দিলওয়ার

গণ-মানুষের কবি

আব্দুল মান্নান

কবি দিলওয়ার মারা যাওয়ার খবর স্থানীয় পত্রিকায় পড়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় একটি স্মৃতিচারণ-মূলক লেখা লিখি। লেখাটি প্রকাশের জন্য দিয়ে আসি বাংলা-পোস্ট পত্রিকায়। কিছুদিন পর খোঁজ নিতে গেলাম। আগে পত্রিকা অফিসে গেলে যে ছেলেটি খাতিরযত্ন করে বসতে দিতো- সে চেহারায় গুরুগম্ভীর ভাব ফুটিয়ে বললো এখনো ছাপা হয়নি, ছাপতে পারি।

বলাবাহুল্য লেখাটি ফেরত নিয়ে আসি। অযত্নে অবহেলায় তা হারিয়ে ফেলি। ঐদিনের পর আর বাংলা-পোস্টের অফিসে যাইনি।

হাতে লেখা কলাম ছাপতে পত্রিকা কর্মীদর একটু বাড়তি কষ্ট হয় বটে, তাসত্ত্বেও আমার লেখা ছাপানো হতো। এর মূল কারণ- তখন উক্ত পত্রিকা সম্পাদনা করতেন খ্যাতিমান সাংবাদিক কে এম আবু তাহের চৌধুরী। আবু তাহের ভাইয়ের সাথে আমার পরিচয়ের সুবাদে ওরা লেখা ছেপে দিতো।

একবার ড. জাফর ইকবালের ওপর একটি লেখা চৌধুরী সাহেবের হাতে দিয়ে আসি। তিনি লেখাটি  ছাপার নির্দেশ দেন এবং তা ছাপা হয়।

কবি দিলওয়ারের মৃত্যু সংবাদ পেয়ে যে লেখাটি নিয়ে যাই তা ছাপতে গড়িমসির পেছনের কারণ হলো, কে এম আবু তাহের চৌধুরী ততদিনে বাংলা-পোস্টের দায়িত্ব ছেড়ে চলে গেছেন।

কবি দিলওয়ার মারা যাওয়ার সাত/আট বছর আগে একটি সাক্ষাৎকার গ্রহণ করি। সেই হারিয়ে যাওয়া লেখাতে সবিস্তার বিবরণ ছিলো। এর বহু-বছর পরে এসে এখন যা বয়ান করছি তা স্মৃতির ওপর ভর দিয়ে। স্মৃতি থেকে আসল রস-টুকু তুলে আনা সম্ভব হয়না।

পদ্মা মেঘনা যমুনা – সুরমা কর্ণফুলী

তোমাদের বুকের আমি গণ মানবের তুলী।

দুই হাজার পাঁচ সাল হবে,  আমার সঠিক তারিখ মনে নাই। একদিন শেষ দুপুরে সুরমা নদীর দক্ষিণ তীরে অবস্থিত ভার্তখলা – খান মনজিলে গিয়ে হাজির হলাম। কবি দিলওয়ারের বাসভবন।

দিলওয়ার সাহেবের সঙ্গে সেটাই ছিলো প্রথম এবং শেষ দেখা।  কবি কুশল বিনিময়ের পর আমি আর আমার সাথী জসিমের সাথে এমন অন্তরঙ্গ পরিবেশে আলাপ জুড়ে দিলেন, মনে হয় যেন কতো যুগের চেনা-জানা।

মানুষকে আপন করে নেওয়ার এইযে সহজাত প্রবণতা- এটাই বোধহয় তাঁকে ‘গণ মানুষের কবি’র সম্মানে আসীন করেছে। কবি বলেন তোমরা এসেছো খুশি হলাম। প্রসঙক্রমে আমাদের আগে তাঁকে দেখতে আসা একজন রাস্ট্রদূতের উল্লেখ করলেন। রাস্ট্রদূত মহোদয়ের পরিচয় তিনি দেননি, আমরাও জিজ্ঞেস করিনি।

দিলওয়ার মারা যাওয়ার বেশ ক’বছর পর দূত সাহেব নিজের এক লেখায় উল্লেখ করেছেন কবি’র সনে সাক্ষাতের কথা। তাঁর আরেকটি পরিচয় হলো তিনি কবি ও একজন লেখক। জাতীয় পত্রিকায় নিয়মিত কলাম লিখে থাকেন।

আমাদের এই দূত মহোদয় মোফাজ্জল করিম।

বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন চারদলীয়-জোট সরকারের আমলে মোফাজ্জল করিম সাহেব লন্ডনে বাংলাদেশের হাইকমিশনার নিযুক্ত হোন। মেয়াদ শেষ হওয়ার বেশ আগেই তাঁকে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয়-জোট সরকার দেশে তলব করে নিয়ে আসে। সজ্জন এই মানুষটিকে সরকার কেন ফিরিয়ে আনলো সেই ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। লন্ডনে নিযুক্ত থাকাকালীন  তিনি স্বদেশে ছুটি কাটাতে এসে কবি দিলওয়ারের সাথে দেখা করে যান।

কলকাতা – বোম্বাই এর খ্যাতিমান নাট্যকার, লেখক প্রয়াত সচিন ভৌমিক এক লেখায় দিলওয়ারের ভূয়সী প্রশংসা করলেন। সেকথা মনে পড়াতে কবিকে জিজ্ঞেস করলাম শচিনের সঙ্গে তাঁর কেমন জানাশোনা। তিনি বললেন হয়তো আমার কোনো লেখা পড়ে শচিন ভৌমিকের ভালো লেগেছে। এর বাইরে তাঁর সঙ্গে আমার কোনো পরিচয় নেই।

(অসমাপ্ত)

#webtostory

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *