অণুগল্প — ঝিনুকের মা
গল্পকার — অভিষেক সাহা
” দেখুন না আর কেউ বাড়িতে আছেন কিনা, যদি এনাকে চিনতে পারেন !” ক্লান্ত শরীরে হতাশা মেশানো গলায় জিজ্ঞেস করল কুরিয়ার সার্ভিসের ছেলে সোহম। এই চাকরিতে ওর আজ সবে দ্বিতীয় দিন। আর সেদিনই বিপত্তি। মানে সেই অনেকটা পাড়ের কাছে এসে নৌকাডুবির মত। বাড়ি পেয়ে গেছে, কিন্তু লোক পাওয়া যাচ্ছে না। আরো ভালো করে বললে কেউ চিনতে পারছে না।
১৪ নম্বর রামচন্দ্র এভিনিউ। তিনতলা বাড়ি। পুরোনো দিনের। বাইরে চটে যাওয়া প্লাস্টার। রঙের আদর বাড়িটার দেওয়ালে পড়েনি বহুদিন, মনে হল সোহমের। কলিং বেল বাজাতেই বেরিয়ে আসে তিন জন। দু’জন মহিলা একজন পুরুষ। পুরুষের বয়স সত্তর পার করেছে। একজন মহিলাও সিনিয়র সিটিজেন। বাকিজনকে মধ্য তিরিশের মনে হল।
লীলাবতী হেমব্রম। চিঠিটা এসেছে সুতলি গ্রাম থেকে। গ্রামের নাম আর মহিলার নাম শুনে তিনজনই অবাক। যেন চিনা ভাষায় কথা বলছে। অথচ বাড়ির ঠিকানা মিলে যাচ্ছে।
” একবার ঝিনুকের মা- কে ডাক না, দেখ ও যদি চিনতে পারে। ওর তো গ্রামেই বাড়ি।” ষাটোর্ধ্ব মহিলা বললেন।
” ওকে ডেকে কী হবে মা। আমার সোনুর জন্মের পরপরই তো ও এ বাড়িতে আসে সোনুকে দেখাশোনার জন্য। এই চোদ্দ বছরে ও কোনদিন একা বাইরে গেছে! এখানকার কাকে চেনে ও! গ্রামেও তো যায় বছরে এক- আধবার। তাছাড়া এটা ওর গ্রামের নাম নয়।” মধ্য তিরিশের মহিলা বিস্মিত হয়ে বলল।
” তবু ডাক। ও যদি না চেনে তো এ চিঠি নেওয়া যাবে না ।” বয়স্ক ভদ্রলোক সিদ্ধান্ত জানালেন।
সোহমের উদ্যম অনেক টা হ্রাস পেল।
” ঝিনুকের মা , ও ঝিনুকের মা একবার তাড়াতাড়ি নিচে এস তো !” গলা ছেড়ে ডাক দিল মধ্য তিরিশের মহিলা।
” কাজের সময় এত ডাকাডাকি কিসের! বল কী বলবে !” বেশ বিরক্ত হয়ে নিচে নেমে এসে বলল ঝিনুকের মা।
” একটা চিঠি এসেছে এই বাড়ির ঠিকানায়। নামটা আমরা কেউ চিনতে পারছি না। তুমি পার কিনা দেখ ।” বয়স্ক ভদ্রলোক ডাকার কারণ জানালেন।
” লীলাবতী হেমব্রম। সুতলি গ্রাম থেকে চিঠি এসেছে।” অপেক্ষা না করে সোহমই বলে উঠল।
নামটা শুনে ঝিনুকের মা-র পায়ের তলার মাটিটা যেন একটু কেঁপে উঠল। বহু বছর পর এই নামটা যেন কবর থেকে উঠে এসে ওর কানে ঢুকল। ঝিনুকের মা কাঁপা গলায় বলল ” ওটা আমার নাম। গ্রামটা আমার বাপের বাড়ির।”
অভিষেক সাহা