# অণুগল্প — ফালতু
# গল্পকার — অভিষেক সাহা
অফিস থেকে বেরিয়েই বাসটা পেয়ে গেল তমাল। এমনিতেই অনেকটা রাত হয়ে গেছে। ঘড়ির কাঁটা প্রায় ন’টা ছুঁই ছুঁই। এখন বাসে প্রায় ঘন্টাখানেকের পথ। তারপর বাস থেকে নেমে মিনিট সাতেকের মত হাঁটা। তবে বাড়িতে পৌঁছাবে। করোনার জন্য ঘরে ঢুকতে প্রায় আধঘণ্টা সময় লাগবে। প্রথমে বাথরুমে গিয়ে সব পোশাক ছেড়ে, স্নান করে তবে মিলবে ঘরে ঢোকার ছাড়পত্র নিশার কাছ থেকে। এমনিতে নিশা খুব ভালো। নিশার মত স্ত্রী পেয়ে তমাল নিজেকে ভাগ্যবান মনে করে। কিন্তু যখন থেকে করোনা শুরু হয়েছে, পরিস্কার থাকার বিষয়ে নিশার সাবধানতা অনেকগুণ বেড়ে গেছে।
তবে আজ নিশা নয়, বিট্টুর জন্য মনের মধ্যে অস্বস্তি বোধ হচ্ছে তমালের। করোনা শুরুর পর থেকে তমাল আর নিশা বাড়তি খরচে লাগাম দিয়েছে। একটাকাও বাজে খরচ করার আগে দশবারভাবে । কিন্তু আজ আবেগে গলে গিয়ে তিরিশ টাকা বাজে খরচ হয়ে গেল। তিরিশ টাকা! তমালের তিন দিনের চা খরচ!
আজ অফিস ছুটির পর বেরোতে যাবার সময় দেখা হয় বিট্টুর সাথে। বিট্টু তমালের অফিসের পিওন। এখনও পার্মানেন্ট হয়নি। তাই মাঝেমাঝে একটু বাড়তি আয়ের জন্য এটা ওটা বিক্রি করে। আজ যেমন করল।
” আবির নিন না স্যার, আগামী কাল দোল, বৌদিকে দেবেন। একদম হার্বাল। স্কিনের কোনো ক্ষতি হবে না ।” অফিস থেকে বেরোনোর সময় একগাল হেসে তমাল কে বলে বিট্টু। তমাল পাশ কাটানোর অনেক চেষ্টা করে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এক প্যাকেট নিতেই হয় । যার দাম তিরিশ টাকা। আবিরে নিশার স্কিনে অ্যালার্জি হয়, আর তমালও এখন প্রায় নির্বান্ধব। তাই দোল খেলা হয় না। ব্যাগে রাখা তিরিশ টাকার আবিরের প্যাকেটটা যেন ওর বুকে কাঁটার মতো বিঁধছে।
বাসটা খুব ভালো চালানোয় একঘন্টার পথ পঁয়তাল্লিশ মিনিটে পৌঁছে গেল ও। মোড়ে র মাথায় চায়ের দোকানটা এখনও খোলা। চায়ের দোকানের সামনে রাখা বেঞ্চে একভাড় চা নিয়ে বসল তমাল।
” আরে তমাল, কেমন আছিস ?” চেনা কন্ঠে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখল ও। সুমিত ডাকছে। ওর ছোটবেলার বন্ধু। লকডাউনের সময় কারখানা বন্ধ হয়েছিল, এখনও খোলেনি। কী করে ওর সংসার চলে ওই জানে।
” কেমন আছিস ?” জানতে চাইল তমাল।
” ভালো না। কাজকর্ম তেমন নেই। রাস্তায় হকারি করছি। ছেলেটা আজ বলেছিল বাবা ফেরার সময় রঙ এনো। আর দেখ আজই তেমন বিক্রি হল না। এবার বল তো খাব না রঙ কিনব ?” হতাশা জড়ানো গলায় বলল সুমিত।
দোকানিকে বলে সুমিতের দিকে এক ভাঁড় চা এগিয়ে দিল তমাল। বলল ” দেখ সুমিত তোর আজকে তোর বিক্রি হয়নি ভালো হয়েছে। আমি তোর ছেলের জন্য এক প্যাকেট আবির এনেছি। তুইও কিনলে ফালতু পয়সা খরচ হত।”
আবিরের প্যাকেটটা সুমিতের হাতে তুলে দিল তমাল। সুমিতের মুখের দুশ্চিন্তার মেঘটা সরে গিয়ে চকচক করে উঠলো। তমাল মনে মনে ভাবল, জীবনে কোন কিছুই হয়ত ফালতু নয়। সব কিছুরই একটা কারণ থাকে। তমালের মনটা হঠাৎই আনন্দের রঙে রঙিন হয়ে উঠল।
অভিষেক সাহা