পাবলিক টয়লেট

#পাবলিক_টয়লেট
#শম্পা_সাহা

আমার বাড়ির সামনে একটা বিরাট গর্ত। তাই ওটাকে পাবলিক টয়লেট করে ফেলেছে এলাকার বেশির ভাগ লোকজন। বাড়ির সামনের ল্যাম্পপোস্টের গায়ে পাড়ার নেড়ি কুত্তাটা ঠ্যাং উঁচু করে আর বেপাড়ার বীরপুঙ্ঘব ঠ্যাং ছড়িয়ে মুত্র ত্যাগে অভ্যস্ত।

আর পাশের ফাঁকা জায়গাটাও বাদ নেই। এমন অবস্থা পুরোনো পাঁচিলটা, যেটা আমার শ্বশুরের আমলের সেটা তে নোনা ধরে, এক ঝড়ের রাতে, “ধুপ্”! ব্যস সে পাঁচিল মাটিতে। বাধ্য হলাম লোন নিয়ে পুরো পাঁচিল নতুন করে দিতে। আর গেটটাও সেই সাথে নতুন লাগালাম। পুরোনোটা মরচে লেগে গিয়েছিল।

তবে নতুন পাঁচিল বা বাড়ির সামনে সরকারি বদান্যতায় নতুন রাস্তা হলেও সেই কাজটি বজায় আছে বহাল তবিয়তে। এমনকি গর্তের ওপাড়ে দাঁড়িয়ে আমার বাড়ির দিকে মুখ করে ও সেই কাজ করেন প্রায় সবাই, হ্যাঁ পথ চলতি যাদেরই চাপে তারা সবাই।

অথচ আমার বাড়ির পাঁচ পা দূরত্বে তহ বাজার, সেখানে পাবলিক টয়লেট আছে। আমার বাড়ির আট পা দূরত্বে রেজিস্ট্রি অফিস। তার সামনেও আছে সরকারি শৌচাগার। কিন্তু না, সেখানে যেতে কারো মন চায় না। আসলে বোধহয় খোলা জায়গায় এটা এক প্রকার বীরত্ব দেখানো।

আমার কিশোরী মেয়ে না ছাদে যেতে পারে, না ব্যালকনিতে। আমার পাশের বাড়ির বাচ্চা মেয়েটিরও এক অবস্থা। না, আমাদের অবস্থা আলাদা কিছু নয় তবে আমি বা আমার শাশুড়ি মা দেখলে বলি, “এটা কি টয়লেট করার জায়গা? “, বা, ” ও দাদু অত দূরে কেন বাড়ির ভেতরে এসে করে যান? ”

কিন্তু আমার মেয়েটা সেটা পারে না। ফলে ওকে ঘরেই থাকতে হয়। কারণ তেনাদের যখন তখন সেটা পায় আর..

একবার একটি ছেলে, বয়স খুব বেশি হলে বছর চব্বিশ, সকাল প্রায় সাড়ে নটা। দাঁড়িয়ে পড়েছে পোজিশন নিয়ে। আমার চোখে পড়তেই চিৎকার, “এটা কি ইয়ের জায়গা? “, সে দেখি নির্বিকার! একবার শুধু ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে ফুঃ দিয়ে আমার আপত্তি উড়িয়ে পোজিশন ও কর্ম দুটোই বজায় রাখলো। শেষে বাধ্য হলাম মোক্ষম অস্ত্র ছাড়তে,মেয়ের নাম ধরে চিৎকার জুড়লাম, ” মোবাইলটা আন তো, ফেসবুক লাইভ করি! ” ব্যস! জোঁকের মুখে নুন।

তাড়াতাড়ি চেন টেনে বলে, “আমি এলাকায় নতুন, কিছু চিনি না! “, ” তা বলে লোকের বাড়ির সামনে ইয়ে করতে হবে? ” “কি করবো? ” সে তখন ফেবু লাইভের ভয়ে রণে ভঙ্গ দেয়।

কি আর করবো? ওই অস্ত্রই প্রয়োগ করি। অন্তত হাওয়ার সঙ্গে ওই গন্ধটা আজকাল আর ফ্রি পাই না। আচ্ছা একটা প্রশ্ন প্রায়ই জাগে খোলা জায়গায় টয়লেট করা কি টয়লেটের চেয়ে বেশি ভালো?

©®

শম্পা সাহা

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *