নির্বাক প্রতিবাদ – ছন্নছাড়া

নদীর ধারে ঘুরতে গেলে সাধারণতঃ চোখ টানে নদীর জল। তবে কখনও কখনও অতি নগণ্য জিনিসও হয়ে ওঠে আকর্ষণীয়। যেমন আজ একটি নিঃসঙ্গ বাবলা গাছ হয়ে উঠল প্রতিবাদের মূর্ত প্রতিচ্ছবি। 

চারপাশে শুধু নদীর জলের ঢেউয়ের দাপট তার ছাপ রেখে দিয়েছে। চারিদিকে ক্ষতবিক্ষত বাঁধের মাটির উপর তার নির্মম অত্যাচারের সুস্পষ্ট চিহ্নের ছড়াছড়ি। আশেপাশে কোথাও কোন গাছপালা নেই। 

তবু তারমধ্যেই চোখ হঠাৎ আটকে যায় নদীর ধারে ফাঁকা চরের উপর দাঁড়িয়ে থাকা একটা ছোট বাবলা গাছটির উপর। 

বাবলা গাছটির নিঃসঙ্গতা মনকে বড্ড নাড়া দিতে দিতে যখন ব্যতিব্যস্ত করে তোলার প্রচেষ্টা করে চলেছে, তখনই হঠাৎ চোখ গিয়ে পড়ল গাছের নীচের দিকে। জীর্ণ কতকগুলি শিকড় বের হয়ে চারিদিকে বহুদূর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে মাটিকে শক্ত করে আঁকড়ে ধরে আছে। 

মুহূর্তে মনে হল যেন নদীর উত্তাল ঢেউ গুলোকে যেন সে প্রতি ক্ষণে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিচ্ছে আর বলছে—-

“যতক্ষণ আমি সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আছি,ততক্ষণ তোমার ক্ষমতা নেই আমার শিকড়ের বন্ধন ছিঁড়ে তুমি মাটিকে কেড়ে নিয়ে যেতে পার।”

বাবলা গাছটি যেন নদীর ঢেউ গুলোকে প্রতি মুহূর্তে প্রতিবাদের সুরে তার মনের কথা জানিয়ে চলেছে—-

” আমার চারপাশে যতই তুমি তোমার অহংকারের, অত্যাচারের চিহ্ন তৈরী করে আমাকে ভয় দেখিয়ে ভীত করার চেষ্টা কর না কেন, আমার পায়ের তলার মাটি তোমাকে কেড়ে নিতে দিচ্ছি না যতক্ষণ আমি জীবিত থাকব।

তোমার অত্যাচারী মনোভাব যদি ধ্বংসের খেলায় মেতে উঠতে পারে, তবে আমিও পারি সংরক্ষণের জন্য, সুন্দরের জন্য, সৃষ্টির জন্য স্বপ্ন দেখাতে। তোমার অত্যাচারের কাছে আমি এত সহজে হার মানছি না। তুমি হতে পার প্রবল, পরাক্রম কিন্তু আমি দীন হলেও হীন নই। “

দুর্বলের উপর সবলের অত্যাচার ত সহজলভ্য কিন্তু দুর্বল ও যদি মনে করে তার সমস্ত শক্তি দিয়ে সবলের চোখে চোখ রেখে তার অত্যাচারের প্রতিবাদ করবে তখন সবলকেও তার সামনে ম্রিয়মান দেখায়।

বাবলা গাছটা যেন প্রতিবাদের প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠে তার স্বকীয়তার ধ্বজা উড়িয়ে চলেছে আপন মনে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *