বাপ মায়ের দেওয়া নাম “মনবাঞ্ছা”। জন্মেই নাকি হেসে লুটোপুটি খেয়েছিল। ডাক্তার নার্স বেবিকে ধরে রাখতে পারেনি – এমনি নাকি ছিল তার হাসি। বাবা -হাসুক তলাপাত্র, মা – খুশি তলাপাত্র। ছেলের নাম “হাসিখুশি” বা “হেসেখুশে” রাখবে বলে ঠিক করেছিল তার নিরক্ষর পিতামাতা। শিক্ষিত আত্মীয়, পাড়াপ্রতিবেশীরা আপত্তি জানালে নাম পাল্টে যায়। মনবাঞ্ছা আবার ছোট হয়ে “বাঞ্ছা” -তে রূপান্তরিত হয়।
এইসব কথা বাঞ্ছা তার সাথে পরিচয়ের প্রথমেই দুপাটি দাঁত বার করে হেসে হেসে সবাইকে জানিয়ে দেয়। তবে একটা মারাত্মক দোষ আছে তার, পরিস্থিতি না বুঝে সে সব সময়েই এই একই আচরণ করে থাকে।
অনেক লোকের সঙ্গে তার আলাপ। কথা বলতে ওস্তাদ। দিনের সব খবর তার মগজে।
এহেন বাঞ্ছা কি করে ‘দাঁত কেলানে বাঞ্ছা’ নামে পরিবর্তিত হলো সেটাও এক ঘটনা।
হেসো বাঞ্ছার বন্ধুবান্ধব প্রচুর। পয়সার অভাব নেই। পারিবারিক অর্থ আর সম্পত্তির উত্তরাধিকার সে। মনটাও ভালো। ফলে ইয়ার বন্ধুদের পিছনে খরচা করবে এটা বলাই বাহুল্য।
রাস্তায় কেউ দেখলেই হলো — বাঞ্ছাদা আসো -আসো -কেমন আছো?
বাঞ্ছা কেলিয়ে হাসে হে হে হে — কিরে সব চা পিবি? তো বল্লেই পারিস?
বন্ধুদের গাল ভর্তি হাসি — হে হে –হো হো!
চা বানাও হাতারাম খুঁড়ো!
এরকম ভাবেই ইয়ার বন্ধুরা মিষ্টির দোকানে, ফুচকার স্টলে, রোলের দোকানে আবদার চলে এবং বাঞ্ছা হেসে হেসে পকেট ঘেঁটে খাইয়ে দেয়।
সব সময়েই বন্ধুবান্ধব আত্মীয়দের নিয়ে দাঁত বার করে হেসেখেলে কথা বলে কাটায় বাঞ্ছা। ভালোমন্দ বাছ বিচার আর করা হয়ে ওঠে না।
সে ভাবে হেসে হেসে কথা বললেই সকলে খুশি হবে। আর সকলকে খাইয়ে দাইয়ে সে খুশিতে ভরে ওঠে। জীবনের রাগ দুঃখের অধ্যায় তার অজানাই রয়ে গেল।
ইয়ার বন্ধুদের কথা আলাদা। তারা তাকে বোকা- জোকার ভেবে নিয়ে ফেলে। খুব কাছের আত্মীয়রা বাঞ্ছাকে কেউ কেউ বোঝায় নি এমন নয়। কার কথা কে শোনে। প্রতুত্তরে বাঞ্ছা হে হে করে হেসে সেই গুড়ে জল ঢেলে দিয়েছে।
ঘটনাটা ঘটে গেল কিছুদিনের মধ্যেই। পাড়ার ললিত বাবুর স্ত্রী করোনা আক্রান্ত হয়ে তিনদিনের দিন মারা গেল। পাড়ার ক্ষমতাবান ব্যক্তি ললিত বাবু কোন সুযোগই পেল না চিকিৎসা করানোর জন্য। এমনকি করোনা পজিটিভের রেজাল্টটাও এল মৃতদেহ সৎকারের পর। এই নিয়ে বিরাট আলোচনা চলছিল পাড়ার মধ্যে। কাল হলো —
বাঞ্ছা সব শুনে আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারলে না — বেশ মজার ব্যাপারতো!
বাঞ্ছা মজা পেয়ে গেল। হে -হে – করে ধরা গলায় হেসেহুসে ললিত বাবুর সামনে গিয়ে দাঁত বার করে
সে এমন এক অভিব্যক্তিক আচরণ করে বসলো — যার পরিণতি হল ভয়ানক। ললিত বাবুর রগচটা মেজো ছেলেটা বাঞ্ছাকে ধরে উত্তম -মধ্যম ধোলাই দিয়ে দিল –আর বেশি মারটাই গিয়ে পড়লো তার খোলা দাঁতের উপর। কেলানোর চোটে তার সামনের দুটো দাঁতের বিচ্যুতি ঘটে গেল।
ইয়ার বন্ধুরা মজা পেয়ে গেল। আত্মীয়স্বজন লজ্জায় মুখ লুকালো।
কিন্তু তাতেও বাঞ্ছার ফেকলু দাঁতের হাসি থামলো না।
দাঁতে কেলানি খেয়েছিল — তাই তার নাম হয়ে গেল — “দাঁত কেলানে বাঞ্ছারাম”!
———————————–
মধুরেণ সমাপয়েৎ!
প্রদীপ দে