পৃথিবীর ৭টি অদ্ভুত বিয়ে – সিদ্ধার্থ সিংহ

মানুষ যখন মানুষকে বিয়ে করে সেটা যতই অসম হোক, অসম বর্ণ, অসম বয়স, অসম জাতি বা যতই অসম আর্থিক‌ অবস্থা হোক না কেন, সেটা বিয়েই। আগে আমাদের ভারতীয় সংস্কৃতিতে গাছের সঙ্গে কিংবা শিবলিঙ্গের সঙ্গে অল্প বয়সী মেয়েদের বিয়ে দেওয়ার একটি রীতি প্রচলিত ছিল, সেটা অন্য প্রসঙ্গ।

কিন্তু যখন কোনও প্রাপ্তবয়স্ক ছেলে বা মেয়ে শুধুমাত্র ভালবাসার খাতিরে একটা বালিশ, একটা ভিডিও গেম, একটা প্রাচীর কিংবা একটা কুকুরকে বিয়ে করে তা হলে কেমন হবে? সেটাকে কি আদৌ বিয়ে বলা যাবে? বিয়ে বলা গেলেও, সেটাকে আর শুধু বিয়ে বলা যাবে না, বলতে হবে অদ্ভুত বিয়ে। অদ্ভুততম বিয়ে।

এখানে তেমনই ৭টি অদ্ভুত বিয়ের খবর জানানো হল—

১. গোখরো সাপের সঙ্গে বিয়ে।

এই কিছু দিন আগে ভারতের ৩০ বছরের এক মহিলা বিয়ে করেছেন এক গোখরো সাপকে। সেই বিয়ের আনন্দ উৎসবে প্রায় ২০০০ হাজার মানুষ যোগ দেন। সেই মানুষদের উপস্থিতিতেই জাঁকজমকপূর্ণ মণ্ডপে পুরোহিতের তত্ত্বাবধানে পুরো আধ ঘণ্টা ধরে বিয়ের মন্ত্রোচ্চারণ এবং ধর্মীয় রীতি মেনেই এই বিয়ে হয়।

২. বালিশের সঙ্গে বিয়ে।

কোরিয়ান এক ভদ্রলোক বিশেষ ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে বিয়ে করেছেন ছেলেবেলা থেকে তাঁর বহু ব্যবহৃত বেশ বড় মাপের একটি কোলবালিশকে। যে কোলবালিশটিতে একটি পূর্ণবয়স্কা মেয়ের ছবি আঁকা আছে। ছবিটি এতটাই নিখুঁত ভাবে আঁকা যে, আচমকা দেখলে মনে হবে একদম জীবন্ত। আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী এবং বন্ধু-বান্ধবদের নেমন্তন্ন করে একটি বিশেষ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তিনি তাঁর প্রিয় বালিশটিকে বিয়ের সাজে সাজিয়ে ধর্মযাজকের উপস্থিতিতে বিয়েটি করেন। 

৩. দেয়ালের সঙ্গে বিয়ে।

তাঁর আসল নাম ছিল ইজা রিত্তা। কিন্তু পরবর্তিকালে তিনি তাঁর নামের সঙ্গে জুড়ে দেন ‘বার্লিন’ শব্দটি। তখন তাঁর নাম হয়— ইজা রিক্তা বার্লিন। এতেই বোঝা যায় তিনি‌ বার্লিনকে কতটা ভালবাসেন। তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটে ১৯৭৯ সালে। বার্লিন মানেই যেহেতু বার্লিনের প্রাচীর, মানে সেই ঐতিহাসিক দীর্ঘ দেয়াল, তাই সেই দেয়ালটিকেই বিয়ে করেন তিনি। সেই বিয়ের সাক্ষী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বেশ কিছু অতিথিও এবং সেই বিয়ের আয়োজন ছিল চোখে পড়ার মতোই।

৪. ভিডিও গেমসের সঙ্গে বিয়ে।

জাপানে যে ভিডিও গেমসের রমরমা এটা প্রায় সকলেই জানেন। ওখানকার ছেলেমেয়েরা ভিডিও গেমস ছাড়া কিছুই জানে না। ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটিয়ে দেয় শুধু ভিডিও গেমস খেলে। সেই জাপানেরই এক তরুণের নাম— নেনে অ্যানেগাসাকি। তিনি ভিডিও গেমসকে এতটাই ভালবাসেন যে, বাকি জীবনটা ভিডিও গেমসের সঙ্গে কাটানোর জন্য তিনি একটি ভিডিও গেমসকেই বিয়ে করে ফেললেন। এবং সেটা করলেন এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। অজস্র লোকজনকে নিয়ে হইহুল্লোড় করে।

৫. কুকুরের সঙ্গে বিয়ে।

প্রায় কুড়ি বছর আগে প্রথম বিয়ে করেছিলেন অ্যামান্ডা রজার্স। কিন্তু কয়েক মাসের মধ্যেই স্বামীর সঙ্গে তাঁর ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। তার পর কুড়িটি বছর তিনি কাটিয়েছেন তাঁর বড় প্রিয় পোষা কুকুরের সঙ্গে। সেই কুকুরটির মধ্যে একজন উপযুক্ত জীবনসঙ্গীর যাবতীয় গুণ তিনি খুঁজে পান। এবং সেটা পেয়ে তিনি এতটাই আপ্লুত হয়ে যান যে, শেষমেশ সেই কুকুরটিকেই বিয়ে করে বসেন। ঘটনাটি ঘটেছে ব্রিটেনের দক্ষিণ লন্ডনে। আর দশটা সামাজিক বিয়ের মতোই এই বিয়েতেও ছিল সমস্ত রকমের আয়োজন। তাঁর নিজের এবং কুকুরটির জন্য তৈরি করেছিলেন আলাদা করে বিয়ের জমকালো পোশাক। বিয়ের অনুষ্ঠানে ওখানকার রীতি অনুযায়ী অ্যামান্ডা তাঁর সদ্য বিবাহিত কুকুর-স্বামীকে প্রকাশ্যে চুমুও খান। দুশো জনের মতো আমন্ত্রিত অতিথি উপস্থিত ছিলেন সেই বিয়েতে। তাঁরা সবাই নবদম্পতিকে প্রাণ ভরে আশীর্বাদ করেন। তাঁদের উপরে কাগজের ফুল ছিটিয়ে দেন। বেচারা কুকুর সেটা বুঝে উঠতে না পারলেও তার অনবরত লেজ নাড়া এবং সারাক্ষণ বউয়ের কাছ ঘেঁষে থাকা দেখেই এটা বেশ বোঝা গেছে যে, শুধু বউ নয়, বরও খুব আনন্দ পেয়েছে।

৬. আইফেল টাওয়ারের সঙ্গে বিয়ে।

বহু বছর আগে থেকেই ৩৭ বছর বয়সী এরিকা লা টুর টাওয়ার ছোটখাটো মাপের অনেক অদ্ভুত অদ্ভুত জিনিসকে পাগলের মতো ভালবেসেছেন। তাঁর প্রথম ভালবাসা ছিল একটা তীর-ধনুকের সঙ্গে। যেটাই তাঁকে একজন দক্ষ তীরন্দাজ বানিয়েছে। পরে আইফেল টাওয়ারকে দেখামাত্রই, প্রথম দর্শনেই তিনি সেই আইফেল টাওয়ারের প্রেমে পড়ে যান। ফলে তীর-ধনুকের প্রতি ভাঁর মোহ কেটে যায়। এবং ওই আইফেল টাওয়ারটাকে এরিকা এমন ভালবাসে ফেলেন যে, আর থাকতে না পেরে তিনি ওই আইফেল টাওয়ারটাকেই বিয়ে করার মনস্থির করেন। এবং মনস্থির করার পরেই বেশ কিছু ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের নিয়ে বেশ ঘটা করে‌‌ই একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আইফেল টাওয়ারটাকে তিনি বিয়ে করেন। আগে তাঁর নাম ছিল এরিকা লা টুর। বিয়ের পরে স্বামীর পদবি যোগ করার মতোই তিনি তাঁর নামের সঙ্গে জুড়ে দেন ‘আইফেল’ শব্দটি। এখন তিনি সবার কাছে এরিকা লা টুর আইফেল নামেই বেশি পরিচিত।

৭. নিজের সঙ্গে বিয়ে।

চিনের বাসিন্দা ৩৯ বছর বয়সের লিউ উই নিজেকে ছাড়া এই পৃথিবীর অন্য আর কাউকেই তেমন ভাবে ভালবাসতে পারেননি। নিজেকে এতটাই ভালবাসেন যে ঘরের চারিদিকের দেয়ালে আয়না লাগিয়ে নিয়েছেন। এমনকী সিলিংয়েও লাগিয়ে নিয়েছেন আয়না, যাতে যে কোনও জায়গা থেকে যে কোনও অবস্থাতেই নিজেকে সব সময় দেখতে পারেন। নিজেকে তিনি এতটাই ভালবাসেন যে, অন্য কারও সঙ্গে নয়, প্রায় ১০০ অতিথির সামনে তিনি নিজেই নিজেকে বিয়ে করেছেন।

আর এই বিয়ে করেই বিশ্বের অদ্ভুত বা বিচিত্র বিয়ের তালিকার সপ্তম স্থানে নিজের নামটি অন্তর্ভুক্ত করে ফেলেছেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *