ছেঁড়া পাতা : অনিন্দিতা রথ

অভ্যাগসের আটপৌরে সাজ, শব্দভীড়ে লৌকিকতা, আর একরাশ স্বপ্ন নিয়ে বেঁচে আছি। আছে জমানো অভিমান। না না, তোমাকে দোষারোপ করছি না। তোমার জন্য ই তো স্বপ্ন দেখি রোজ, বাঁচার স্বপ্ন,নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার স্বপ্ন। আমার কথা টা আগেই বলে নিই , মফসলে র মেয়ে আমি। বাবা মায়ের একমাএ কন্যা সন্তান বলে আমার আদর ও বেশি, আবার আবদার ও বেশি। তাই বলে কিন্তু মা ছেড়ে দেয় নি। শক্তহাতে সংসারের সব কাজ শিখিয়েছে। আবদার করলাম আমি নার্স হতে চাই।

দ্বিধা না করে নার্সিং পড়ালেন। কলকাতার নামি একটা নার্সিং হোম এ চাকরিপেলাম। ভীষন খুশি। ছোটো থেকে আমি স্বাধীন চেতা। নিজের ইচ্ছেয়, মনের জোরে আমি আজ স্ব র্নিভর। একবিংশ শতাব্দির মেয়ে আমি। স্বপ্ন দেখি নিজের মতো। ডানা মেলে বাঁচতে চাই। এই সব করতে গিয়ে আমার বয়সের দিকে নজর দেওয়া হয়নি। পাড়া, প্রতিবেশী, আত্মীয় স্বজন সবাই আড়ালে আমাকে নিয়ে হাঁসাহাসি করে।

মা বাবা কে কথা শোনাতে ও ছাড়েনা। আমার পাএ দেখা শুরু হল, যেহেতু আমার কোনো প্রেমিক নেই অগত্যা, আমি শুধু বলেছিলাম, বিয়ের পর চাকরি টুকু করতে চাই।মনে আছে প্রথম যেদিন আমায় দেখতে গিয়েছিলে, আমায় না দেখেই বলেছিলে, বাড়ির সমস্ত কাজ করতে হবে। আমি কি পারব। মনে হয়েছিল, হয়তো বাড়ির ঝি খুজছ।বাড়ির সবার তোমাকে খুব পছন্দ হলো। মিথ্যে বলবোনা আমার ও খুব পছন্দ হয়েছিল। রাজি ও হলাম। কিন্ত বললাম চাকরি টুকু করতে চাই।

সবাই রাজী।তবে বললেন অল্প কিছুদিনের পর আমাদের পাশবর্তী এলাকায় বদলী নিয়ে আসতে হবে। মনে একটু কষ্ট হলেও রাজী হলাম।।বিয়ের দিন এলো, আমায় নিয়ে এলে তুমি। স্বপ্নের মতো লাগছিলো সব।তত দিনে তোমাকে ও ভালোবাসতে শুরু করেছি। বিয়ের কিছু দিনের মধ্যেই চাকরিতে জয়েন করি। ওখানে হসপিটালে সারাদিন ব্যস্ত থাকতাম। এতো ব্যস্ততার মধ্যেই তোমাকে চারিদিকে খুজতাম।

ভালোই কাটছিলো দিন। মাঝে মাঝে বাড়িতে আসতাম সব কিছুই ঠিকঠাক চললো। মাস তিনেক।হঠাৎ একদিন সন্ধে বেলায় শাশুড়ি মায়ের ফোন, আমি কেনো ওখানে আছি? এতো খারাপ ভাবে বললেন, যথেষ্ট নোংরা ভাবে।কিছু বলিনি,,শুধু নীরবে কেদেছি,, বাড়িতে বলতে সাহস হয়নি, বিয়ের পর শশ্বুর বাড়ির নিন্দে করলে আমি নিজেই অপমানিত হবো, কিছু বললাম না, তোমার সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিলাম চাকরি ছেড়ে দেবো। এক লহমায়, আমার সমস্ত স্বপ্ন দুমড়ে মুচড়ে, মাড়িয়ে চলে এলাম। সুখে শান্তিতে গুছিয়ে সংসার করবো।

এসে আটপৌরে সাজে নিজেকে দেখে আয়নায় বিস্মিত হয়ে মুচকি হেসেছিলাম। মনে মনে বলেছিলাম মা দেখো তোমার মেয়ে গিন্নি হয়ে গেছে। সংসারের কোনো কাজ দেখে পিছিয়ে আসিনি। অনায়াসে সংসারের সব কাজ করেছি। বরের ভালোবাসা পেয়ে একে বারে সোনায় সোহাগা, ভাবলাম এত সুখআমার কপালে ছিলো।ভালোই কাটছিলো দিন, সারাদিন সংসারের হাড় ভাঙা পরিশ্রমের পর ও কোনো কষ্ট পায়নি। তোমার ভালোবাসায় আমি তৃপ্ত।️️ সংসারে অনেকেই আছে।প্রায়স ই আত্মীয় স্বজন লেগেই একান্ন বর্তী সংসার। সংসারের সব কাজ একা হাতে করি। লক্ষ করলাম আমি বাবার বাড়ি থেকে ফিরলেই শাশুড়ী মায়ের মুখ ভার।

সব কথায় শোনাতে লাগলেন মা নাকি আমায় শিখিয়ে পাঠিয়েছেন সংসারে অশান্তি কিভাবে করতে হয়। মা কে নিয়ে এত অপমান সহ্য করলাম মুখ বুজে।অলক্ষে কাঁদলাম। তুমি এসে বোঝালে। বললে আমিতো আছি পাশে। তোমার এই একটা কথাতেই সব ভুলেগেলাম। তার পর প্রায়স ই এই রকম চলতে থাকে।অভ্যস্ত হতে থাকি। আর আমার চাকরি, কেউই ভাবেনা, তেমন কোনো সুযোগ ও পায়নি,শেষ আঘাত টা পেলাম সেদিন রাতে, যখন ডাইনিং এ রাতের খাবার সাজাচ্ছি, সবে তুমি অফিস থেকে ফিরেছো,, হঠাৎ উনি বলে বসলেন,এখনো বেবি নিচ্ছি না কেনো, তখনো আমাদের বিয়ের এক বছর পূর্ণ হয়নি। কষ্টপেলাম।

কোনো মেয়েকে মাতৃত্বের নামে কথা শোনালে তো কষ্ট হবেই। সংসারের সব কিছু তেই অশান্তি। কারোর কোনো কথা উনি বুজতে নারাজ। সংসারের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করি শুধু একটু শান্তির আশায়। জানিনা, আমার স্বপ্ন কি অধরা থেকেই যাবে। রাতের বেলা রুমে এসে একটু লিখি। নিজের মতো করে। সারাদান কি করলাম।।ওটাই আমার নিজের জগৎ। কতটা কষ্টপেলাম, তার একটুকরো আজ এখানে, ভাগ্যিাস আমি একটু আধটু লেখালেখি করি এটা কেউ ই জানে না এ সংসারে।

তাহলে কবেই সব শেষ হয়ে যেতো। জানি আমার মতো হাজার হাজার মেয়ে প্রতিদিন লড়াই করছে সংসার নামক খেলা ঘরে টিকে থাকার জন্য।আর সহাস্যে সবাই কে দেখানো আমি কত ভালোআছি।।বুকের ভেতর টা তখন মোচড় দিয়ে বলে ওঠে আর কতদিন সহ্য করবো। প্রতিবাদ করতেই হবে। আর পড়ে পড়ে মার খাব না।আমি ও মানুষ নিজের মতো করে আমার বাঁচার অধিকার আছে। আর তখন ই আমার আটপৌরে সাজ, লৌকিকতা আমার গলা টিপে ধরে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *