# অণুগল্প — দুই পৃথিবী
# গল্পকার — অভিষেক সাহা
” তুই কী নিবি? আমি তো চিকেন আফগানি।” রমিতা বলল।
” এখন না আমি এত হেবি ফুড নিই না। কিন্তু আজকে আর আলাদা কিছু নয়। আমিও চিকেন আফগানি নেব। কাল মর্নিং-এ আধঘন্টা বেশি যোগা করে নেব।” বলেই হেসে উঠলো বিশাখা।
বিশাখাকে হাসতে দেখে রমিতাও হেসে উঠলো।
অনেক দিন পর ওরা দু’জন হাসল। এই প্রাণখোলা হাসিটাই শেষ কয়েক বছর ওদের জীবন থেকে কোথায় যেন হারিয়ে গিয়েছিল।
রমিতা আর বিশাখা কলেজের ব্যাচ- মেট। মধ্য তিরিশে পৌঁছে আজ বহু বছর পর ওরা এক টেবিলে। কত বসন্ত, শীত, বর্ষা কেটে গেছে এর মাঝে। ওদের কলেজ জীবনে মোবাইলের এত চল ছিল না। বুক ভরা ইচ্ছা থাকলেও শেষ পর্যন্ত কলেজ শেষের পর আর সেভাবে যোগাযোগ রাখা সম্ভব হয়নি। যার যার জীবন বয়ে গেছে নিজের গতিতে ।
কিছুদিন আগে সোস্যাল মিডিয়ায় বিশাখা খুঁজে পায় রমিতাকে। তারপর আজ এক টেবিলে।
” তুই এখন কোথায় আছিস? কী করছিস!” চিকেন আফগানি মুখে তুলে জিজ্ঞেস করল বিশাখা।
” আমি আর কী করব। বাবা- মার সাথেই আছি। ছোটভাই বিয়ে করেছে।ওর একটা দুবছরের ছেলেও আছে। সবাইকে নিয়ে কেটে যায় সারাদিন। তুই কী করছিস?” পাল্টা প্রশ্ন করল রমিতা।
” আমি একটা এম এন সি- তে জব করি। নিজে একটা ফ্ল্যাট নিয়েছি। একাই থাকি। বাবা- মা দু’জনেই চলে গেছেন। বড়দিদি বিয়ের পর থেকেই দিল্লি থাকে। বছরে এক দুবার আসা যাওয়া হয়। তা তুই বিয়ে করিসনি? ” বিশাখা জানতে চাইল ।
” হুঁ, করেছিলাম। মানে হয়েছিল, দেখাশোনা করে। বর ইঞ্জিনিয়ার ছিল। ডিভোর্স হয়ে গেছে। তা তুই বিয়ে করিসনি?” রমিতার উত্তরে পরিবেশ একটু ভারী হল।
” আমি বিয়ে করেছিলাম, নিজে পছন্দ করে। এমবিএ করে প্রথম যে কোম্পানিতে ছিলাম, ও আমার কলিগ ছিল। আমারও ডিভোর্স হয়ে গেছে !”বিশাখার উত্তরে পরিবেশের ওজন হঠাৎই বেশ অনেকটা বেড়ে গেল।
” তোর ডিভোর্স হল কেন?” ধরে আসা গলায় জিজ্ঞেস করল রমিতা।
” আমার জব করা আমার শ্বশুরবাড়ির লোকজন পছন্দ করছিল না। আমার বরেরও অপছন্দ ছিল । রোজ একই কারণে অশান্তি। শেষে একদিন আমার বর আমাকে আল্টিমেটাম দিয়ে বলল, হয় সংসার নাহলে চাকরি , যেকোনো একটা বাছতে। অনেক কষ্ট করে এই জায়গায় এসেছি তো, আমি চাকরিই বাছলাম। তুই তো কোনদিনই জব করতে চাইতিস না, তোর ডিভোর্স হল কেন ?” বিশাখা জানতে চাইল।
দীর্ঘশ্বাস ফেলে রমিতা বলল ” আমার বর চাকুরিজীবী বৌ চেয়েছিল!”
অভিষেক সাহা