ফোন করে চলে আসতে পারো ।
বিভূতি বাবু কার্ড ডিটেলস দেখে একেবারে হাঁ হয়ে গেলেন।
একবার কার্ড টার দিকে আরেক বার দীপকের দিকে তাকাতে লাগলেন।
দীপক গেট দিয়ে বেরোবার সময় ,গেটের কাছে গোলাপ গাছটা দেখে ,একটু দাঁড়িয়ে গেল। দেখতে লাগল গোলাপ গাছ টা, এই গাছ টা তো, সে ই বসিয়েছিল।।
আর এদিকে বিভূতি বাবুর বউ দরজা বন্ধ করতে করতে বিভূতি বাবুকে বলল, দেখলে কেমন বলল লোকাল দোকানে মিষ্টি খাই না, দেখে তো মনে হচ্ছে অবস্থা বেশ ভালোই ফিরেছে ওদের ।
গরিব থেকে বড়লোক হয়েছে কিনা তাই এত অহংকার ।
দুলু কাকিমা বরাবরই খুব জোরে কথা বলেন, তাই একথা দীপকের কানে বেশ পরিষ্কার ভাবেই গেল,
দীপক গেট বন্ধ করতে করতেই উত্তর করলো, গরিব থেকে আজ যেটুকু অবস্থা ফিরেছে আমাদের, তার জন্য আমার অহংকার হয় না তবে গর্ব বোধ হয় ।আর সে গর্ব হয় মায়ের জন্য ,যে আমাকে কষ্টের মধ্যেও সঠিকভাবে মানুষ করে বড় করেছেন আর আমার অহংকার থাকলে আমি ঐ কামরার মধ্যে সবার মাঝে বলতে পারতাম না যে, বাবা তোমাদের কারখানায় দারোয়ানের কাজ করতো, সাথে আমার এক বন্ধুও ছিল ট্রেনে।
তোমরা কাজটাকে ছোট মনে করলেও আমি করি না। আসলে তোমরা মানতে পারো না বা মানতে চাও না গরিব মানুষ বড় হতে পারে, উন্নতি করতে পারে। তোমাদের ইগোতে লাগে তাই তোমরা সেটাকে অহংকার ভাবো ।
তবে আমার মা আমাকে শিখিয়েছে, আমি যেন ছোটবেলার কষ্টের দিনগুলি ভুলে গিয়ে অহংকারী না হয়ে পরি,আর গরিবদের ঘৃণা না করি।
কাকিমা তুমি আমার মায়ের সমান তবু একটা কথা বলি গরিব হওয়া কোন লজ্জার ব্যাপার না ,
******
বিভূতিবাবুর বাড়ি থেকে চলে আসার ঠিক সপ্তাহ খানেকের মাথায় ,একদিন নীলা হঠাৎ করে দীপকের অফিসে উপস্থিত হল।
দীপক অবাক হয়ে গেল নীলাকে দেখে ,বলল কি ব্যাপার নীলা তুমি হঠাৎ?
নীলা আস্তে করে উত্তর দিল, দীপুদা তোমার সাথে আমার অনেক কথা আছে ,সেদিন বলতে পারিনি আর কোনদিন তোমাকে দেখতে পাব সেটাও আশা করিনি ।
কেন নীলা ,তুমি কি আমাদের খোঁজ করেছিলেন চলে আসার পর?
হ্যাঁ করেছিলাম ,তবে বাবা নজর রাখত বলে,বেশি পারিনি ।
আমি রাজি ছিলাম না এ বিয়েতে ,বাবা দুলু কাকার কথায় বিশ্বাস করে এই সম্বন্ধে রাজি হয় আর মা দেখল ওদের পয়সা আছে।
দীপক কিছুক্ষণ চুপ থেকে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল ,হ্যাঁ আমরা তো খুব গরীব ছিলাম। ভালোই করেছে
তোমার মা-বাবা ।
কিন্তু দুলু কাকা কি বুঝিয়ে ছিলো, তোমার বাবা-মাকে ? সে তোমাকে পরে বলব দীপুদা, এখন আমি একটা অন্য কথা বলার জন্য এসেছি। বেশি সময় থাকতে পারবো না।
দীপক,নীলাকে কুল হতে বলে , বলল কি দরকার বল।
নীলা ছল ছল চোখে দীপকের দিকে তাকিয়ে বললো, দীপুদা একটা চাকরি দিতে পারো তুমি আমাকে।
তাহলে ছেলেটা কি নিয়ে বাঁচতে পারি কোথাও চলে গিয়ে। ওরা সবাই মিলে আমার উপর খুব অত্যাচার করে ,বাবা মারা যাবার পর, মাকে একা পেয়ে ওরা সবসময় আমাদের বাড়িটা লিখে দিতে বলে আমাদের নামে। লালটু একটু ও পাল্টায়নি , আগের মতই জুয়া খেলে, ড্রিঙ্ক করে।
সব টাকা এসবের পেছনে ওড়ায়। ওর মালিক এই কারণে ওকে কে আর রাখবে না কারখানায় ।
আমার শ্বশুর-শ্বাশুড়ি তোমাকে মিথ্যে কথা বলেছে। একটা যেকোনো চাকরি দাও না, তোমার অফিসে।
আমি আর পারছিনা,
দীপু, নীলাকে শান্ত হতে বলে, জিজ্ঞেস করল,চাকরি পেলে তুমি বেরিয়ে এসে যাবে কোথায়?
তা জানি না তবে ওখানে আমিও থাকতে চাই না, ছেলেটাকে যেভাবে হোক মানুষ করতেই হবে ।
আচ্ছা নীলা তুমি সামনের সপ্তাহে একবার পারলে এসো হ্যাঁ।
আরে,তোমাকে তো কিছু অফার ই করা হয়নি কথায় কথায় ,কি খাবে বলো?
না দিপুদা, আজ থাক।এর পরদিন এসে খাব , তুমি যা খাওয়াবে।
আজ যাই,খুব দেরি হয়ে যাবে বাড়ি ফিরতে। ছেলেটাকে মায়ের কাছে রেখে এসেছি, দেরি হলে খুঁজতে থাকবে।
দীপু নীলাকে আশ্বস্ত করে বলল, তুমি চিন্তা করোনা আমার ড্রাইভার তোমাকে বাড়ি পৌঁছে দেবে, অবশ্য এতে তোমার যদি কোন প্রবলেম না থাকে।
না দীপুদা থাক, আসছি কেমন।
দীপু,নীলার চলে যাওয়ার পথে চেয়ে রইল কিছুক্ষণ তারপর চোখ সরিয়ে নিল এই ভেবে, ওতো এখন পরস্ত্রী , আমার এভাবে দেখা ঠিক না।
****
দীপু বাড়ি গিয়ে মাকে সব ঘটনা বলল নিলা সম্পর্কে। বাণী দেবু বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পর বললেন, দীপু একটা কথা সত্যি করে বলবি, আমি তোর মা, সব বুঝি তাও তোর নিজের মুখ থেকে শুনতে চাই আচ্ছা তুই ওকে এখনও ভালবাসিস তাই না ? বিয়েটাও তো করলি না ওর জন্য।
দীপু বললো, থাক না মা এসব কথা। তুমিও তো ওকে খুব ভালোবাসতে।
না থাকবে কেন, ওকে আমাদের ঘরে আনতে পারিনি , কিন্তু আজ যখন জেনেছি, ও ভালো নেই তখন আমরা ওর জন্য তো কিছু করতেই পারি।
দীপু বলল, হ্যাঁ মা আমি আমাদের অফিসে ওর একটা জবের ব্যবস্থা করছি।
এরপর এলে ওকে নিয়ে আসিস , আমার ওকে খুব দেখতে ইচ্ছা করছে ।
পরের সপ্তাহে দীপক নীলাকে ওদের বাড়ি নিয়ে এল, বাণী দেবী নীলাকে জড়িয়ে কেঁদে ফেললেন নিজেকে সামলাতে না পেরে । নীলাও কেঁদে ফেলল আর দিপুর চোখটাও এ দৃশ্য দেখে ভিজে উঠলো। বাণী দেবী নীলাকে বললেন, কাঁদিস না মা, আমি দীপুর কাছ থেকে সব শুনেছি। সব জেনেশুনে , প্রতুল দা এই ভুল সিদ্ধান্ত নিলেন কিভাবে,।
ঠিক আছে যা হয়ে গেছে তা নিয়ে আর দুঃখ করিস না মা, এখন থেকে তোকে আর কিছু ভাবতে হবে না , এখন সব ভাবনা আমার আর তোর দিপুদার, তুই শুধু মন দিয়ে কাজ করবি অফিসে আর মাঝে মাঝে জেঠিমার কাছে চলে আসবি, এরপরে ছেলেকে নিয়ে আসিস একদিন, দেখব আমি
নীলা চোখ মুছতে মুছতে বলল , হ্যাঁ জেঠিমা নিশ্চয়ই আসব। আর ছেলেকেও নিয়ে আসব।
আজ আসি জেঠিমা।
দীপক পৌঁছে দেবার কথা বললে নীলা মানা করলো।
দীপু আবারো নীলার যাওয়ার পথে তাকিয়ে রইল।