আজকের ভোরটা অন্য রকম রুকুর কাছে। সূর্যটাকে অন্য দিনের চেয়ে বড় মনে হল ওর । চড়াই-শালিকের ডানাগুলো যেন ঈগলের মত বড় মনে হচ্ছে। ওকে ছুঁয়ে যাওয়া বাতাসে রুম ফ্রেশনারের মিষ্টি গন্ধ। অনেক দিন পর প্রথমবার রুকুর মনে থাকা এক ইচ্ছা পূরণ হবে আজ।
বছরখানেক হল একটা এনজিও জয়েন করেছে ও। টাকা-পয়সা নেয় না । ওরা শিশুশ্রমের বিপক্ষে কাজ করে। ওর বরের যা টাকা তাতে ওর টাকার প্রয়োজন নেই। শুধু কোয়ালিটি টাইম কাটানো এবং সমাজসেবা করতে এনজিও-তে গেছে। প্রথম থেকেই ওর বক্তৃতা দেওয়ার খুব সখ। কিন্তু অভিজ্ঞতার অভাবে হচ্ছিল না। এতদিনে সুযোগ এসেছে। দুপুর একটায় অনুষ্ঠান। বারোটায় গাড়ি আসবে ওকে নিতে। সকাল থেকে তারই প্রস্তুতি চলছে। শুধু একটাই চিন্তা হল লতাদি। লতাদি ওর হোম হেল্প। ও এলে তবেই রুকু বেরোতে পারবে। সকাল দশটা বেজে পাঁচ। এখনও লতাদির দেখা নেই। কলিং বেলের ঘন্টি শুনে ছুটে গিয়ে দরজা খুলল রুকু। দরজার ওপারে দাঁড়িয়ে লতাদি।
” কী গো এত দেরি করলে!” উদ্বিগ্ন গলায় বলল রুকু।
” আর বোলো না বৌদি ,সকাল থেকে বাচ্চাটার জ্বর। ডাক্তার দেখিয়ে তবে এলাম।” লতাদি ঘরে ঢুকে বলল। সঙ্গে কম বয়সী একটা মেয়ে।
” এটা কে লতাদি ?” রুকু জিজ্ঞেস করল।
” আমার বোন ।টুসি। এইটে পড়ে। এখন ওর স্কুল বন্ধ, তাই নিয়ে এলাম। আজ থেকে সাতদিন ওই কাজে আসবে। বাচ্চাটা সুস্থ হলে আমি আসব ।” লতাদি বলল।
“তা ওর বয়স কত? সব কাজ গুছিয়ে করতে পারবে তো! আমার আবার অপরিস্কার একদম পছন্দ নয় । ” রুকু জানিয়ে দিল।
” এই তো চোদ্দ বছরে পড়ল। তুমি চিন্তা কোরো না। ও সব কাজ ঠিক করতে পারবে।” লতাদি ভরসা দিল।
” ভালো হলেই ভালো।” একটা লম্বা শ্বাস ছেড়ে বলল রুকু। তারপর টুসিকে কাছে ডাকল। ওকে বলল ” দেখি কেমন পড়াশোনা করিস। তোদের ভালোর জন্য একটা লেখা লিখেছি, পড়ে শোনাচ্ছি। শুনে বলবি তো কেমন হয়েছে !”