মুক্ত গদ্য — প্রভু যীশু ও গুড ফ্রাইডে কলমে — অভিষেক সাহা

খ্রিস্টভক্ত মানুষদের কাছে গুড ফ্রাইডে একটি পবিত্র দিন। ওইদিন খ্রিস্টধর্মের প্রবর্তক প্রভু যীশুকে ক্রুশবিদ্ধ করে হত্যা করা হয়েছিল। আর তার ঠিক দু’দিন পর অর্থাৎ রবিবার তিনি পুনরায় জীবিত হয়ে ওঠে।

সেইদিনটিকে বলা হয় ইস্টার সানডে। গুড ফ্রাইডে শোকের দিন আর ইস্টার সানডে আনন্দের।গুড ফ্রাইডে দিনটিকে হোলি ফ্রাইডে, গ্রেট ফ্রাইডে এমনকি কেউ কেউ ব্ল্যাক ফ্রাইডে বলেও চিহ্নিত করে থাকেন। মানবজাতির কল্যাণে এবং রক্ষার্থে তিনি তাঁর প্রাণ বিসর্জন দিয়ে ছিলেন, এমনটাই মনে করা হয়।

প্রভু যীশু হলেন পরম পিতার সন্তান। তিনি মানুষের অজ্ঞানতার অন্ধকার দূর করে প্রেম, ক্ষমা, ত্যাগ প্রভৃতি মানবিক গুণ সবার মাঝে বিকশিত করার জন্য মানব শরীর ধারণ করেছিলেন। শাসকের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে সাধারণ নিপীড়িত মানুষদের তিনি সেই শিক্ষাই দিতেন। আর সেই মানুষগুলোও তাঁকে ভালবেসে , নিজেদের রাজার আসনে বসিয়েছিলেন, ” ইহুদীদের রাজা ” । কিন্তু কট্টরপন্থী ইহুদীরা এটাকে মোটেও ভালোভাবে নেননি।

তারা এর তুমুল বিরোধিতা করেন। তাঁরা বলেন, সিজার ছাড়া কাউকে রাজা বলে মেনে নেবেন না। তাঁরা প্রদেশপাল পিলাতের কাছে অভিযোগ করেন। প্রভু যীশু যে নিরাপরাধ পিলাত তা বুঝতে পারেন, কিন্তু কট্টরপন্থী ইহুদীদের চাপে শেষ পর্যন্ত তাঁকে ক্রুশবিদ্ধ করে হত্যা করার আদেশ দেন। প্রদেশপালের সৈন্যরা প্রভু যীশুকে নিয়ে যান শাসক -ভবনে। তারপর তাঁর জামাকাপড় খুলে, মাথায় কাঁটার মুকুট পড়িয়ে, তাঁর গায়ে থুতু দিয়ে তাঁকে উপহাস করে।

প্রভু যীশুকে নিজের ক্রুশ বহন করতে এবং পিত্তি- মেশানো সুরা পান করতে বাধ্য করা হয় । তারপর তাঁকে ক্রুশবিদ্ধ করা হয়। কিন্তু প্রভু যীশু কোন প্রতিশোধ নিতে চাননি। বরং তিনি সকল অত্যাচারীর জন্য ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেন –” হে ঈশ্বর আপনি ওদের ক্ষমা করুন। ওরা জানে না ওরা কী করছে।” যেদিন প্রভু যীশুকে ক্রুশবিদ্ধ করা হয়েছিল সেইদিনটা ছিল শুক্রবার, যা গুড ফ্রাইডে বা হোলি ফ্রাইডে রূপে পালন করা হয়।

এর ঠিক পরবর্তী রবিবার প্রভু যীশুর পুনরুত্থান ঘটে। সেই দিন ইস্টার সানডে। গুড ফ্রাইডের চল্লিশ দিন আগে থেকেই ধর্মপ্রাণ খ্রিস্টানদের ঘরে ঘরে প্রার্থনা, সংযম শুরু হয়। এই সময়টাকে বলা হয় লেন্ট (Lent)। ভস্ম বুধবার বা Ash Wednesday থেকে লেন্টের সূচনা হয়। ইস্টার সানডের ঠিক আগের রবিবার Palm Sunday বা তালপত্র রবিবার পালন করা হয়। এইদিনে প্রভু যীশুকে সাধারণ ইহুদীরা তাদের “রাজা” বলে স্বীকৃতি দেন।

এরপরের সপ্তাহটি পবিত্র সপ্তাহ বা Holy Week বলে চিহ্নিত। স্বামী বিবেকানন্দ প্রভু যীশুর উপাসনার বিষয়ে বলেছেন —- ” যদি প্রাচ্য দেশীয়দের মত আমাকে এই ন্যাজারেথবাসী যীশুর উপাসনা করতে হয় তবে একটি মাত্রভাবেই আমি তাঁর উপাসনা করতে পারি অর্থাৎ আমায় তাঁকে ঈশ্বর বলেই উপাসনা করতে হবে , অন্য কোনো রূপে উপাসনা করার উপায় নেই।” তথ্য সূত্র ও কৃতজ্ঞতা —

* পবিত্র বাইবেল
** ঈশদূত যীশু খ্রিস্ট — স্বামী বিবেকানন্দ ।

অভিষেক সাহা

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *