ধারাবাহিক প্রবন্ধ

STORY AND ARTICLE:

ধারাবাহিক প্রবন্ধ :

কবিতার রূপকল্প : পর্ব:২৩
|| বাংলা কবিতা আন্দোলন ||
“”””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””
সৌম্য ঘোষ
“”””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””

বাংলা কবিতার ইতিহাস ভালোভাবে জানতে গেলে, এই সময়ের কয়েকটি কবিতা আন্দোলনের কথা জানা দরকার । এমনই উল্লেখযোগ্য আন্দোলন ——- হাংরি আন্দোলন , শ্রুতি আন্দোলন এবং নকশালপন্থী কবিতা আন্দোলন । এই আন্দোলনগুলি নিতান্ত কবিতা সম্পর্কিত আন্দোলন। প্রথমে আসবো ‘হাংরি আন্দোলন’কে কেন্দ্র করে ।

হাংরি আন্দোলন
“””””””””””””””””””””””””””””””
হাংরি আন্দোলনের দূরবর্তী গুরু বলা যায় মার্কিন বিটবংশীয় কবি অ্যালেন গিন্সবার্গকে । আরো দূরবর্তী প্রেরণার কথা ভাবলে, অন্তত আঙ্গিকের দিক থেকে সুরিয়ালিস্টরা ।

আলেকজান্ডার পোপ, জোনাথোন সুইফট এর চিরায়ত আদর্শ, বিদ্রুপ এবং সংশয়বাদকে আশ্রয় করে “দ্য অগাস্তান” আন্দোলন করলেন ১৮ শতকে। ১৯ শতকে যুক্তি, বিজ্ঞান সব ফেলে আবেগ আর কল্পনাকে আশ্রয় করে ভিক্টর হুগো, ক্যামিলো ক্যাস্তেলো “অবাধ কল্পনাপ্রবণতা”য় বেঁধে ধরলেন সাহিত্য কে। এরপর Dark Romanticism, Realism আরও কত কি..!!
বাংলা সাহিত্যেও এরকম দুটি আন্দোলন হয়েছিল। যার একটি ১৯৬১-১৯৬৫ তে আর একটি ১৯৬৯ এ। ১৯৬১-১৯৬৫ এর এই আন্দোলনটি বাংলা সাহিত্যের প্রথম আন্দোলন। বাঁধ ভাঙার আওআজ তুলে ইশতেহার প্রকাশের মাধ্যমে বাংলা শিল্প ও সাহিত্যের যে একমাত্র আন্দোলন হয়েছে, তার নাম হাংরি মুভমেন্ট বা ক্ষুধার্ত আন্দোলন । আর্তি বা কাতরতা শব্দগুলো মতাদশর্টিকে সঠিক তুলে ধরতে পারবে না বলে, আন্দোলনকারীরা শেষমেষ এই হাংরি শব্দটি গ্রহণ করেন । উত্তর-ঔপনিবেশিক ভারতবর্ষে্র ঔপনিবেশিক সাহিত্যকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে দিয়ে নিজেদের স্বত্ত্বার বহিঃপ্রকাশই ছিল এই আন্দোলন এর আপাত অভিপ্রায়। ১৯৬১ সালের নভেম্বরে পাটনা শহর থেকে একটি ইশতেহার প্রকাশের মাধ্যমে হাংরি আন্দোলনের সূত্রপাত করেছিলেন। মলয় রায় চৌধুরী এই বিখ্যাত সাহিত্য আন্দলেনের মূল পথিকৃৎ। ছিলেন কবির দাদা সমীর রায় চৌধুরী, আন্দোলনের সম্পাদনায় ও বিতরণে ছিলেন কবি দেবী রায় এবং নেতৃত্বে ছিলেন কবি শক্তি চট্রোপাধ্যায়।

১৯৬১ সাল দেশভাগের ফলে পশ্চিমবঙ্গ এই ভয়ংকর অবসানের মুখে সাহিত্য, ওদিকে আবার পচে গলে পড়ে যাচ্ছে উন্নত ভারত বর্ষের স্বপ্ন। কবি মলয় রায় নিজে বলেছিলেন, “স্বদেশী আন্দোলনের সময় জাতিয়তাবাদী নেতারা যে সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত ভারতবর্ষের স্বপ্ন দেখেছিলেন, তা টকে গিয়ে পঁচতে শুরু করেছে উত্তর ঔপনিবেশিক কালখণ্ডে ”।
তিনি Oswald Spengler এর লেখা “The Decline of the West” বইটির মূল বক্তব্য থেকে এই আন্দোলনের দর্শন গড়ে তুলেছিলেন | Oswald Spengler এই বইটিতে বলেছিলেন, কোনো সংস্কৃতির ইতিহাস কেবল একটি সরল রেখা বরাবর যায় না, তা একযোগে বিভিন্ন দিকে প্রসারিত হয় ; তা হল জৈবপ্রক্রিয়া, এবং সেকারণে নানা অংশের কার কোন দিকে বাঁকবদল ঘটবে তা আগাম বলা যায় না| যখন কেবল নিজের সৃজনক্ষমতার উপর নির্ভর করে তখন সংস্কৃতিটি নিজেকে বিকশিত ও সমৃদ্ধ করতে থাকে, তার নিত্যনতুন স্ফূরণ ও প্রসারণ ঘটতে থাকে | কিন্তু একটি সংস্কৃতির অবসান সেই সময় আরম্ভ হয় যখন তার নিজের সৃজনক্ষমতা ফুরিয়ে গিয়ে তা বাইরে থেকে যা পায় তাই আত্মসাৎ করতে থাকে, খেতে থাকে, তার ক্ষুধা তৃপ্তিহীন | তাঁর মনে হয়েছিল যে দেশভাগের ফলে পশ্চিমবঙ্গ ভয়ংকর অবসানের মুখে পড়েছে, এবং উনিশ শতকের মনীষীদের পর্যায়ের বাঙালীর আবির্ভাব আর সম্ভব নয় |
তাঁর মনে হয়েছিল যে কিছুটা হলেও এর বিরুদ্ধে দাঁড়ানো দরকার,আওয়াজ তোলা দরকার, আন্দোলন প্রয়োজন। অর্থাৎ দেশভাগোত্তর বাঙালির কালখণ্ডটিকে কবিগণ হাংরিরূপে চিহ্ণিত করতে চাইলেন।হাংরি আন্দোলনকারীরা শব্দটি আহরণ করেছিলেন ইংরেজি ভাষার কবি Geoffrey Chaucer এর In Swore Hungry Time বাক্যটি থেকে।

আর সেই ভাবনা থেকেই কবি মলয় রায় তাঁর দাদা সমীর রায়, দুই বন্ধু দেবী রায় এবং শক্তি চট্টোপাধ্যায় এর সাথে ধারনাটি ব্যাখ্যা করেন এবং হাংরি আন্দোলনের প্রস্তাবনা দেন পড়ে তাদের এবং অন্যান্য তরুণ লেখক কবি শিল্পীদের নিয়ে এই আন্দোলন শুরু করেন | নভেম্বর ১৯৬১ সালে প্রথম হাংরি বুলেটিন প্রকাশিত করা হয় পাটনা থেকে এবং সেখানে বাংলা ছাপাবার প্রেস না পাওয়ায় বুলেটিনটি প্রকাশিত করা হয় ইংরেজীতে | অতি স্বল্প কালের মধ্যেই হিন্দী ও নেপালী ভাষাতেও এই আন্দোলন ছড়িয়েছিল। ১৯৬২-৬৩ সালে আন্দোলনে মিশে যান বিনয় মজুমদার, সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়, উৎপলকুমার বসু, সুবিমল বসাক, ত্রিদিব মিত্র, ফালগুনী রায়, আলো মিত্র, রবীন্দ্র গুহ, সুভাষ ঘোষ, প্রদীপ চৌধুরী, সুবো আচার্য, অরুপরতন বসু, বাসুদেব দাশগুপ্ত, সতীন্দ্র ভৌমিক, শৈলেশ্বর ঘোষ, হরনাথ ঘোষ, নীহার গুহ, অজিতকুমার ভৌমিক, অশোক চট্টোপাধ্যায়, অমৃততনয় গুপ্ত, ভানু চট্টোপাধ্যায়, শংকর সেন, যোগেশ পাণ্ডা, মনোহর দাশ, তপন দাশ, শম্ভু রক্ষিত, মিহির পাল, রবীন্দ্র গুহ, সুকুমার মিত্র, দেবাশিষ মুখোপাধ্যায় প্রমুখ । অনিল করঞ্জাই এবং করুণানিধান নামের দুজন চিত্রকরও ছিলেন এই আন্দোলনে ।

হাংরি আন্দোলনকারিরা প্রধানতঃ একপৃষ্ঠার বুলেটিন প্রকাশ করতেন । এক পাতার বুলেটিনে তঁরা কবিতা, রাজনীতি, ধর্ম, অশ্লীলতা, জীবন, ছোটগল্প, নাটক, উদ্দেশ্য, দর্শন ইত্যাদি বিষয়ে ইশতাহার লেখা ছাড়াও, কবিতা, গদ্য, অনুগল্প, স্কেচ ইত্যাদি প্রকাশ করেছিলেন । বুলেটিনগুলো হ্যান্ডবিলের মতন কলকাতার কলেজ স্ট্রিট কফি হাউস, পত্রিকা দপ্তর, কলেজগুলোর বাংলা বিভাগ ও লাইব্রেরি ইত্যাদিতে তাঁরা বিতরন করতেন । হাংরি আন্দোলনের কথা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার এইটি-ই প্রধান কারণ বলে মনে করেন গবেষকরা ।
১৯৬৩-৬৫ সালের মাঝে হাংরি আন্দোলনকারীরা কয়েকটি পত্রিকাও প্রকাশ করেছিলেন । সেগুলো হল, সুবিমল বসাক সম্পাদিত প্রতিদ্বন্দ্বী, ত্রিদিব মিত্র সম্পাদিত উন্মার্গ, মলয় রায়চৌধুরী সম্পাদিত জেব্রা, দেবী রায় সম্পাদিত চিহ্ণ, প্রদীপ চৌধুরী সম্পাদিত ফুঃ সতীন্দ্র ভৌমিক সম্পাদিতএষণা, এবং আলো মিত্র সম্পাদিত ইংরেজি দি ওয়েস্ট পেপার ।

১৯৬৩ সালের শেষদিকে সুবিমল বসাক, দেবী রায় ও মলয় রায়চৌধুরীর কিছু-কিছু কর্মকাণ্ডের কারণে হাংরি আন্দোলন বাঙালির সংস্কৃতিতে প্রথম প্রতিষ্ঠানবিরোধী গোষ্ঠী হিসাবে পরিচিত হয় । বহু আলোচক হাংরি আন্দোলনকারীদের সে সময়ের কার্যকলাপে দাদাইজম প্রভাব লক্ষ্য করেছেন । এই কারণে শক্তি চট্টোপাধ্যায়, সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়, সতীন্দ্র ভৌমিক প্রমুখ হাংরি আন্দোলন ত্যাগ করেন ।এই সমস্ত কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তাঁরা দাবী করতেন যে অচলায়তনকে ভাঙা যাবে । অবশ্য তাঁদের অনুকরণে পরবর্তীকালে বহু প্রতিষ্ঠানবিরোধী লেখক এসেছেন বাংলা সাহিত্যে ।
শ্মশান, গোরস্তান, ভাটিখানা, হাওড়া ও শেয়ালদা স্টেশনে তাঁরা কবিতা পাঠের আয়োজন করতেন; ’মুখোশ খুলে ফেলুন’ লেখা জীব-জন্তু, দেবতা, দানবের মুখোশ পাঠাতেন মন্ত্রী, সমালোচক, প্রশাসকদের; কবিদের সমালোচনা করতেন বিবাহের কার্ডে; তৎকালীন মানদণ্ডে অশ্লীল স্কেচ ও পোস্টার আঁকতেন ও বিলি করতেন; একটি গ্রন্হের দাম রাখতেন লক্ষ টাকা বা কয়েকটি টি.বি. সিল। বাণিজ্যিক পত্রিকায় গ্রন্থ রিভিউ করার জন্য জুতোর বাক্স পাঠাতেন কিংবা শাদা কাগজ পাঠাতেন ছোটগল্প নামে। তাঁদের রচনায় প্রশাসন ও মিডিয়াকে আক্রমণ করতেন। বেনারস এবং কাঠমান্ডু গিয়ে সাহিত্য সম্পর্কহীন হিপিনীদের সঙ্গে মাদকসেবন এবং যৌন যথেচ্ছাচারে লিপ্ত হয়ে সেখানকার সংবাদপত্রে শিরোনাম হতেন। পেইন্টিং প্রদর্শনী করে শেষ দিন প্রতিটি ছবিতে আগুন ধরিয়ে দিতেন।

১৯৬৪ সালে, তৎকালীন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্ল চন্দ্র সেনের রাজত্বকাল মলয় রায়চৌধুরী, প্রদীপ চৌধুরী, সুভাষ ঘোষ, দেবী রায়, শৈলেশ্বর ঘোষ ও সমীর রায়চৌধুরীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করার অভিযোগ এনে গ্রেপ্তার করা হয়| পরে অন্য সবাইকে ছেড়ে দিয়ে শুধু মলয় রায়চৌধুরীর বিরুদ্ধে অশ্লীল সাহিত্য রচনা করার অভিযোগে মামলা করা হয়, তাঁর “প্রচণ্ড বৈদ্যুতিক ছুতার” কবিতাটির জন্য | হাংরি আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে ৩৫ মাস অর্থাৎ ১৯৬৭ পর্যন্ত মামলা চলতে থাকে।

২৬ জুলাই ১৯৬৭ তে উচ্চ আদালত মলয় রায় চৌধুরী কে বেকসুর খালাস করে দেন। আর এভাবেই শেষ হয় ক্ষুধিত কবিদের হাহাকার। চোর ডাকাতের পাশে হাতকড়া পড়ে হেঁটে যাওয়া কবি এবং কবি আর তাঁদের ম্লান হয়ে যাওয়া কষ্ট ঢাকা পড়ে যায় এক নতুন সম্ভাবনায়।

শ্রুতি আন্দোলন
“””””””””””””””””””””””””””””””””””””””’

কৃত্তিবাস আর হাংরির উগ্রতা ও যৌন ধর্মী অ্যাজেন্ডায় কিছু মানুষ ততদিনে প্রচন্ড বিরক্ত হয়ে উঠেছে। মৃণাল বসু চৌধুরীর ‘কবিপত্র’ তখনকার ঐতিহ্যশালী পত্রিকা। পুস্কর দাসগুপ্তের নেতৃত্বে গড়ে উঠল শ্রুতি আন্দোলন। মৃণাল বসু চৌধুরী ও পরেশ মন্ডল শ্রুতি আন্দোলনে যোগ দেন। কিন্তু ঐতিহ্যশালী ও হাংরির বাইরে অন্য কিছু একটা করে দেখাবার, যা বামপন্থী স্লোগান সর্বস্বতার বাইরে, যা কিনা সমাজ, সংস্কার, উগ্র আধুনিকতার বাইরের বিশ্বাসকে নাড়িয়ে দেবে।

‘গভীর সমুদ্র থেকে/ দিনশেষে মাছের বদলে/ হারানো তাবিজ নিয়ে/ ফিরে আসে বিষণ্ণ যুবক’— লিখেছেন কবি মৃণাল বসুচৌধুরি। শ্রুতি আন্দোলনের অন্যতম কারিগর এই কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘মগ্ন বেলাভূমি’ প্রকাশ পায় ১৯৬৫ সালে। এরপর একে একে পাঠকের হাতে পৌঁছে গেছে ‘শহর কলকাতা’, ‘গুহাচিত্র’, ‘শুধু প্রেম’, ‘মায়াবী উত্তাপ’–‌এর মতো কবিতার বই কিংবা উপন্যাস ‘ভুল’, গল্পের বই ‘যন্ত্রণার এ–‌পিঠ ও–‌পিঠ’–‌এর মতো ব্যতিক্রমী গ্রন্থ ।
জৈব আর্তনাদ কবিতা নয়, হাংরিদের বিপরীতভাবে, এই কথা বলে শুরু হয়েছিল——‘ শ্রুতি আন্দোলন’ । আবেগ উপলব্ধিকে তাঁরা চৈতন্য পরিশ্রুত করে নেওয়াটাই অভিপ্রেত জেনেছেন। অশিক্ষিত আবেগের বেগবান অসংযত প্রকাশই কবিতা নয় ।কবিকে আত্মমগ্ন হয়ে প্রকাশের শিক্ষা নিতে হয়। হাংরি কবিতায় যদি শব্দের প্লাবন হয়, তাহলে শ্রুতি কবিতা মিতভাষী । “শব্দের বিন্যাস সুর, বর্ণ, গতি মিলিয়ে নিজস্ব শিল্প রহস্যলোক নির্মাণও করতে চেয়েছিলেন তারা ।” মেলাতে চেয়েছেন চিত্রকলা ও কবিতাকে । ফরাসি কবিতা আন্দোলন দ্বারা প্রভাবিত শ্রুতি গোষ্ঠীর কবিরা হলেন —- পুষ্কর দাশগুপ্ত , মৃণাল বসুচৌধুরী, পরেশ মন্ডল, সজল বন্দ্যোপাধ্যায় প্রভৃতি। সজল বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখেন :
“সেদিন মাঝরাত / সমস্ত বাড়ির দরজা নেই/ আমি/ আর ত্রিশূল / আর তার ওপর / খেলা লেখা খেলা….. ‌”
পুষ্কর দাশগুপ্ত এর লাইন :
“তোমার বা আমার একটা দিন/ একঘেয়ে, বিষাদ, পুনরাবৃত্তিময় …..”

নকশালপন্থী কবিতা আন্দোলন
“”””””””””””””””””‘””””””””””””””””””””””””””””””””
নকশালপন্থী কবিতা ‘কবিতা আন্দোলনের’ ফসল নয় । এই কবিতা এক বিপুল আলোড়ন সৃষ্টিকারী আন্দোলনের উপজাতক । সত্তর দশকে বলা হয়েছিল ‘মুক্তির দশক’। এই উত্তাল আন্দোলনের নেপথ্যে ছিল আর্থ- রাজনৈতিক কারণ এবং অবশ্যই আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটের সমর্থন । জাগ্রত হয়েছিল বিপ্লবী উন্মাদনা। নকশালপন্থীরা মনে করতেন , চল্লিশ দশকের অসমাপ্ত বিপ্লবকে সমাপ্ত করার দায়ে তাঁদের । এই অভিঘাতে বাংলায় চল্লিশ দশকের ‘প্রগতি পন্থী’ কবিতার পর লেখা হলো ‘বিপ্লবপন্থী রাজনৈতিক কবিতা’। চল্লিশ দশকের প্রবীণ কবি লিখলেন,
“মুক্তির লড়াই করবে বলে/ ছেলে গেছে বনে।”

স্বয়ং কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় সত্তর দশকের এই বিপ্লবী কবিদের প্রতি সহমর্মী ছিলেন। সত্তর দশকের প্রতিভাবান নব্য যুবকেরা শুধু রাজনৈতিক ক্রিয়াকলাপে অংশ নেননি, গান বেঁধেছেন, কবিতা লিখেছেন । সেই সময়ের কবি সব্যসাচী দেব লিখলেন :
“এবার কবিতা হোক টান করা ধনুকের ছিলা।”

তাঁরা বলতেন , ‘কবিতার ভাষা হবে ধারালো, তাতে পোশাকই শব্দ বা অলংকার থাকবে না ।’
এই সময় কবিতা লিখেছেন —— মণিভূষণ ভট্টাচার্য, সব্যসাচী দেব ছাড়াও কমলেশ সেন (১৯৩৮), সৃজন সেন (১৯৩৬), সমীর রায় (১৯৩৬-৯৪), দ্রোণাচার্য ঘোষ (১৯৪৮-৭২) প্রভৃতি।

বিপ্লবের আগুনের অক্ষরে লেখা এইসব কবিতা গুলি বেশিরভাগ পর্যবসিত হয়েছিল স্লোগানে।

লিখেছেন — অধ্যাপক সৌম্য ঘোষ। পোঃ চুঁচুড়া । জেলা : হুগলী ।

Soumya Ghosh

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *