দশমী – অভিষেক সাহা

 বাড়িতে ঢুকেই প্রায় দৌড়ে সিঁড়ি দিয়ে উঠে দোতলায়  নিজের ঘরে ঢুকে গেল সিন্টু। বাথরুম গিয়ে বাইরের জামা-প্যান্ট রেখে শুধু হাফপ্যান্ট পড়ে খাটের উপর চিত হয়ে শুয়ে  পড়ল। ঘরের আলো জ্বালাল না, সকাল থেকে বন্ধ জানলাগুলোও খুলল না। পাখাটা চালাল, ফুল স্পিডে। ঘুলঘুলি দিয়ে আসা আলোটুকুই ঘরের দানব অন্ধকারের সাথে টিকে থাকার লড়াই করতে থাকল।সিন্টুর বুক ঠেলে কান্না যেন বাঁধ ভাঙা জলের মত বেরিয়ে আসতে চাইছে। কিচ্ছু ভালো লাগছে না ওর। এবছরই  এইচ এস পাস করে প্রথমবার  পাড়ার পুজোতে ঢুকেছে। তাই অন্য বারের চেয়ে আলাদা  আবেগ । আর করোনার জন্য নিউ নর্ম্যালে পরিস্থিতি আরও অন্যরকম করেছে। পুজোর ক’দিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মন্ডপে। আজও সকালে গেছিল, কিছু আগে মায়ের দর্পণ বিসর্জনের পর বাড়ি ঢুকল। দশমীর দিন মায়ের চলে যাওয়া ও কিছুতেই সহ্য করতে পারছে না। সকাল থেকে শুধু চা ছাড়া কিছুই মুখে তোলেনি, এখনও খাবার কোনও ইচ্ছা নেই।

” সারাদিন শুধু পুজো পুজো করলে হবে ,শরীরকে তো কিছু দিতে হবে। সেই সকালে গেলি এখন প্রায় দুপুর একটা বাজে। আয় এবার ভাত  খেয়ে নে, আবার তো বিকেলে যাবি।” সিন্টুর ঘরে  ঢুকে মা বললেন।

” তোমরা খাও , আমার খিদে নেই !” বিরক্ত হয়ে বলল সিন্টু।

” এখন তো তাই বলবি। তোর বাবা বাজারটুকু কোনওমতে এনেই শরীর ভালো না বলে শুয়ে পড়ল। একা হাতে ঘরের কাজ, রান্না সব সেরে এবার সবাইকে সাধনা করে খাওয়াতে হবে। এরপর আবার মিষ্টির দোকানে যেতে হবে ।” মা-ও রাগ করলেন।

” সত্যি মা , তোমরা পারো। মা দুগ্গা চলে যাচ্ছেন আর তোমরা মিষ্টি খাবে !” অবাক হল সিন্টু।

” দূর বোকা, মা কোথাও যাবেন না, উনি আমাদের মনে, আমাদের সাথেই আছেন সবসময়। তুই খেতে আয়।” মা এবার রাগ সরিয়ে আদুরে গলায় সিন্টুর মাথায় হাত বুলিয়ে কথাগুলো বলে চলে গেলেন।

উঠে বসল সিন্টু।চোখ মুছল। মায়ের বলে যাওয়া কথাগুলো চিন্তা করল। তারপর নিজের মনেই বলল ” মা তো ঠিক কথাই বলেছেন । তবে, মা দুর্গা শুধু আমাদের মনে নয়, সারা বছরই আমাদের চোখের সামনে থাকেন , আমাদের জন্মদাত্রী মায়ের রূপে।”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *