পুঁই চিংড়ি – শম্পা সাহা

রহমান চাচা অনেকক্ষণ ধরে বাজারের থলি হাতে ঘোরাঘুরি করছে কিন্তু কিছু কিনছে না। বার দুয়েক দোকানের সামনে দিয়ে খালি ব্যাগ নিয়ে ঘোরাঘুরি করতে দেখে খলিল জিজ্ঞাসা করে, “ও চাচা ভালো নদীর চিংড়ি  আছে,নিই যাও ,নিই যাও।বেশি না,ষাট টাকা শ। এ দ্যাকো একোনো লড়তিছে। ” তাকিয়ে দেখেন সত্যিই দু একটা চিংড়ি গায়ে সাদায় সবুজে ফুটি ফুটি পা বাগিয়ে ঝুড়ির বাইরে বেরিয়ে আসতে চাইছে। রহমান চাচা ,”না লাগবে না “,বলে দূরে সরে যায় ।     

  এদিক ওদিক ঘোরাঘুরি করে এক ফালি কুমড়ো কুড়ি টাকা দিয়ে নিয়েছে । এই লকডাউন কাটার পর যেমন লোকের রোজগার কমেছে তেমনি বেড়েছে জিনিসপত্রের দাম। বাবা! সবজি তো না যেন সোনা! আলু ও নেয় হাফ কেজি, লঙ্কা পঞ্চাশ। 

    ছেলেটা রাজমিস্ত্রি খাটে, রহমান নিজেও তাই। কিন্তু এই সময়ে সব কাম কাজ একেবারে বন্ধ ,কি করে যে চলছে তা ওই জানে! “আল্লাহর যা ইচ্ছে !”বলে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে রহমান চাচা।

  বেলা প্রায় একটা । এত দামি চিংড়ি কে কিনবে? তায় কোন ভোরে ধরা ,একটু নরম হতে শুরু করেছে । খলিল চেঁচাতে থাকে, “চিংড়ি, চিংড়ি ,চিংড়ি, মাত্র এই কটা পড়ে আছে , চল্লিশ টাকা ,চল্লিশ টাকা , চল্লিশ টাকা । নিয়ে যান, নিয়ে যান”, জলের ছিটে দিয়ে আরও একবার মাছ গুলো নাড়াচাড়া করে । রহমান সামনে এসে দাঁড়ায়। ” একশো চিংড়ি দে তো  খলিল”, খলিল অবাক হয়, কিন্তু মুখে কিছু বলেনা। মেপে একশো পাল্লা থেকে ঢেলে দেয় রহমানের ঝোলায়। 

   যাক বাবা একশো টাকার মধ্যেই সব হয়ে গেছে! পোয়াতি বৌমাটা সেই কবে থেকে চিংড়ি দিয়ে পুঁই শাক খেতে চেয়েছে । হাসিনাকে বলে এসেছে পুঁই ডাটা মাচা থেকে কেটে রাখতে। এতক্ষণে নিশ্চয়ই হাসিনার সকালকার কাজ সারা হয়ে আখা ধরানো হয়ে গেছে।। তাড়াতাড়ি না গেলে মাছগুলো নষ্ট হয়ে যাবে। প্রসন্ন মুখে দ্রুত বাড়ির দিকে পা চালায় রহমান চাচা। 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *